ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং টেমিং অব দ্য শ্রু

Published: 5 March 2021

।। মৌরিন দাউদ ।।

শেকসপিয়ার কি একজন নারীবিদ্বেষী ছিলেন? ‘দ্য টেমিং অব দ্য শ্রু’কে কি পাঠতালিকা থেকে বিদায় দেওয়া উচিত? বইটির শেষান্তে কেইটের আত্মসমর্পণের ধ্রুপদি বাণী শোনার পর! কেইটের ভাষ্য নারীরা স্বামীর সম্পত্তি (তাদের জিম্মাধীন) অথবা সার্বভৌম; তার ভাষ্য, স্ত্রীদের উচিত তাদের যা কিছু আছে তা স্বামীদের পায়ের তলায় সমর্পণ করা।

এ বক্তব্যকে কি আপসে মেনে নেওয়া যায়, যদি কেইট শেষ পর্যন্ত একটা চোখটিপ দেয়, মেরি পিকফর্ডের মতো; পিকফর্ড ১২২৯ সালের একটা ছবিতে ডগলাস ফেয়ারব্যাংকের সঙ্গে যেমনটা করেছিলেন! অথবা কেইট যদি শেষান্তে শ্যাম্পেইনকে বিষাক্ত করে দেয় (সায়ানাইড মিশিয়ে)?

‘শেকসপিয়ার আওয়ার লাইভ!’-এর লেটেস্ট এডিশনে এ প্রশ্নগুলো নিয়ে তর্ক হয়েছে। এ অনুষ্ঠানটি হচ্ছে শেকসপিয়ার থিয়েটার কম্পানির একটা সাপ্তাহিক শো।

ডারমাউথের ইংরেজির অধ্যাপক লিন্ডা বুজ তাঁর প্রবন্ধ ‘স্কলডিং ব্রাইডস অ্যান্ড ব্রিডলিং স্কল্ডস’-এ লিখেছেন—টিউডর-স্টুয়ার্ট আমলের ইংল্যান্ডে, কী শহরে কী গ্রামে, ব্যাপক মোহিনী শক্তি বিনিয়োগ করা হয়েছে বেয়াড়া মহিলাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার জন্য, বিশেষ করে সেসব নারীর নিয়ন্ত্রণের জন্য যারা পুরুষের ইচ্ছার চেয়ে নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে তাদের যৌনতা বা বাকশক্তির চর্চা করত। যে ডিসকোর্সে জিহ্বাকে শরীরের বেয়াড়া অংশ সাব্যস্ত করা হয়, তাতে নারীর বাচনকে পুরুষের বাচন বলে একটা প্রতীকী অবস্থান দেওয়া হয়। এটাকে লিঙ্গী কর্তৃত্বের আনলফুল অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন বলতে হয়, যাতে পুরুষের বন্ধ্যকরণের সিম্বলিকস অবশ্যই দায়ী।

কলঙ্ক লেপনের ‘ধর্মাচার’ নারীদের ক্ষেত্রে চর্চার বিষয়ে পরিণত হয়েছে, যাদের মুখরা জিহ্বার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করা হয়েছে। কিছু ‘আক্রমণকারী’র মুখে লাগাম পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল; আর অন্যদের শাস্তি দেওয়ার চেয়ারে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং পানিতে চোবানো হয়েছে।

চার শতক পরেও নারী রাজনীতিকদের বা রাজনীতিতে জড়িত নারীদের এখনো ‘সেক্সিস্ট’ লোকজন হুল ফোটায়। কিন্তু কী এমন ঘটে, যদি আমরা লিঙ্গীয় অবস্থানটাকে বদলে দিই। একজন পুরুষ রাজনীতিক, যা কিছুই ঘটুক না কেন, ‘টেমিং অব দ্য শ্রু’-এর মোস্ট কনসিকুয়েনশিয়াল প্রডাকশনের কেন্দ্রে থাকে। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তারা লাগাম পরাতে চায়, যাতে তারা তার ‘মুখরা জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে। কিন্তু তার পরও তার ভোট অক্ষুণ্ন থাকবে, রিপাবলিকানদের ব্যর্থ প্রয়াস সত্ত্বেও।

এটা একটা বেহুদা কাজ। কেইটের মতো ট্রাম্পকেও দেখা হয়েছে দুষ্ট লোক (নরকের কীট) হিসেবে। আমেরিকার রাজনীতির ইতিহাসে তাঁর মুখ সবচেয়ে খারাপ। কিন্তু তাঁকে আরো সভ্য হওয়ার জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করা হয়নি, যেমন করা হয়েছিল কেইটের ক্ষেত্রে। রিপাবলিকানরা এখন হর্টেনসনের লাইনটি স্মরণ করে, ‘দেয়ার ইজ স্মল চয়েস ইন রটেন অ্যাপলস।’

লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, ট্রাম্প একজন ‘হ্যান্ডফুল’—শব্দটি সাধারণত ‘স্পিরিটেড ওমেনের’ স্বভাব-চরিত্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলা হয়। ট্রাম্প এ সপ্তাহান্তে মার-এ-লাগোতে যাচ্ছেন তাঁর ‘সবারেইন লর্ড’-এর সঙ্গে গলফ খেলতে। তিনি চেষ্টা করেন ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে। এটাকে তিনি ট্রাম্পের লিগ্যাসির সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন। কিন্তু ট্রাম্প এর কড়া সমালোচনা করেন না, বরং তিনি মধ্যবর্তী নির্বাচনকে দেখেন ‘প্রতিশোধ গ্রহণের’ বিষয় হিসেবে বা সেলফ প্রমোশনের বিষয় হিসেবে—এটাকে কোনোভাবে কাজে লাগানো যায় কি না।

কেইটের সঙ্গে যেমন পেট্রুচিও, তেমনি ট্রাম্পের সঙ্গে কেভিন ম্যাকার্থি খুব মশকারা করেন বা মজা করেন। তিনি বলেন, অভিশংসনের বিরোধিতা করে ট্রাম্প মার-এ-লাগোতে হিজরত করেছেন; বুনো স্বভাবের সাবেক প্রেসিডেন্টকে ভদ্রস্ত করা একটা ব্যর্থ চেষ্টা ইত্যাদি।

মিচ ম্যাকোনেল ট্রাম্পকে অপছন্দ করেন, অথচ মনে করেন তিনি সলোমনের মতো হয়ে যাচ্ছেন, অভিশংসন প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন খুবই সাধারণ যুক্তিতে। সিনেট ফ্লোরে তিনি বলেছেন, ট্রাম্প যে মিথ্যাচার করেছেন তার কারণে ক্যাপিটলে দাঙ্গা বেধেছে। কিন্তু বিস্ময় ও বিরক্তির সঙ্গে ম্যাকোনেল (তিনি নিজেকে সিনেটের সবচেয়ে বড় সুরক্ষক মনে করেন) ট্রাম্পের হিপোক্র্যাসির জন্য রুক্ষ ভাষা ব্যবহার করলেন, অথচ তাঁর সাহসিকতার প্রশংসা করলেন না। ম্যাকোনেলকে যাঁরা চিনেন তাঁরা জানেন ম্যাকোনেল সিনেট ফ্লোরে যেমনটা চান তেমনটাই করতে পারেন; তাঁর ক্ষেত্রে প্রসিডিউরাল বাধ্যবাধকতা নেই।

নির্বাচনী প্রতারণা বা জালিয়াতির অভিযোগের বিষয়ে রিপাবলিকানরা ট্রাম্পকে প্রচুর অক্সিজেন দিয়েছে, এটা তাঁকে ট্র্যাজেডির দিকে নিয়ে গেছে।

ট্রাম্প সবচেয়ে বড় অকৃতজ্ঞ; তিনি ম্যাকোনেলের না ভোটে (সিনেটে) সন্তুষ্ট নন। তিনি চটজলদি একটা বিবৃতি দিলেন, যেটা মিচের প্রার্থীদের জন্য হুমকিস্বরূপ। তিনি মিচকে অস্থিরমতি, বদমেজাজি এবং গুমরামুখো কর্কশ রাজনৈতিক ব্যক্তি বললেন। আরো বললেন, তাঁর রাজনৈতিক ভিশনের, কর্মদক্ষতার এবং ব্যক্তিত্বের অভাব রয়েছে।

ম্যাকোনেলের তিরস্কৃত হওয়া উচিত। ট্রাম্প তাঁকে ছাড়া কিছু করতে পারতেন না। উভয়েই নিজের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য অপরকে ব্যবহার করেছেন। রক্ষণশীলদের জন্য ট্রাম্পের যে অর্জন, সুপ্রিম কোর্টকে নতুন করে সাজানো, ট্যাক্সকাটের ব্যবস্থা করা—সব কিছুই হয়েছে ম্যাকোনেলের জন্য।

বাইডেন ট্রাম্পকে বলেছেন, ‘ফর্মার গাই’; তারপর তিনি তাঁর উষ্মা নিকি হ্যালির দিকে সরালেন। নিকি পলিটিকো ম্যাগাজিনকে বলেছেন, রিপাবলিকানদের উচিত ভালো ট্রাম্পকে বেছে নেওয়া এবং মন্দ ট্রাম্পকে বাদ দেওয়া। টেড ক্রুজের কর্মকাণ্ড মনে হয় সবচেয়ে বেশি নাড়া দেওয়ার মতো। ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় তাঁর স্ত্রী ও বাবার ব্যাপারে আক্রমণাত্মক কথা বলেছিলেন। ওয়াশিংটনের ব্যাপারে সব সময় আমি একটা কথা বলি, সেখানকার গল্পটা এমন—‘স্মার্ট পিপল ডোয়িং দ্য ডাম্ব থিংস।’

আমরা দেখতে চাই, একদা যে অবকাঠামো তাঁর হাতে ছিল সেটা ছাড়া ট্রাম্প তাঁর রাজকীয় নির্বাসনের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে পারেন কি না। নির্বাচনী অভিযোগের চ্যালেঞ্জ নিয়ে দুরন্ত আইনজীবীদের সঙ্গে তাঁর বোকামিপূর্ণ কর্মকাণ্ড লক্ষণীয়। শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প যা রেখে গেছেন সেটা হচ্ছে তাঁর দুর্বৃত্ত জিহ্বা।

লেখক : নিউ ইয়র্ক টাইমসের কলামিস্ট, পুলিত্জার পুরস্কারপ্রাপ্ত

সূত্র : দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস অনলাইন

ভাষান্তর : সাইফুর রহমান তারিক