বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বর্ষপূর্তির দিনে পশ্চিমবঙ্গে মসজিদ তৈরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

Published: 6 December 2025

পোস্ট ডেস্ক :


ভারতের অযোধ্যায় ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বর্ষপূর্তির দিনে শনিবার পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙ্গায় বাবরি মসজিদের অনুরূপ মসজিদ তৈরির জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৃণমূল কংগ্রেসের বহিষ্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবীর নিজেই। এই মসজিদ তৈরির ঘোষণা দিয়েছিলেন ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন করীর। তিনি বলেন,২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর মসজিদ তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলাম আমি। মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষ্যে দেশ বিদেশ থেকে মুসলিম ধর্মগুরুরা এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। সৌদি আরব থেকেও এসেছিলেন দুইজন ধর্মগুরু। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসলিমরা সমবেত হয়েছিলেন রেজিনগরের সভায়। লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছিল বলে জানা গেছে। মসজিদ নির্মাণের জন্য অনেককেই মাথায় করে ইট নিয়ে আসতে দেখা গেছে। অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী সহ কড়া পুলিশি ব্যবস্থা ছিল।

জানা গেছে, তিন বছরের মধ্যে মসজিদ নির্মাণের কাজ শেষ হবে। মসজিদ নির্মাণের জন্য একটি ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। অর্থের কোনও সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, বহু মানুষ অর্থ দিতে এগিয়ে এসেছেন। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বর্ষপূর্তির দিনটি সংহতি দিবস হিসেবে পালন করে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। সে উপলক্ষে ‘মিলেমিশে থাকার’ বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় একদিকে বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে।

অন্যদিকে বিজেপির তরফ থেকে পালন করেছে শৌর্য দিবস হিসেবে। এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ার এক বার্তায় মমতা লেখেন, বাংলার মাটি একতার মাটি। এই মাটি রবীন্দ্রনাথের মাটি, নজরুলের মাটি, রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের মাটি- এই মাটি কখনও মাথা নত করেনি বিভেদের কাছে, আগামীদিনেও করবে না। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বসু বাংলার জনগণকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য ও গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে রাজনৈতিকভাবে তৃণমূল কংগ্রেস এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করেছেন হুমায়ুন কবীর। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ১৫ বছরে সংখ্যালঘুরা কী পেয়েছে? ভরতপুরের বিধায়কের কথায়, মুখ্যমন্ত্রী যা করবেন, সেটাই ঠিক। বাকিরা যা বলবে সেটা ভুল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এত অহঙ্কার। বাংলায় ৩৭ শতাংশ সংখ্যালঘু আছে। তাদের সিংহভাগের ভোট পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মমতা। খুব অহঙ্কার হয়েছে। চূর্ণ করব আমি। আমি ওকে প্রাক্তন করবই।

হুমায়ুন কবীর বলেন, মোট ১৩৫টি আসনে প্রার্থী দেব। বিধানসভায় যাব। প্রয়োজনে বিরোধী আসনে বসব। সরকারের কাছে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের দাবি জানাব। ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে অধিকার বুঝে নেব।
তবে হুমায়ুনকে কড়া বার্তা দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দের নেতা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। তার কথায়, রাজনৈতিক কারণে কোনও মসজিদ করা ঠিক নয়। কেবলমাত্র জেদের বশে এভাবে মসজিদ তৈরি করা যায় না। আল্লার জন্য মসজিদ করা হলে ভবিষ্যৎ বলবে। হলে মসজিদই হবে, রাজনীতির আখড়া নয়।

পশ্চিমবঙ্গের বহিষ্কৃত তৃণমূল বিধায়কের বাবরি মসজিদ তৈরি করার ঘোষণার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন শঙ্করাচার্য অভিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতী। উত্তরাখণ্ডের জ্যোতিষপীঠের শঙ্করাচার্য বলেছেন যে যারাই বাবরের পাশে দাঁড়াবেন, তার সঙ্গে বাবরের মতো আচরণ করা হবে। তিনি বলেন, বাবর একজন হানাদার ছিলেন, কেউ যদি বাবরের পরিচয়ে পরিচিত হতে চায়, তাহলে তাকেও হানাদার হিসেবে বিবেচনা করা হবে। শঙ্করাচার্য বলেন, মসজিদ নির্মাণে কোনও আপত্তি নেই, তবে বাবরের নামে তা করা হলে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়।