চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ

Published: 2 March 2021

পোস্ট ডেস্ক : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) প্রধান ছাত্রাবাসে সিট দখল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ছাত্রাবাসের বেশ কয়েকটি কক্ষে ভাংচুর করা হয়েছে।

কক্ষ থেকে বাইরে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে বই-খাতাসহ বিভিন্ন শিক্ষাসামগ্রী। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন।

সংঘর্ষে জড়ানো একটি গ্রুপ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং অপরটি সাবেক সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। দুই পক্ষই এ সংঘর্ষের জন্য পরস্পরকে দায়ী করেছে। এ সময় ছাত্রাবাসের অন্তত ১২টি কক্ষে ভাংচুর চালানো হয়।

এদিকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর শাহেনা আক্তার পুলিশ ও বিবদমান দুই গ্রুপের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় শেষ হয় বৈঠক।

পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, বৈঠক থেকে বিবদমান গ্রুপগুলোকে ছাত্রাবাসে যারা যে অবস্থানে আছে সে অবস্থানে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। আসন নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে আগামী ২৩ মার্চ পরবর্তী বৈঠক করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। যেহেতু আগামী ২২ মার্চ পর্যন্ত চমেক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পর্যায়ের পরীক্ষা রয়েছে। তাই ছাত্রাবাস খালি করা বা শিক্ষার্থীদের আসন পুনর্বিন্যাস করার কোনো সুযোগ নেই। সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ দেয়নি।

পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চকবাজার থানার চট্টেশ্বরী রোডে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের প্রধান ছাত্রাবাস অবস্থিত। এই ছাত্রাবাসের দুটি ব্লক রয়েছে। দুটি ব্লকের একটিতে নওফেল অনুসারীদের আধিপত্য রয়েছে। আরেকটিতে রয়েছে আ জ ম নাছির অনুসারীদের আধিপত্য। তবে পুরো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্র রাজনীতি, ছাত্রলীগের কমিটি ও সংসদ রয়েছে নাছির অনুসারীদের হাতে। দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর ধরে আ জ ম নাছির উদ্দীন ছাত্রলীগের মেডিকেল কলেজ ইউনিটটি নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন এবং এখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় ছিল।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ছাত্রাবাস থেকে নওফেল অনুসারীরা নাছির অনুসারীদের জোরপূর্বক বের করে দেওয়ার চেষ্টা করলে নাছির অনুসারীরা বাধা দেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষ শুরু হয়।

একে অপরের ওপর হকিস্টিক ও লাঠিসোটা নিয়ে আক্রমণ করে। ভাংচুর করে ছাত্রাবাসের বিভিন্ন কক্ষ। কক্ষের বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয় কক্ষের শিক্ষা সামগ্রীসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার প্রায় একঘণ্টা পর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ছাত্রাবাসে যান চমেকের অধ্যক্ষ শাহেনা আকতার। পরে তিনি ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে পুলিশসহ দুই গ্রুপের চারজন প্রতিনিধি নিয়ে বৈঠক করেন।

বিকালে ছাত্রাবাসে গিয়ে দেখা গেছে, ছাত্রাবাসের সামনে আঙিনায় হকিস্টিক, ভাঙ্গা অবস্থায় চেয়ার, বালিশ-বিছানাপত্র, ছেঁড়া অবস্থায় বইপত্র-ক্রেস্ট পড়ে আছে। দ্বিতীয়তলায় সাধারণ পাঠ কক্ষের জানালার কাঁচ, চেয়ার-বইয়ের তাক ভাংচুর অবস্থায় দেখা গেছে। পাঠকক্ষের ভেতরে ইটের টুকরা ও লাঠি জমা অবস্থায়ও পাওয়া গেছে।

বিভিন্ন কক্ষে খাট, বইয়ের তাক, টেবিল-চেয়ারসহ আসবাবপত্র এবং বিছানাপত্র এলোমেলো অবস্থায় দেখা গেছে। কয়েকটি কক্ষের দরজা-জানালাও ভাংচুর হয়েছে।

ছাত্রলীগের উভয়পক্ষের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধান ছাত্রাবাসের দ্বিতীয়তলায় ‘এ’ ব্লকে আধিপত্য আছে নওফেলের অনুসারীদের। আর বি-ব্লক নিয়ন্ত্রণে আছে নাছির অনুসারীদের।

নওফেল অনুসারি ৫৮তম ব্যাচের এমবিবিএস শিক্ষার্থী ইমন সিকদার বলেন, হোস্টেলের সিট নিয়ে এ ঘটনার সূত্রপাত। ইন্টার্ন চিকিৎসক যারা আছেন তাদের আলাদা থাকার ব্যবস্থা থাকলেও তারা হল ছাড়ছেন না। নানারকম বাহানা দিয়ে তারা হলে থাকছেন। ফলে আমরা যারা আছি গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

তিনি বলেন, দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় তিন শিক্ষার্থী আহত হন। এরা হলেন- ৫৮তম ব্যাচের তৌফিকুর রহমান ইয়ন এবং ৬০তম ব্যাচের মুকতাদির আহমেদ ও শাওন দত্ত।

নাছিরের অনুসারী চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আসেফ বিন ত্বাকী রিফাত বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চমেক ছাত্রলীগের রাজনীতি আ জ ম নাছির উদ্দীন ভাইয়ের নিয়ন্ত্রণে। হঠাৎ করে ছাত্রশিবির করে আসা কিছু লোকজন নিজেদের ছাত্রলীগের নেতাকর্মী পরিচয় দিয়ে ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালাচ্ছে। তারা নিজেদের নওফেল ভাইয়ের অনুসারি হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। আবার নওফেল সাহেব বলছেন, ক্যাম্পাসে উনার কোনো গ্রুপ নেই। তাহলে আমাদের প্রশ্ন- ক্যাম্পাসে যারা উনার নামে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করছেন তারা কারা?