বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক নারীর জিন বিশ্লেষণ করে দীর্ঘায়ুর রহস্য বের করলেন বিজ্ঞানীরা

Published: 27 September 2025

পোস্ট ডেস্ক :


যখন একজন শতবর্ষী, অর্থাৎ ১১০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, তখন তাকে অনিবার্যভাবে দীর্ঘায়ু সম্পর্কে তাদের পরামর্শ শেয়ার করতে বলা হয়। কিন্তু যদি তাদের গোপন রহস্য বৈজ্ঞানিকভাবে অধ্যয়ন করা যেত? তাদের জিনোম আমাদের বার্ধক্য সম্পর্কে অনেক তথ্য তুলে ধরতে পারতো। তবে এখন বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন সেই রহস্যটি শুধু কথায় নয়, বৈজ্ঞানিকভাবে উদ্ঘাটন করতে। তারা অনুসন্ধান করছেন এমন দীর্ঘজীবী মানুষদের জিনোম বা জিনগত গঠনে কী বিশেষত্ব রয়েছে, যা বার্ধক্যের রোগগুলোকে দূরে রাখে। সেল রিপোর্টস মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণাপত্রে এই ধরণের প্রশ্নগুলো উঠে এসেছে। এই গবেষণাপত্রে মারিয়া ব্রানিয়াস মোরেরার জিনোম নিয়ে তদন্ত করা হয়েছে, যিনি মার্কিন বংশোদ্ভূত স্প্যানিশ নারী। ২০২৪ সালের আগস্টে ১১৭ বছর ১৬৮ দিন বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত ব্যক্তির খেতাব অর্জন করার পরপরই তিনি মারা যান। এই গবেষণার সহ-লেখক, স্পেনের জোসেপ ক্যারেরাস লিউকেমিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. ম্যানুয়েল এস্টেলার সিএনএন-কে বলেন, ‘তিনি (মারিয়া) খুব উদার মনের মানুষ ছিলেন এবং সবসময় সাহায্য করতে চাইতেন।

 

তার সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতাটা ছিল অসাধারণ।’ ড. এস্টেলার এবং তার গবেষক দল মারিয়ার রক্ত, লালা, মূত্র এবং মলের নমুনা সংগ্রহ করেন। এরপর তারা তার জিনোম বিশ্লেষণ করেন এবং আরও ৭৫ জন আইবেরিয়ান নারীর জিনোমের সাথে তার তুলনা করেন।
সবকিছু বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, মারিয়া এত দীর্ঘ জীবন পেয়েছিলেন কারণ তিনি যেন জেনেটিক লটারি জিতেছিলেন এবং পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতেন। তার শরীরে এমন কিছু জিন ছিল যা তাকে বয়স-সম্পর্কিত সাধারণ রোগগুলো থেকে রক্ষা করত। পাশাপাশি তিনি একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করতেন। মারিয়ার জীবনযাত্রায় যদি কিছুটা অস্বাভাবিক কিছু থেকে থাকে, তবে তা হলো তার দই খাওয়া। তিনি দিনে তিনবার দই খেতেন।

গবেষকরা অনুমান করেছেন যে, তার অন্যান্য খাদ্যাভ্যাসের সাথে এই অভ্যাসটি তার অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমকে একজন তরুণ ব্যক্তির মতো রাখতে সাহায্য করেছিল এবং তার শরীরে প্রদাহের মাত্রা কমিয়েছিল। তবে, লন্ডনের কিংস কলেজের বার্ধক্য বিষয়ক অধ্যাপক ক্লেয়ার স্টিভস, যিনি এই গবেষণার সাথে জড়িত ছিলেন না, তিনি বলেন, ‘মারিয়া কখনও ধূমপান করেননি, মদ পান করেননি। যতদিন পারতেন, কাজ করতে ভালোবাসতেন। তিনি গ্রামে থাকতেন এবং পরিমিত ব্যায়াম করতেন (বেশিরভাগ দিন এক ঘণ্টা হাঁটতেন)। তার খাদ্যতালিকায় ছিল অলিভ অয়েল, ভূমধ্যসাগরীয় খাবার এবং বিশেষ করে দই।’ মারিয়ার দইয়ের প্রতি ভালোবাসা তার ‘সামগ্রিক সুস্থতার’ একমাত্র কারণ নাও হতে পারে।

তার অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম সম্ভবত এটাই প্রমাণ করে যে, তার শরীরের অন্যান্য ভালো দিকগুলোর কারণে তিনি সেই সব অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার জন্য একটি খুব ভালো ধারক ছিলেন।’ মারিয়ার জিনোম পরীক্ষা করে গবেষক দলটি দেখাতে সক্ষম হয়েছে যে, ‘অত্যধিক বার্ধক্য এবং দুর্বল স্বাস্থ্য অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত নয়। স্টিভস বলেন, ‘বয়সের সাথে অসুস্থতা অনিবার্য নয়। এটি জৈবিক প্রক্রিয়ার কারণে ঘটে। এটি এমন কিছু যা আমরা পরিবর্তন করতে পারি।’ তিনি আরও বলেন যে, এই গবেষণাপত্রটি দেখায় যে ‘এর কোনো একটিমাত্র সমাধান নেই, এটি একাধিক ভিন্ন পথের সমন্বয়।’ এবং স্বাস্থ্যকর বার্ধক্যের সাথে জড়িত জিন এবং প্রোটিনগুলো শনাক্ত করার মাধ্যমে, ড. এস্টেলার আশা করেন যে গবেষকরা এমন ওষুধ তৈরির পথ দেখাতে পারবেন যা এই নির্দিষ্ট উপাদানগুলোকে লক্ষ্য করে কাজ করবে।