কুমিল্লায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে ৪ মাজারে হামলা-আগুন

Published: 18 September 2025

পোস্ট ডেস্ক :


কুমিল্লায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে কটূক্তির অভিযোগে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ লোকজন মাইকে ঘোষণা দিয়ে ৪টি মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জেলার হোমনা উপজেলার আসাদপুর ইউনিয়নের আসাদপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জানা যায়, ‘বেমজা মহসিন’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে গত বুধবার সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে মহসিন নামের এক যুবক আপত্তিকর পোস্ট দেন। এ ঘটনায় স্থানীয় জনতা থানার সামনে জড়ো হয়ে মহসিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করেন। দুপুরে উপজেলার আছাদপুর গ্রামের ফকিরবাড়ি এলাকা থেকে মহসিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় ওইদিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ইসলামী যুবসেনা হোমনা উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শরীফুল ইসলাম বাদি হয়ে মহসিনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। বৃহস্পতিবার সকালে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

এদিকে, ওই পোস্টকে কেন্দ্র সকাল থেকে এলাকার বিক্ষুব্ধ লোকজন মাইকে ঘোষণা দিয়ে আসাদপুর গ্রামে কফিল উদ্দিন শাহ ও হাওয়ালি শাহ মাজারে আগুন এবং কালাই শাহ ও আবদু শাহ মাজারে হামলা-ভাংচুর করে। এর মধ্যে কফিল উদ্দিন শাহ ছিলেন মহসিনের দাদা। এ ছাড়া তার পরিবারের বাড়িঘর ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মহসিনের পরিবারের বাড়িঘর ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া মহসিনের দাদা কফিল উদ্দিন শাহর নামে প্রতিষ্ঠিত একটি মাজারসহ আরও চারটি মাজারে হামলা চালানো হয়। মাজারকে কেন্দ্র করে নিয়মিত মাদকের আড্ডা এবং শরিয়ত বিরোধী নানা কাজকর্ম চলতো।

খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। কুমিল্লার পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান, হোমনা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আব্দুল করিম, দাউদকান্দি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. ফয়সাল তানভীর, ইউএনও ক্ষেমালিকা চাকমা স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। তারা জনতার উদ্দেশ্যে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়ার আহ্বান জানান। পুলিশ জানিয়েছে, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। এ সময় হোমনা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম, জেলা পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) ওসি মো. আবদুল্লাহ, হোমনা থানার সাব ইন্সপেক্টর জীবন বিশ্বাসসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা ইসলামী ফ্রন্টের সেক্রেটারি সফিক রানা ও ইসলামি যুব সেনার নেতা শরিফুল বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মহসিন দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুকে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে আসছিলেন। আমরা তার ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ক্ষেমালিকা চাকমা বলেন, গত বুধবার নবীজী (সঃ)কে নিয়ে কটূক্তির কারণে জনতার মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ জনতা মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে। হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, জনতার দাবির প্রেক্ষিতে মহসিনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। তবুও সকালে বিক্ষুব্ধ লোকজন মাজারে ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে। পুলিশ সুপার মো. নাজির আহমেদ খান বলেন, ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু আইন হাতে তুলে নিয়ে যারা ঘটনার উসকানি দিয়ে মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।