রানী ভিক্টোরিয়ার সাম্রাজ্য ২
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ
হিস্ট্রি এক্সট্রা।।
১৬০০ সালে রানী প্রথম এলিজাবেথ ভারত মহাসাগর অঞ্চল এবং এর দূরবর্তী স্থানগুলোতে বাণিজ্য বিস্তার করার উদ্দেশ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে একটি রাজকীয় সনদ প্রদান করেছিলেন। সেময় এ অঞ্চলে পর্তুগিজ এবং ডাচ উভয়েরই সু-প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক ছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অসাধারণভাবে সফল্য লাভ করে, দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটায়, যার ফলে এটি এক সময় বিশ্বের অর্ধেক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেছিল। এক পর্যায়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিছক বাণিজ্যিক সংস্থায় সীমাবদ্ধ ছিল না; এটি বাণিজ্য এবং রাজনীতির মধ্যকার পার্থক্যকে অতিক্রম করে যায়। উনিশ শতকের শুরুতে প্রতিষ্ঠানটি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর দ্বিগুণ নিজস্ব বেসরকারী সামরিক বাহিনীর সহায়তায় পুতুল নেতাদের ক্ষমতায় বসানোর মাধ্যমে কার্যকরভাবে ভারতের একটি বিশাল অংশ শাসন করেছিল।
এ সংস্থাটি বাংলায় আফিম চাষ এবং পরবর্তীতে সেটির বিশাল একটা অংশ ক্যান্টন বন্দরে রফতানি করে চীনকে বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করতেও বিশাল ভূমিকা রেখেছিল, যার ফলে ব্রিটেন ও চীনের মধ্যে ২টি আফিম যুদ্ধ সঙ্ঘটিত হয়েছিল। প্রথম আফিম যুদ্ধের সূচনাটি হয়েছিল হংকংয়ে ১৮৪২ সালে, এটি এমন এক অঞ্চল ছিল, যা পরবর্তী কয়েক দশকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত্তিপ্রস্তরে পরিণত হয়েছিল। ১৮৩৩ সালে হাউস অফ কমন্সে বক্তব্য রেখে সাংসদ থমাস বাবিংটন ম্যাকোলে পর্যবেক্ষণ করেন যে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আপাত বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য প্রতিষ্ঠানটির সার্বভৌমত্বের গোঁজামিলে পরিণত হয়েছে। যাহোক, এটি তার মেয়াদ পার করে টিকে ছিল। ১৮৫৭ সালে শুরু হওয়া ভারতীয় বিদ্রোহের পর সংস্থাটিকে বিলুপ্ত করে উপমহাদেশটি সরাসরি ব্রিটিশ রাজের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়, যা ব্রিটিশ রাজ নামে পরিচিত।
রিচার্ডসন বলেছেন, ‘যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেছিলেন, ব্রিটেনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপনিবেশটি ছিল ভারত। ১৮৭৭ সালে ভিক্টোরিয়া নিজেই ভারতের সম্রাট হয়েছিলেন এবং তিনি দেশটিকে তার মুকুটের রত্ম হিসাবে দেখেছিলেন। ব্রিটেনের গণতন্ত্র এবং শিল্প এবং মুক্ত বাণিজ্য এবং এ জাতীয় সমস্ত ধারণা অন্যান্য দেশে নিয়ে আসার নীতিগত বাধ্যবাধকতা ছিল। শাসিত লোকদের ‘সভ্যকরণ’ করার ধারণাটি ভিক্টোরিয়ানদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং ভারতে সত্যিকারভাবে একটি সাম্রাজ্যের জন্য প্রায়শই নীতিগতভাবে আবশ্যক হিসাবে পরিচিত সেই ভিত্তিস্থাপন পরিলক্ষিত হয়।’ ১৮৬৯ সালে ভারতকে নাটকীয়ভাবে দ্রুত গতিপথ সরবরাহ করা সুয়েজ খাল খোলার সাথে সাথে দক্ষিণ এশিয়ায় ব্রিটেনের ঘাঁটি আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ১৮৮২ সালে ব্রিটেন ফরাসিদের কাছ থেকে খালটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়, এ পদক্ষেপ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সীমানা সম্প্রসারণকে তরান্বিত করে।
১৮৮০ সালের গোড়ার দিকে, দুর্গম আফ্রিকা মহাদেশের গহীনে রাজকীয় তাঁবুগুলো বিস্তৃত হয়েছিল। আধুনিক শতাব্দীর নাইজেরিয়া, সিয়েরা লিওন, গানা এবং গাম্বিয়াসহ পশ্চিম আফ্রিকার বিশাল অংশে ইতোমধ্যে উপনিবেশ স্থাপন করার পর, শতাব্দীর শুরুর দিকে ব্রিটেন কার্যকরভাবে মিসরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল, যে দেশটির মধ্য দিয়ে সুয়েজ খাল প্রবাহিত। সেখান থেকে সুদান, কেনিয়া, উগান্ডা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে আরো দক্ষিণে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ছড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয় বোয়ার যুদ্ধের শেষ দিকে এবং ১৯০২ সালের মধ্যে ব্রিটেনের আফ্রিকান উপনিবেশ এবং দেশটির আওতায় সুরক্ষা পাওয়া অঞ্চলগুলোর মানচিত্র উত্তরের পোর্ট সাইদ থেকে দক্ষিণে কেপ অফ গুড হোপ পর্যন্ত মহাদেশ জুড়ে একটি বিরাট সাম্রাজ্যে পরিণত হয়। (চলবে)