কাশ্মীরীদের প্রশংসায় ভাসছেন এরদোগান
পোস্ট ডেস্ক :

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের কথাগুলো ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের লাখ লাখ আশাহত মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা এবং আশার উৎস হয়ে উঠেছে। এবারও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেওয়া তাঁর বক্তব্য ছিল কাশ্মীরবাসীর আকাঙ্ক্ষার প্রকৃত প্রতিফলন। কাশ্মীর প্রসঙ্গে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, “সর্বোত্তম হলো আলোচনার মাধ্যমে আমাদের কাশ্মীরি ভাই-বোনেদের জন্য জাতিসংঘের প্রস্তাবের ভিত্তিতে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত, আমরা এই আশা করি।”
বছরের পর বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে কথা বলে এভাবেই কাশ্মীরীদের হৃদয় বিশেষভাবে স্পর্শ করেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। তার এমন অবিচল প্রতিশ্রুতি কাশ্মীর জাতির পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন উপত্যকার বাসিন্দারা।
এর আগে, ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে তিনি বলেছিলেন, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করতে হলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে কাশ্মীরে একটি ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।” তার এই বক্তব্য এমন এক সময়ে দারুণ অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে যখন কাশ্মীরিরা অস্তিত্বের হুমকির সম্মুখীন, সম্ভবত কাশ্মীরের ইতিহাসে অন্ধকারতম দিনগুলো অতিবাহিত হচ্ছে এখন।
প্রেসিডেন্ট এরদোগান কাশ্মীরবাসীর পক্ষ থেকে তাঁর সেই বক্তব্যের জন্য প্রশংসা কুড়িয়েছেন, যা তিনি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের ৭৬তম অধিবেশনে দিয়েছিলেন। “আমরা ৭৪ বছর ধরে চলমান কাশ্মীর সমস্যার সমাধান দলগুলোর মধ্যে আলোচনা এবং প্রাসঙ্গিক জাতিসংঘের প্রস্তাবের কাঠামোর মধ্যে করার পক্ষে আমাদের অবস্থান বজায় রেখেছি,” বলেছিলেন তিনি।
এরআগে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ৭৫তম অধিবেশনে তিনি বলেছিলেন, “কাশ্মীর সংঘাত, যা দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা এবং শান্তির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ, তা এখনও একটি জ্বলন্ত সমস্যা। জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পরে নেওয়া পদক্ষেপগুলো সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তুলেছে।”
৭৪তম সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ৭২ বছর ধরে চলতে থাকা কাশ্মীর সমস্যার সমাধান শুধুমাত্র আলোচনার মাধ্যমেই খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।
২০১৯ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রেসিডেন্ট এরদোগান তাঁর কাশ্মীর সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি অবিচলভাবে তুলে ধরে বলেন, “কাশ্মীরি জনগণ তাদের পাকিস্তানি ও ভারতীয় প্রতিবেশীদের সাথে নিয়ে যাতে একটি নিরাপদ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারে, সেজন্য সংঘর্ষের মাধ্যমে নয় বরং আলোচনা এবং ন্যায়বিচার ও সমতার ভিত্তিতে সমস্যাটির সমাধান করা অপরিহার্য।” ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতীয় সরকার কর্তৃক আরোপিত বিধিনিষেধকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ কার্যত অবরোধের অধীনে রয়েছে, যেখানে ৮০ লাখ মানুষ দুর্ভাগ্যবশত কাশ্মীরের বাইরে পা রাখতে পারছে না।”
কাশ্মীরের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ”আলোচনা এবং দর কষাকষির মাধ্যমে কাশ্মীর সংঘাতের সমাধানের প্রচেষ্টা এরদোগান প্রশাসনের সময় তুরস্কের একটি ধারাবাহিক নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। আমরা স্মরণ করি, তিনি ২০২২ সালের সাধারণ পরিষদের ভাষণেও এই বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন, ভারত ও পাকিস্তান ৭৫ বছর আগে তাদের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার পরেও তারা এখনও একে অপরের মধ্যে শান্তি ও সংহতি স্থাপন করতে পারেনি। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা আশা করি এবং প্রার্থনা করি, কাশ্মীরে একটি ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তি এবং সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠিত হবে।”
২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের পার্লামেন্টে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, “আমাদের কাশ্মীরি ভাইদের কয়েক দশক ধরে ভোগা কষ্টগুলো সাম্প্রতিক একতরফা পদক্ষেপের কারণে আরও বেড়েছে। আবার, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী আলোচনার মাধ্যমে এবং কাশ্মীরি জনগণের আকাঙ্ক্ষা মাথায় রেখে করা উচিত।”
২০১৭ সালের মে মাসে উইওন টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমাদের আর কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটতে দেওয়া উচিত নয় এবং বহুপাক্ষিক আলোচনাকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে, আমরা জড়িত হতে পারি এবং বহুপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে, আমি মনে করি আমাদের এই প্রশ্নটির (কাশ্মীর) একবারের জন্য নিষ্পত্তি করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে।”
“এটি ছিল তুরস্কের প্রেসিডেন্টের উপস্থাপিত সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত, কার্যকর এবং বাস্তবসম্মত প্রস্তাব। সেই সময়ে প্রস্তাবটিকে অপ্রচলিত হিসাবে দেখা হয়েছিল। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, দেশটি বিশ্ব শান্তির, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা এবং মানবজাতির উন্নতির জন্য জাতিসংঘ যে বৈশ্বিক রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকা পালন করতে পারে তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এটি”, বলেন একজন শান্তি ও ন্যায়বিচার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. গুলাম নাবি ফাই।




