ভোলায় বিএনপি-বিজেপি সংঘর্ষ, আহত ৫০
পোস্ট ডেস্ক :

ভোলায় বিএনপি ও জাতীয় পার্টির (বিজেপি) পাল্টা-পাল্টি কর্মসূচিকে ঘিরে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও মোটরাসইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় ভোলা সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আউয়াল হোসেন ও দৈনিক আজকের ভোলার সহ-সম্পাদক শাহরিয়ার জিলনসহ বিজেপি’র অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করছেন। শনিবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে ভোলার শহরের নতুন বাজার এলাকায় পৌর ভবন ও বিজেপি কার্যালয়ের সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, সকাল থেকে ভোলা জেলা বিএনপি’র দলীয় কার্যালয় মহাজনপট্টি ও জাতীয় পার্টির (বিজেপি) দলীয় কার্যালয় শহরের নতুন বাজারে সামনে পাল্টা-পাল্টি কর্মসূচি চলছিল। দুপুর ১২টার দিকে বিজেপি’র অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা নতুন বাজার তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে সদর রোড হয়ে চকবাজার হয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ করেন। পরে সেখানে তারা সমাবেশ করেন। অপরদিকে মহাজনপট্টি জেলা বিএনপি’র কার্যালয়ের সামনে থেকে সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করেন বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। পরে নতুন বাজার পৌর ভবনের সামনে আসলে উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে বিজেপি’র ৫০ নেতাকর্মী আহত হন। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিকের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়।
জানা গেছে, ভোলা-১ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি ও বিজেপি’র মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। জেলা বিএনপি’র দাবি এবার দল থেকে জোটের কোনো প্রার্থী না দিয়ে দলের লোকজনকে দেয়ার জন্য। অপরদিকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থও ভোলা-১ আসন থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। তার দলের নেতাকর্মীরাও তার হয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে বিজেপি’র ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন নিয়েও বিএনপি ও বিজেপি’র মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল।
এ বিষয়ে শনিবার দুপুর ২টার দিকে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র সদস্য সচিব রাইসুল আলম জানান, জেলা বিএনপি’র কার্যালয়ের সামনে পূর্বঘোষিত সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল ছিল। প্রশাসন তাদেরকে সোয়া ১২টায় বিক্ষোভ মিছিল করার সময় নির্ধারণ করে দেয়। সে অনুযায়ী তারা সাড়ে ১২টার দিকে বিএনপি’র দলীয় কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সদর রোড হয়ে বাংলাস্কুল মোড়ে আসলে বিজেপি’র সঙ্গে মুখোমুখি হয়। এসময় বিএনপি’র সিনিয়র নেতৃবৃন্দ মিছিলে থাকা সকলকে অপেক্ষা করতে বলেন। এরইমধ্যে তাদের নির্দেশ উপেক্ষা করে কে বা কারা মিছিল থেকে ঢিল ছুড়লে এ গণ্ডগোলের উৎপত্তি হয়। পরবর্তীতে তিনি জেলা বিজেপি’র দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখেন কিছু বিএনপি’র নেতাকর্মীসহ বহিরাগত লোকও সেখানে রয়েছে। বিএনপিকে হেয় করতে তারা লিপ্ত ছিল। পরে তিনিসহ বিএনপি’র সিনিয়র নেতৃবৃন্দ মিলে তাদের নেতাকর্মীদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে আসেন। এতে বিএনপি’র ও অঙ্গসংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন।
জেলা বিজেপি’র সভাপতি আমিরুল ইসলাম রতন পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, বেশ কয়েক দিন ধরেই আমরা বিজেপি’র চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থর নির্দেশে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। শনিবার আমাদের অঙ্গসংগঠনের কর্মসূচি ছিল। বিষয়টি পুলিশকেও জানানো হয়েছে। পুলিশের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সেই কর্মসূচি শেষ করি। শেষ সময়ে এসে বিএনপি’র একটি গ্রুপ এ হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে। এ বিষয়ে আমরা জেলা বিএনপিকে দায়ী করি না। বিএনপি’র একটি ছোট্ট গ্রুপ ভোলায় বিজেপি বিএনপি’র দীর্ঘদিনের সমপ্রীতি নষ্ট করার জন্য এ হঠকারীমূলক হামলা চালিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দুই দলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশ দুই পক্ষকেই আলাদা আলাদা সময় ও রুট দিয়ে দিয়েছে। তারা সেই নির্দেশনা অমান্য করে নতুন বাজার এসে বিজেপি’র দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে। এতে তাদের অন্তত ৫০ জনের মতো নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৩০ জন ভোলা সদর হাসপাতালে ও ৬ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাহাদাৎ মো. হাসানাইন পারভেজ জানান, জেলা বিএনপি ও জেলা বিজেপি’র পাল্টপাল্টি কর্মসূচি ছিল। উভয়পক্ষকে আলাদা আলাদা সময় ও রুট নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিএনপি’র লোকজন তাদের রুট পরিবর্তন করে পুলিশকে উপেক্ষা করে জেলা বিজেপি’র কার্যালয়ের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। একপর্যায়ে বিএনপি’র ধাওয়া খেয়ে বিজেপি’র লোকজন দলীয় কার্যালয় ছেড়ে অন্য দিকে চলে যায়। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে রাজনৈতিক নেতাকর্মী সকলের শিষ্টাচারমূলক আচরণ করা উচিত। তবে যারা আইন ভঙ্গ করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।




