আনোয়ার ইব্রাহিমের উপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ বাড়ছে

Published: 9 October 2025

পোস্ট ডেস্ক :


মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাঁর তীব্র সমালোচনা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ।

গতকালের এশিয়া এডিশনের পলিটিক্স বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৮ অক্টোবর রাতে কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত এক বিশাল ফিলিস্তিন সংহতি সমাবেশে আনোয়ার ইব্রাহিম “ইসরায়েল নামের দানবের” বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, “আমরা একটুও ভীত বা উদ্বিগ্ন নই।” হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে তাঁর এই বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষোভ ডেকে আনতে পারে, বিশেষত এমন এক সময়ে যখন অচিরেই তিনি আতিথ্যতা জানাতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দি স্ট্রেইটস টাইমস আরো জানিয়েছে, চলমান গাজা সংঘাত—যেখানে ইসরায়েল গত দুই বছর ধরে হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আসছে। এই বিষয় নিয়ে মালয়েশিয়া বরাবর সোচ্চার অবস্থানের মধ্যে চলতি মাসের ২৬ থেকে ২৮ তারিখে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য আসিয়ান সম্মেলনে ট্রাম্পের উপস্থিতিকে জটিল করে তুলতে পারে। এদিকে, মালয়েশিয়ার প্রধান বিরোধী দল ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানাতে ট্রাম্পের সফরের সময় গণসমাবেশের পরিকল্পনা করছে এবং তাঁর সঙ্গে বৈঠকেরও দাবি তুলেছে।

তবে আনোয়ার ইব্রাহিম স্পষ্ট করে বলেছেন, ট্রাম্পের আমন্ত্রণ প্রত্যাহারের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। “আমি পিছু হটব না,।” তিনি আরো বলেছেন, “আমি আলোচনা চাই, সংঘাত নয়।”

ব্লুমবার্গ ও দি স্ট্রেইটস টাইমস আরো উল্লেখ করে লিখেছে, মুসলিমপ্রধান মালয়েশিয়ায় গাজার ধ্বংসযজ্ঞ ও মানবিক সংকট নিয়ে জনরোষ ক্রমেই বাড়ছে। আনোয়ার ইব্রাহিম এই ক্ষোভকে অবহেলা করতে পারেন না, কারণ দেশের বহু ভোটার ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতিকে ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে দেখে। ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি ইসলামী বিষয়ক ফেডারেল সংস্থার ক্ষমতা ও কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে তাঁর ইসলামপন্থী ভাবমূর্তি জোরদার করেছেন।

এদিকে গত ৮ অক্টোবরের সমাবেশে “ফ্রি প্যালেস্টাইন” স্লোগানে কুয়ালালামপুরের ইনডোর অ্যারেনা মুখরিত হয়ে ওঠে। এই সমাবেশটি আয়োজিত হয়েছিল সেই ঘটনার পর, যখন ইসরায়েল গাজায় ত্রাণবাহী জাহাজ বহরে অংশ নেওয়া মালয়েশীয় কর্মীদের আটক করে। আটক ২৩ কর্মীকে গত ৭ অক্টোবর তুরস্ক হয়ে মালয়েশিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়, এবং তাঁদের মধ্যে কয়েকজন পরদিনের সমাবেশে বক্তব্যও রাখেন। এর আগে, আনোয়ার ইব্রাহিম ইসরায়েলের হাতে আরেকটি ত্রাণবাহী বহর আটকে দেওয়ার নিন্দা জানান এবং এতে অংশ নেওয়া ৯ জন মালয়েশীয় কর্মীর অবিলম্বে মুক্তি দাবিও করেছেন।

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান যুদ্ধ থামাতে ২০ দফার এক শান্তি প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছেন। তিনি ইসরায়েল ও হামাস উভয়কেই মিশরে আলোচনায় বসার জন্য চাপ দিচ্ছেন, তবে উভয় পক্ষের প্রতিই তাঁর ধৈর্য দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। যদিও এ বিষয়ে পৃথক এক সংবাদে জানাগেছে, ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব আজ থেকে কার্যকর হয়েছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দি স্ট্রেইটস টাইমস আরো জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ১,২০০ ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হয় এবং আরও ২৫০ জনকে অপহরণ করা হয়। পাল্টা ইসরায়েলি অভিযানে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী এ পর্যন্ত ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।

তবে আনোয়ার ইব্রাহিমের এই দৃঢ় ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান একদিকে তাঁর দেশীয় জনপ্রিয়তা বাড়ালেও, অন্যদিকে ওয়াশিংটনের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েনে কতটা প্রভাব ফেলবে তা আসন্ন আসিয়ান সম্মেলনে ট্রাম্পের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির উপর নির্ভর করছে।