ভাতের মাড় ও চালের পানির গুণাগুণ
আমরা প্রতিদিন চাল ধুয়ে ভাত রান্না করে থাকি। আর এই চাল ধোয়া থেকে যে পানি বের হয় তাকে আমরা চাল ধোয়া পানি বলি। ত্বক থেকে স্বাস্থ্য, সব কিছুতেই উপকারিতা আছে এই চাল ধোয়া পানির। ত্বকের জন্য চালধোয়া পানি! শুনতে অবাক লাগলেও এটা সত্যি। আমাদের ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য অনেক গুণাগুণ বিদ্যমান রয়েছে চাল ধোয়া পানিতে। চাল ধোয়া পানিতে যে উপকার পাবেন তা জানলে রীতিমতো অবাক হয়ে যাবেন।
আমাদের প্রধান খাদ্য ভাত রান্না করার সময় যে অতিরিক্ত পানি অর্থাৎ ভাতের মাড় ফেলে দেই, সে ভাতের মাড়ে আমাদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা এবং সৌন্দর্য বর্ধনের কত উপাদান যে লুকিয়ে আছে, তা জানলেও অবাক হবেন!
আজকে জেনে নিন, আমাদের সুস্বাস্থ্য, ত্বক ও চুলের যত্নে চাল ধোয়া পানি ও ভাতের মাড় ব্যবহারের উপকার ও গুণাগুণ সম্পর্কে-
চাল ধোয়া পানির ব্যবহার
চালের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেলস ও এ্যামিনো এ্যাসিড যা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য উপাদান। শুধু তা-ই নয়, চালের পানিতে উপস্থিত এ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান ত্বকের সকল প্রকার ব্যাকটেরিয়াজনিত সমস্যা দূর করতে সক্ষম।
ত্বকের সানবার্ন দূর করে: চালের পানির একটি অনন্য ব্যবহার হচ্ছে সানবার্ন দূর করতে। এই পানির বিশেষ কুলিং উপাদান রোদে পোড়া ত্বক দ্রুত স্বাভাবিক করে তোলে। এটি রোদে পোড়া দাগ দূর করার সঙ্গে সঙ্গে রোদে পোড়ার দরুন ত্বকের পরবর্তী ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে চাল ধোয়া ঠাণ্ডা পানি সবচেয়ে বেশি কার্যকরী।
ফেশিয়াল টোনার ও ক্লিনজার: চালের পানি ত্বকের জন্য দারুণ টোনারের কাজ করে। সামান্য কিছু তুলা নিয়ে চালের পানিতে ভিজিয়ে আপনার ত্বকে আলতো হাতে লাগিয়ে নিন। এই পানি আপনার ত্বকের পোরস মিনিমাইজ করবে এবং ত্বক টান টান রাখবে। চালের পানির এই প্রাকৃতিক টোনার ভিটামিন বি কমপ্লেক্সে ভরপুর, যা আপনার ত্বকের কোষ বৃদ্ধি করবে, ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে এবং ত্বক নরম-কোমল করার পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াবে।
ব্রণ সমস্যা দূর করে: যারা দীর্ঘদিন ধরে ব্রণের সমস্যায় ভুগছেন, তারা এই চালের পানি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এটি একদম প্রাকৃতিক উপাদান, তাই কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় নেই। আপনি ফেসওয়াসের মতো করে চালের পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে পারেন অথবা তুলার সাহায্যে ত্বকে ম্যাসাজ করতেও পারেন। নিয়মিত এটি ব্যবহার করার ফলে ব্রণের সমস্যা কমতে থাকবে। অনেকের ত্বকে লাল ধরনের ছোট ছোট দানার মতো ওঠে, চালের পানির মাধ্যমে এই লাল ভাবও দূর করা সম্ভব।
চুলের যত্নে চালের পানি: চালের পানি ব্যবহার করার ফলে এটি চুলকে আরও উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যবান করে। শুধু এটাই নয়, চালের পানিতে থাকা পুষ্টিমান চুলের আগা থেকে গোঁড়া পর্যন্ত পুষ্টি সরবরাহ করে চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
শক্ত ও মজবুত চুলের জন্য: চালের পানি দিয়ে চুল ধোয়ার ফলে আপনার চুল হবে আরও ঝলমলে, মজবুত ও মসৃণ। শ্যাম্পু করার পর চুল চাল ধোয়া পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এ পানি মাথায় দেয়ার পর আঙ্গুলের সাহায্যে হালকা করে মাথার ত্বকে ম্যাসেজ করুন। সপ্তাহে দু’বার এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে ভাল ফল পাবেন।
চুলের গোঁড়া শক্ত করে চুল পড়া বন্ধ: চালের পানিতে প্রচুর পরিমাণে এ্যামিনো এ্যাসিড রয়েছে। এ এ্যামিনো এ্যাসিড চুলের গোঁড়া শক্ত করে অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করে চুল আরও ঘন করে তোলে ও চুলের উজ্জ্বলতা ধরে রাখে।
ডায়রিয়া থেকে মুক্তি: ডায়রিয়া থেকে মুক্তির উপাদান হিসাবে চাল ধোয়া পানি খুবই উপকারী। ডায়রিয়ারও পথ্য চাল ধোয়া পানি। এক গ্লাস পানিতে সামান্য নুন মিশিয়ে তা খেয়ে নিলে ডায়রিয়া থেকে মুক্তি পাবেন।
ভাতের মাড়ের ব্যবহার:
ত্বকের বলিরেখা দূর করে: আপনার ত্বকের বলিরেখা, বিশেষ করে কপালের ও চোখের চারপাশের ভাঁজ হয়ে যাওয়া বা কুঁচকে যাওয়া চামড়া টান টান করতে চালের পানির তুলনা নেই। তবে এক্ষেত্রে চালের জ্বাল দেয়া পানি লাগবে, মানে ভাতের মাড়। ভাতের মাড় নিয়ে আলতো হাতে মুখের পুরো ত্বকে ম্যাসেজ করে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। কিছুদিন নিয়মিত এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে নিজেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
একজিমা প্রতিরোধ করে: ভাতের মাড়ের আরও একটি জাদুকরী গুণ হচ্ছে এটি একজিমা প্রতিরোধক। ভাত রান্না করার সময় মাড়টুকু ফেলে না দিয়ে একটি পরিষ্কার পাত্রে সংরক্ষণ করুন। মাড় সম্পূর্ণ ঠাণ্ডা হয়ে আসলে একটি নরম ও পরিষ্কার কাপড়ের সাহায্যে আপনার একজিমা আক্রান্ত স্থানে এ মাড় সুন্দর করে লাগিয়ে নিন। একদম পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়া অব্দি অপেক্ষা করুন। এ ভাতের মাড় যদি একটানা কয়েক দিন এভাবে লাগাতে থাকেন, আপনার একজিমা সমস্যা অনেকটাই কমতে থাকবে।
চালধোয়া পানি কাচের বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে প্রতিদিন তা ব্যবহার করুন। ত্বকে সংক্রমণ থাকলে দিনে অন্তত দু’বার ১৫ মিনিট করে এই পানিতে গোসল করুন।