সাপে কাটার পর সাপ নিয়ে হাসপাতালে রোগী

Published: 28 September 2025

পোস্ট ডেস্ক :


ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চারোল ইউনিয়নের মো. মইনুল ইসলামকে গতকাল বিষাক্ত সাপে কামড় দেয়। তবে তিনি শুধু চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ছুটে যাননি, সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই সাপকেও। ঘটনাটি জানাজানি হতেই পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

মইনুল ইসলাম জানান, দুপুরে উঠানে কাজ করছিলেন তিনি।

এ সময় হঠাৎ একটি সাপ এসে পায়ে কামড় দেয়। বিষের ভয়াবহতা বুঝতে পেরে পরিবারের সদস্যরা দ্রুত তাকে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে হাসপাতালের চিকিৎসকদের সামনে প্রমাণ রাখতেই তিনি সেই সাপটিকে সঙ্গে করে হাসপাতালে হাজির হন।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে তাৎক্ষণিকভাবে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করেন।

প্রায় ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা নেওয়ার পর বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।
মইনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে খুব ভয় পেয়েছিলাম। তবে বুঝে গিয়েছিলাম হাসপাতালে না গেলে জীবন বাঁচানো কঠিন। তাই সাপকে নিয়ে এসেছি যাতে ডাক্তাররা বুঝতে পারেন কোন সাপ কামড়েছে।

এখন আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।’

হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডাক্তার ফুয়াদ বলেন, কেবল মইনুল ইসলাম নন, গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একই হাসপাতালে আরো পাচজন সাপে কাটার রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই ঠাকুরগাঁও সদর, বালিয়াডাঙ্গী ও রানীশংকৈল উপজেলার বাসিন্দা। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে জেলাজুড়ে সাপের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে।

চিকিৎসকদের মতে, অনেক ক্ষেত্রেই রোগীরা প্রথমে গ্রাম্য চিকিৎসা বা ঝাড়ফুঁকের আশ্রয় নেন।

এতে পরিস্থিতি খারাপ হয়। তবে এখন মানুষ ধীরে ধীরে সচেতন হচ্ছে এবং সরাসরি হাসপাতালে ছুটে আসছে।
স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, অনেক পরিবার এখনও প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে গাছের শেকড়বাকড় বা ওঝার ঝাড়ফুঁক ব্যবহার করেন। এর ফলে সময় নষ্ট হয় এবং অনেক রোগী হাসপাতালে আসতে আসতে মারাত্মক অবস্থায় পড়েন। সচেতনতার অভাবই মূল সমস্যা।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এনজিও ও স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে বিভিন্ন গ্রামে সচেতনতামূলক সভা-সেমিনার করা হচ্ছে। এর প্রভাবে অনেকে এখন সঠিক চিকিৎসার জন্য সরাসরি হাসপাতালে আসছেন।

ঠাকুরগাঁও জেলার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সাপের প্রাদুর্ভাব বর্ষাকালে বাড়ে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। জেলার পাঁচটি উপজেলায়ই সাপের কামড়ের ঘটনা ঘটে, তবে তুলনামূলক বেশি দেখা যায় বালিয়াডাঙ্গী ও রানীশংকৈলে। চাষাবাদের জমি, কাঁচা ঘরবাড়ি ও ঝোপঝাড়ে আশ্রয় নেয় সাপ। এতে সাধারণ মানুষ প্রায়ই বিপদে পড়ে।

গ্রামের প্রবীণরা বলছেন, এই সময় ধানক্ষেত, পুকুরপাড় ও বাঁশঝাড় এলাকায় সতর্ক থাকতে হয়। বিশেষ করে রাতে আলো ছাড়া হাঁটাহাঁটি করা বিপজ্জনক। অনেক পরিবারেই এখন টর্চলাইট ও মশারি ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ফিরোজ জামান জুয়েল জানান, সাপে কাটা রোগীদের জন্য হাসপাতালে যথেষ্ট অ্যান্টিভেনম মজুত আছে। প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে পাঁচজন সাপে কাটা রোগী ভর্তি হচ্ছেন। বর্ষা ও শরৎকালে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, ‘আমরা রোগীদের অনুরোধ করছি—সাপে কাটলে দ্রুত হাসপাতালে আসতে। কোনো ধরনের ঝাড়ফুঁক বা বিলম্ব করলে বিষ শরীরে ছড়িয়ে জীবনহানির ঝুঁকি বেড়ে যায়।’