চিত্রনায়ক সালমান শাহের অপমৃত্যু মামলাটি হত্যা মামলার এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ

Published: 20 October 2025

পোস্ট ডেস্ক :


চিত্রনায়ক সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনায় করা অপমৃত্যু মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে এজাহার গ্রহণের জন্য রাজধানীর রমনা থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক বাদীপক্ষের করা রিভিশন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।

 

বিচারক আদেশে উল্লেখ করেন, ফৌজদারি রিভিশন মামলাটি দুতরফা সূত্রে মঞ্জুর করা হলো। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অপমৃত্যু মামলা গত ২০২১ সালের ৩১শে অক্টোবরের আদেশ দ্বারা রদ ও রহিত করা হলো। মূল তথ্য প্রদানকারী কমরউদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর দাখিলি অপমৃত্যুর অভিযোগ এবং তার সঙ্গে তথ্য প্রদানকারী কমরউদ্দিনের ১৯৯৭ সালের ২৪শে জুলাই ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে দাখিলি আবেদনের অনুলিপি এবং রিজভী ওরফে ফরহাদের দোষ স্বীকারোক্তির অনুলিপি একত্রে সংযুক্তপূর্বক দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় এজাহার (এফআইআর) হিসেবে রেকর্ড করে পুলিশ রিপোর্ট দাখিলের জন্য রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করা হলো। আসামি রিজভী আহমদ ওরফে ফরহাদের ১৬৪ ধারায় দেয়া দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি সংগ্রহপূর্বক উক্ত আমলি নথিতে সংযুক্ত করা হোক। স্থলাবর্তী তথ্যপ্রদানকারী এবং তাদের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি কথিত রিজভী ওরফে ফরহাদের অডিও রেকর্ডের অনুলিপি প্রাপ্তির আবেদন মঞ্জুর করা হলো।
সালমান শাহের বাবা কমরউদ্দিনের অভিযোগ এবং ঘটনায় জড়িত রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের জবানবন্দি সংযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়েরের আদেশ দেন বিচারক।

বাদীপক্ষের আইনজীবী আবিদ হাসান বলেন, সালমান শাহের মৃত্যুর পর তার বাবা কমরউদ্দিন রমনা মডেল থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন। পরের বছর তিনি মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করলেও তা আমলে নেয়া হয়নি। এ ঘটনায় রিজভী ওরফে ফরহাদ নামে এক আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সেখানে সালমানকে কীভাবে হত্যা করা হয়, তা উঠে আসে। তারপরও মামলাটি আলোর মুখ দেখেনি। সবশেষ পিবিআই মামলাটি তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। আদালত সেই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেন। আজ আদালত সেই আদেশ রহিত করেন। একইসঙ্গে কমরউদ্দিনের অভিযোগ এবং ঘটনায় জড়িত রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের জবানবন্দি সংযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন।

নথি থেকে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর মারা যান চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার (ইমন) ওরফে সালমান শাহ। এ ঘটনায় প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা করেন তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। পরের বছর ১৯৯৭ সালের ২৪শে জুলাই ছেলেকে হত্যার অভিযোগ এনে ৩০২ ধারায় মামলা গ্রহণের আবেদন করেন সালমান শাহের বাবা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত অপমৃত্যু ও হত্যা মামলা একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে ১৯৯৭ সালের ৩রা নভেম্বর ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ বলে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। ওই বছরের ২৫শে নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হয়। তবে প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে রিভিশন মামলা করেন কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। পরে ২০০৩ সালের ১৯শে মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত।

দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩রা আগস্ট আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মহানগর হাকিম ইমদাদুল হক। ওই প্রতিবেদনেও সালমান শাহের মৃত্যুকে ‘অপমৃত্যু’ বলা হয়। কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর ছেলে হত্যা মামলার বাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন মা নীলা চৌধুরী। ২০১৫ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি তিনি সিএমএম আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজির আবেদন করেন। সর্বশেষ মামলাটি পিবিআই তদন্ত করে। ২০২০ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। ২০২১ সালের ৩১শে অক্টোবর আদালত ওই প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলাটি নিষ্পত্তি করেন। এরপর ২০২২ সালের ১২ই জুন আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে আলমগীর কুমকুম রিভিশন দায়ের করেন।