ইরানে এ বছর অন্তত ১০০০ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
পোস্ট ডেস্ক :

ইরান ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত অন্তত এক হাজার জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে বলে মঙ্গলবার এক বেসরকারি সংস্থা জানিয়েছে। তারা ইসলামী প্রজাতন্ত্রটির কারাগারগুলোতে চলমান এক ‘গণহত্যা অভিযানের’ নিন্দা জানিয়েছে।
নরওয়েভিত্তিক সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহেই অন্তত ৬৪টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে, অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন ৯ জনের বেশি করে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি ইরানে মৃত্যুদণ্ডের প্রতিটি ঘটনা প্রতিদিন গুনে দেখে নিশ্চিত করে।
২০২৫ সালের এখনো তিন মাসের বেশি সময় বাকি থাকতেই এ সংখ্যা ২০০৮ সালে আইএইচআর রেকর্ড রাখা শুরু করার পর থেকে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। গত বছর রেকর্ড হওয়া ৯৭৫ মৃত্যুদণ্ডকেও এ সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে।
১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লব ও ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর ১৯৮০ ও ১৯৯০–এর দশকের শুরুর দিকে ইরান ব্যাপক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছিল।
কিন্তু মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির নেতৃত্বাধীন ইসলামী প্রজাতন্ত্র এখন মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার গত তিন দশকের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি করছে।
২০২২-২০২৩ সালের বিক্ষোভ এবং চলতি বছরের জুনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ১২ দিনের যুদ্ধের পর এর তীব্রতা আরো বেড়েছে।
আইএইচআরের পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের কারাগারগুলোতে একটি গণহত্যা অভিযান শুরু করেছে, যা গুরুতর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া না থাকায় প্রতিদিনই বিস্তৃত হচ্ছে।’
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান আগামী সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে পশ্চিমা নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে নিষেধাজ্ঞা পুনঃআরোপের ভোটের পর ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিই আলোচ্যসূচিতে প্রাধান্য পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কিন্তু আমিরি-মোগাদ্দাম বলেন, এসব মৃত্যুদণ্ড ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের সমতুল্য এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আলোচ্যসূচির শীর্ষে থাকা উচিত।’
তিনি আরো বলেন, ‘যেসব দেশ মানবাধিকার নীতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ, তাদের সঙ্গে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের যেকোনো আলোচনায় ইরানের মৃত্যুদণ্ড সংকটকে অন্তর্ভুক্ত না করা অগ্রহণযোগ্য।’
আইএইচআর জোর দিয়ে বলেছে, ‘স্বচ্ছতার অভাব ও সংবাদ পরিবেশনে বিধি-নিষেধের কারণে’ মৃত্যুদণ্ডের তাদের পরিসংখ্যান ‘একেবারেই ন্যূনতম’ এবং প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে বেশি হতে পারে।
বর্তমানে ইরানে কেবল ফাঁসির মাধ্যমেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে, যদিও অতীতে অন্য পদ্ধতিও ব্যবহার করা হয়েছে। অধিকাংশ মৃত্যুদণ্ড কারাগারের ভেতরেই কার্যকর হয়, তবে মাঝেমধ্যে প্রকাশ্যেও ফাঁসি দেওয়া হয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য মতে, চীনের পর ইরান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকারী দেশ। ধারণা করা হয়, চীন প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেয়, যদিও সঠিক সংখ্যা জানা যায় না।




