৮ দফা দাবিতে রেলপথ অবরোধ সিলেটবাসীর
পোস্ট ডেস্ক :

৮ দফা দাবিতে সিলেটেবাসী রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। এরমধ্যে ঢাকাস্থ সিলেটবাসী মগবাজার রেললাইনে ট্রেন থামিয়ে অবরোধ করেন। এ ছাড়া সিলেট রেলস্টেশন, কুলাউড়া রেলস্টেশন, টিলাগাঁও রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন থামিয়েও অবরোধ করা হয়েছে। অবরোধের কারণে গতকাল সিলেটে কোনো ট্রেন সময়মতো গন্তব্য পৌঁছাতে ও ছাড়তে পারেনি। তবে স্থানীয় প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধকারীরা গতকাল সরে যান। আন্দোলনকারীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অবরোধ চালিয়ে যাবেন।
‘বৃহত্তর সিলেটবাসী’র ব্যানারে ঢাকায় ট্রেন আটকে মগবাজার রেলগেট এলাকায় অনুমোদিত টাঙ্গুয়ার এক্সপ্রেস ট্রেন চালুসহ ৮ দফা দাবিতে রেলপথ অবরোধ করেন ঢাকাস্থ বৃহত্তর সিলেটবাসী। গতকাল এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন তারা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা অগ্নীবীণা এক্সপ্রেস ট্রেন আন্দোলনকারীরা প্রায় ১০ মিনিট আটকে রাখে। পরে রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিলে তারা ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করে দেন। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে মুখপাত্র সাংবাদিক সেলিম আহমেদ বলেন, আমরা কর্মসূচি শেষ করেছি। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের আশ্বাস দেয়া হয়েছে যে, দাবিগুলো দ্রুত বিবেচনা করা হবে। তিনি আরও বলেন, আজ (শনিবার) সিলেট বিভাগ জুড়ে রেলপথ অবরোধের কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা ঢাকায় প্রতীকীভাবে ট্রেন আটকে রেখেছিলাম। যদি দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে আগামী ১৮ই নভেম্বর রেল মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে।
তাদের আট দফা দাবিগুলো হলো- ঢাকাস্থ বৃহত্তর সিলেটবাসীর উপস্থাপিত ৮ দফা রেল সংস্কার দাবির মধ্যে রয়েছে ঢাকা-সিলেট রেলপথে অনুমোদিত টাঙ্গুয়ার এক্সপ্রেস দ্রুত চালু করা ও সিলেট-ঢাকা রুটে দু’টি এবং সিলেট-কক্সবাজার রুটে একটি স্পেশাল ট্রেন চালু করা, আখাউড়া-সিলেট রেলপথ সংস্কার ও ডাবল লাইন করা, এই সেকশনে অন্তত দু’টি লোকাল ট্রেন চালু করা, এই সেকশনের বন্ধ সব স্টেশন পুনরায় চালু করা, সিলেটের সব স্টেশনে বরাদ্দকৃত আসনসংখ্যা বৃদ্ধি করা, সিলেট-ঢাকাগামী কালনী ও পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের আযমপুরের পর ঢাকামুখী সব স্টেশনে যাত্রাবিরতি প্রত্যাহার করা, ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় রোধে ত্রুটিমুক্ত ইঞ্জিন ব্যবহার এবং যাত্রী অনুপাতে প্রতিটি ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করা।
অবরোধ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আকবর হোসেন মঞ্জু, হবিগঞ্জ সমিতি ঢাকার সভাপতি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান তরফদার, বায়তুল মোকাররম মসজিদ মুসল্লি কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি, সাবেক ছাত্রনেতা শাহিন আহমেদ খান, সিলেট বিভাগ সাংবাদিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম আহমেদ, জগন্নাথপুর সমিতি, ঢাকার সাধারণ সম্পাদক সায়েদুজ্জামান কামালী, সংগঠক আবু বকর সিদ্দিক, সুজন মিয়া, ফটোনিউজের সম্পাদক এমদাদুল হক, সাংবাদিক জামিল আহমদ, সিলেট সমিতি উত্তরার সাংগঠনিক সম্পাদক বেলাল আহমদ, যুবনেতা সায়েদ আহমদ সুমন, ছাত্রনেতা ইমরান আহমদ, ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ।
সিলেটে রেলপথ অবরোধ: সিলেট রেলস্টেশনে প্রায় ৩০ মিনিটি অবরোধের পর যাত্রীদের সঙ্গে উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ায় রেল ছেড়ে দেয়া হয়। জরুরি সংস্কারসহ ৮ দফা দাবিতে বিভাগ জুড়ে সিলেট-ঢাকা রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে ‘৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন আন্দোলন’ কমিটি। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১১টার দিকে সিলেট রেলস্টেশন এলাকায় আন্দোলনকারীরা লাইন অবরোধের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে তাদের বাদানুবাদ হয়। কিছু সময় পর আন্দোলনকারীরা রেললাইন থেকে সরে যান। সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন- সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেলযোগাযোগ স্বাভাবিক রয়েছে। শিডিউল অনুযায়ী সব ট্রেন চলাচল করছে।
কুলাউড়ায় অবরোধ: বৃহত্তর সিলেটবাসীর প্রাণের দাবি ৮ দফা দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে অবস্থান ধর্মঘট করে রেলপথ অবরোধ করছেন সাধারণ যাত্রীরা। গতকাল সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলে এ অবরোধ। ফলে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা পাহাড়িকা এক্সপ্রেস সিলেট স্টেশন থেকে ছাড়লেও কুলাউড়ায় পৌঁছাতে পারেনি। অপরদিকে, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল, শমসেরনগর, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ সিলেটের মাইজগাঁও স্টেশনে আন্দোলন করছেন সর্বস্তরের যাত্রীসাধারণ। কর্মসূচিতে যাত্রীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন। এ সময় সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেন প্রায় একঘণ্টা বিলম্বেও কুলাউড়া স্টেশনে পৌঁছায়নি। একইভাবে ঢাকা থেকে সিলেটগামী পারাবত ট্রেনও আটকা পড়ে শ্রীমঙ্গলে।
এদিকে, কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন, কুলাউড়া থানার ওসি ওমর ফারুকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কুলাউড়া স্টেশনে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন।




