দিল্লিতে তালেবান মন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

Published: 14 October 2025

পোস্ট ডেস্ক :


কথায় আছে—ছবি যেন হাজারো কথা বলে। দিল্লিতে তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিকদের সামনের সারিতে বসে থাকার ছবি তারই একটি উদাহরণ। শুক্রবার আফগান দূতাবাসে আমির খান মুত্তাকির প্রথম বৈঠকে নারী সাংবাদিকদের ঢুকতে বাধা দেয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার পর এই সম্মেলনটি ডাকা হয়। প্রায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এটি ছিল আফগান দূতাবাসে আমির খান মুত্তাকির দ্বিতীয় সংবাদ সম্মেলন।
রোববারের সম্মেলন প্রসঙ্গে মুত্তাকি বলেছেন, ‘‘নারী সাংবাদিকদের বাদ দেয়ার বিষয়টি ‘ইচ্ছাকৃত নয়’। স্বল্প সময়ের নোটিশে এটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং সাংবাদিকদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যে তালিকাটি উপস্থাপন করা হয়েছিল তা খুবই সুনির্দিষ্ট ছিল। আরও একটি প্রযুক্তিগত সমস্যা ছিল… আমাদের সহকর্মীরা সাংবাদিকদের একটি নির্দিষ্ট তালিকায় আমন্ত্রণ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং এর পেছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল না।’
জাতিসংঘ আফগানিস্তানের পরিস্থিতিকে ‘লিঙ্গভিত্তিক বর্ণবৈষম্য’ হিসেবে উল্লেখ করেছে যেখানে নারী ও মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা, পার্ক বা জিমে যাওয়ার অনুমতি নেই। মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে রাখার পাশাপাশি মেয়েদের কাজ করার অনুমতি ক্রমশ সীমিত করা হচ্ছে এবং তাদের চলাফেরায় একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসা তালেবান সরকার পূর্বে বলেছে যে তারা আফগান সংস্কৃতি এবং ইসলামী আইনের ব্যাখ্যা অনুসারে নারীর অধিকারকে সম্মান করে, কিন্তু পশ্চিমা কূটনীতিকরা বলেছেন যে নারীর ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের স্বীকৃতি অর্জনের প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তাদের শাসনামলে নারীর অধিকারকে দমন করা হয়েছে। মুত্তাকি বৃহস্পতিবার ভারতে পৌঁছেছেন। দিল্লি আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তানের শাসকদের স্বীকৃতি দেয়নি, তবে এটি এমন অনেক দেশের মধ্যে একটি যারা তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক বা অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। এমনকি কাবুলে একটি ছোট মিশনও চালু রেখেছে যার মাধ্যমে সেখানে মানবিক সহায়তা পাঠানো হয়। এই সফরকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মুত্তাকি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দেখা করেন। জয়শঙ্কর পর ঘোষণা করেন যে ভারত কাবুলে তার দূতাবাস পুনরায় চালু করবে, যা ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফিরে আসার পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। দিল্লিতে শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে প্রায় ১৬ জন পুরুষ সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন, যেখানে নারী সাংবাদিকদের দূতাবাসের গেট থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল। তালেবান সরকারের একটি সূত্র স্বীকার করে যে নারী সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
সমালোচনার মুখে পড়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানায় যে, এই সংবাদ সম্মেলনের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পৃক্ততা ছিল না। কারণ এটি আফগান দূতাবাসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় মাটিতে লিঙ্গ বৈষম্য সাংবাদিকদের ক্ষুব্ধ করেছিল, এটি ঘটতে দেওয়ার জন্য মোদি সরকার সমালোচনার মুখে পড়ে।
বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীকে বলতে শোনা যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ভারতের প্রতিটি নারী বলছেন যে আপনি তাদের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য এত দুর্বল।’
এডিটরস গিল্ড অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান উইমেন্স প্রেস কর্পস (আইডব্লিউপিসি) এবং নেটওয়ার্ক অফ উইমেন ইন মিডিয়া, ইন্ডিয়া (এনডব্লিউএমআই) কঠোর বিবৃতি জারি করে এই ধরনের আচরণকে ‘অত্যন্ত বৈষম্যমূলক’ বলে উল্লেখ করে। এনডব্লিউএমআই বলে যে, ভারত সরকারের দায়িত্ব নারীদের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সাংবিধানিক স্বাধীনতা সমুন্নত রাখা। তাদের এই ধরনের প্রকাশ্যে লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত ছিল।
শুক্রবারের সম্মেলনে যোগদানকারী পুরুষ সাংবাদিকদেরও তাদের নারী সহকর্মীদের পাশে না দাঁড়ানোর জন্য সমালোচনা করে দলটি। বিতর্কের পর রোববার তালেবান পক্ষ থেকে নতুন করে আমন্ত্রণ পাঠানো হয় এবং জানানো হয়, এবার ‘সব সাংবাদিকের জন্য উন্মুক্ত’ সম্মেলন হবে। যদিও সরকারি ভাবে নিশ্চিত করা হয়নি, তবু ধারণা করা হচ্ছে—ভারত সরকারের চাপেই এই দ্বিতীয় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিকেরা কঠিন প্রশ্ন তুলেছিলেন আফগান নারীদের অধিকার ও শিক্ষার বিষয়ে।
জবাবে মুত্তাকি বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে, যার মধ্যে ২৮ লাখের বেশি নারী ও মেয়ে। মাদ্রাসায়ও স্নাতক পর্যন্ত পড়াশোনার সুযোগ আছে। কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, তবে আমরা কখনও বলিনি নারীদের শিক্ষা শরিয়াহ অনুযায়ী হারাম, এটি শুধু সাময়িকভাবে স্থগিত।