গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের ২১-দফা প্রস্তাবে যা বলা হয়েছে
পোস্ট ডেস্ক :

গাজায় দখলদার ইসরাইলের গণহত্যা বন্ধে গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ৮ মুসলিম ও আরব দেশের নেতারা। ওই সময় ট্রাম্প তাদের কাছে ২১ দফার প্রস্তাব পেশ করেন। বৈঠক শেষে একাধিক মুসলিম নেতা জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তাদের ভালো আলোচনা হয়েছে।
তবে বেশ কয়েকদিন পার হলেও এই ২১ দফার বিস্তারিত জানা যায়নি। অবশেষে ট্রাম্পের প্রণীত এই ২১ দফা পরিকল্পনার একটি কপি ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইলের হাতে এসেছে। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দফাগুলোর বিস্তারিত প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমটি। পাঠকদের জন্য দফাগুলো তুলে ধরা হলো—
১. গাজা হবে উগ্রপন্থী-মুক্ত, সন্ত্রাস-মুক্ত একটি অঞ্চল যা তার প্রতিবেশীদের জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করবে না।
২. গাজার মানুষের কল্যাণের জন্য গাজা পুনর্গঠন করা হবে।
৩. উভয় পক্ষ এই ২১ দফায় সম্মত হলে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধ শেষ হবে। ইসরাইলি বাহিনী সব অভিযান বন্ধ করে ধীরে ধীরে গাজা উপত্যকা থেকে সরে যাবে।
৪. ইসরাইল প্রকাশ্যে চুক্তিটি মানার ঘোষণা দিলে, ওই সময় থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সব জীবিত ও মৃত জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
৫. জিম্মিদের ফিরিয়ে দেওয়ার পর ইসরাইল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গ্রেফতারকৃত ১ হাজারেরও বেশি গাজাবাসী ও আগে থেকে ইসরাইলি কারাগারে আটক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকশো ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি এবং কয়েকশো ফিলিস্তিনির মৃতদেহও হস্তান্তর করবে।
৬. জিম্মিদের ফিরিয়ে দেওয়ার পর, হামাসের যে যোদ্ধারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবেন, তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে। আর যেসব যোদ্ধা উপত্যকা ছাড়তে চাইবেন তাদের নিরাপদে অন্যদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
৭. যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার পর গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বাড়ানো হবে। প্রতিদিন অন্তত ৬০০ ট্রাক ত্রাণ গাজায় ঢুকবে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো পুনর্বাসন এবং ধ্বংসস্তূপ অপসারণের জন্য প্রয়োজনী সরঞ্জাম প্রবেশ করবে।
৮. জাতিসংঘ, রেড ক্রিসেন্ট এবং ইসরাইল বা হামাসের সঙ্গে যুক্ত নয় এমন অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করা হবে। যেখানে কোনো পক্ষের হস্তক্ষেপ থাকবে না।
৯. যুদ্ধ বন্ধের পর গাজায় ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটদের সমন্বয়ে একটি অস্থায়ী ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে, যারা গাজার সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সেবা প্রদানের দায়িত্বে থাকবেন। এই সরকারের তত্ত্বাবধানে থাকবে একটি নতুন আন্তর্জাতিক সংস্থা, যা যুক্তরাষ্ট্র, আরব ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হবে। এই সংস্থাটি মাহমুদ আব্বাসের ফিলিস্তিন অথরিটি (পিএ) সংস্কার কর্মসূচি শেষ না হওয়া পর্যন্ত গাজার পুনর্গঠনে অর্থায়নের জন্য একটি কাঠামো তৈরি করবে।
১০. মধ্যপ্রাচ্যের আধুনিক শহর নির্মাণে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা তৈরি করা হবে। এতে গাজায় বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিদ্যমান পরিকল্পনাগুলো বিবেচনা করা হবে।
১১. অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে গাজায় কম শুল্ক ও সহজ প্রবেশাধিকারের একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে।
১২. কাউকে গাজা ছাড়তে বাধ্য করা হবে না। তবে যারা চলে যেতে চাইবেন তাদের ফিরে আসার অনুমতি থাকবে। উপরন্তু, গাজাবাসীকে উপত্যকায় থাকতে উৎসাহিত করা হবে এবং সেখানে একটি উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ দেওয়া হবে।
১৩. গাজার শাসনব্যবস্থায় হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না। হামাসের তৈরি সুড়ঙ্গসহ সব ধরনের সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস এবং ভবিষ্যতে নির্মাণ করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। গাজার নতুন নেতারা তাদের প্রতিবেশী দেশেগুলোর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবেন।
১৪. আঞ্চলিক অংশীদারদের মাধ্যমে একটি নিরাপত্তা গ্যারান্টি দেওয়া হবে। যাতে হামাস ও গাজার অন্যান্য দলগুলো তাদের বাধ্যবাধকতা মেনে চলে এবং গাজা ইসরাইল বা তার নিজস্ব জনগণের জন্য হুমকি সৃষ্টি করা বন্ধ করে।
১৫. উপত্যকার নিরাপত্তা তদারকির জন্য যুক্তরাষ্ট্র, আরব দেশ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী গঠন করা হবে এবং অবিলম্বে গাজায় মোতায়েন করা হবে। পাশাপাশি এই বাহিনীটি নতুন ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনী তৈরি ও তাদের প্রশিক্ষণ দেবে, যা দীর্ঘমেয়াদী অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা হিসেবে কাজ করবে।
১৬. ইসরাইল গাজা দখল বা অধিগ্রহণ করবে না, নতুন নিরাপত্তা বাহিনী উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ এবং স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করার পর ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ধীরে ধীরে গাজা থেকে চলে যাবে।
১৭. হামাস এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান বা এটি গ্রহণে বিলম্ব করলে— উপরে উল্লিখিত দফাগুলো হামাসের নিয়ন্ত্রণহীন এলাকাগুলোতে প্রয়োগ করা হবে। আইডিএফ ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে ওই এলাকাগুলো দায়িত্ব হস্তান্তর করবে। হামাস রাজি না হলেও, চুক্তিটি অন্তত আংশিকভাবে বাস্তবায়িত হতে পারে এমন সম্ভাবনার কথা এটিই প্রথম উল্লেখ।
১৮. কাতারে ভবিষ্যতে হামলা করবে না ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
১৯. গাজার জনগোষ্ঠীকে কথিত চরমপন্থা থেকে দূরে সরানোর জন্য একটি প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এর মধ্যে ইসরাইল ও গাজার মানুষের জীবন পরিবর্তনের লক্ষ্যে আন্তঃধর্মীয় সংলাপও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
২০. গাজার পুনর্গঠন আলোর মুখ দেখলে, ফিলিস্তিনি কতৃপক্ষের সংস্কার কর্মসূচি শেষ হলে ফিলিস্তিনকে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়ার পথ সুগম করা হবে।
২১. শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও একটি রাজনৈতিক ঐক্যমত গঠনের লক্ষ্যে ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আলোচনার ব্যবস্থা করবে যুক্তরাষ্ট্র। সূত্র: টাইমস অব ইসরাইল।




