আল জাজিরার বিশেষ প্রতিবেদন

আল জাজিরার বিশেষ প্রতিবেদন
হাসিনাকে কি ফাঁসির মুখোমুখি করতে পারবে বাংলাদেশ?

Published: 30 November 2025

পোস্ট ডেস্ক :


সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসি চায় বাংলাদশ। এখন প্রত্যর্পণের অনুরোধে ভারতের আনুষ্ঠানিক জবাবের অপেক্ষায় দেশটি। গত বছর গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত ওই নেত্রীর উত্থান-পতনের ধারাবাহিক ইতিহাস কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা। মানবজমিন পাঠকদের জন্য ছবি এবং ক্যাপশনগুলো তুলে ধরা হলো-

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিতর্ক যেন কখনও থামছে না। একসময় গণতন্ত্রপন্থী রাজনীতিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে যাকে দেখা হতো, সেই হাসিনাকেই এখন অভিযুক্ত করা হচ্ছে স্বৈরতন্ত্র, ব্যাপক দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে। মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে ঘোষিত হয়েছে মৃত্যুদণ্ড—আর অনেকে চান রায় কার্যকর হোক।

১৯৪৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া হাসিনা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে মুজিবের নেতৃত্বে জন্ম নেয় বাংলাদেশ। আর সেই ইতিহাসের সরাসরি উত্তরসূরি হাসিনা।

১৯৯০ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে মিলে হাসিনা নেতৃত্ব দেন স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানে। যা শেষ পর্যন্ত এরশাদের পতন ঘটায়।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসেন হাসিনা। ২০০১ সালে পরাজয়ের পর ২০০৮ সালে আবার নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে প্রধান বিরোধী দল। এরপর ২০১৮ সালের ভোটে জালিয়াতির অভিযোগ উঠলেও তিনি ক্ষমতায় থাকেন। সেই বছরই দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অবশেষে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে হাসিনার পতনের পর খালাস পান খালেদা জিয়া।

২০০৯ সালের পর থেকে হাসিনার সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি গড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখে, তৈরি পোশাক খাত ছিল প্রধান চালিকা শক্তি।

তবে তার শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনী- বিশেষ করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) বিরোধী নেতা ও সমালোচকদের অপহরণ ও হত্যা করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। হাসিনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

২০২৪ সালের জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এক পর্যায়ে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। জাতিসংঘ বলছে, নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে সেই বিক্ষোভে ১৪০০ মানুষ নিহত হয়েছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট হাসিনা পদত্যাগ করে সামরিক হেলিকপ্টারে ভারতে পালিয়ে যান। পরে তার অনুপস্থিতিতে মানবতাবিরোধী অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানালেও এখন পর্যন্ত তাতে সায় দেয়নি ভারত। ২০২৫ সালের ২১ নভেম্বর আবারও অনুরোধ পাঠানো হয়েছে। হাসিনাকে আদৌ দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা যাবে কি না- সে প্রশ্ন এখনও অনিশ্চিত।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনুস দাবি করেছেন- হাসিনার আমলে সরকারি কোষাগার থেকে ২৩ হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থ লোপাট হয়েছে। ২০২৬ সালের শুরুর দিকে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা এবং নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে ভারত আসলেই হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে যাবে নাকি ঢাকার প্রত্যর্পণ দাবিতে সাড়া দেবে- তা নিয়ে জোর আলোচনা চলছে।