যুক্তরাষ্ট্রে প্রশ্নের মুখে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন

Published: 24 March 2021

পোস্ট ডেস্ক : মানবদেহে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ভ্যাকসিন পরীক্ষার তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের ফলাফল পুরোনো ও অসম্পূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়ে থাকতে পারে।

এর আগে গত সোমবার যুক্তরাজ্য ও সুইডেনভিত্তিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানায়, তাদের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রবীণদের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ কার্যকর। শুধু তা-ই নয়, এই ভ্যাকসিন গুরুতর অসুস্থতা বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি ঠেকাতে শতভাগ কার্যকর। সবার জন্য টিকাটি কার্যকর ৭৯ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে মানবদেহে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষে এ তথ্য জানিয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। টিকাটি নিয়ে বিভিন্ন দেশে রক্ত জমাট বাঁধার বিষয়ে উদ্বেগের মধ্যেই এই ঘোষণাকে সুখবর হিসেবেই মনে করা হচ্ছিল। এর একদিন পরই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা টিকার পরীক্ষার তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুললেন।

সোমবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজ (এনআইএআইডি) জানায়, যুক্তরাষ্ট্র অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন পরীক্ষার ডেটা ও নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ বোর্ড সোমবার রাতে সরকারি সংস্থাগুলো ও অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে জানিয়েছে, সোমবার সকালের দিকে প্রতিষ্ঠানটির প্রকাশ করা তথ্যে তারা ‘উদ্বিগ্ন’। ওই বোর্ডটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার অধীনে নিরপেক্ষ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দিয়ে গঠিত। যত দ্রুত সম্ভব টিকার পরীক্ষার কার্যকর ডেটা পর্যালোচনা এবং তথ্যের নির্ভুল নিশ্চিত এবং হালনাগাদ তথ্যের জন্য পর্যবেক্ষণ বোর্ডের সঙ্গে কাজ করতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এনআইএআইডি।

সান ডিয়োগের স্ক্রিপস রিসার্চের টিকার মানবদেহে পরীক্ষার বিশেষজ্ঞ এরিক টোপল বলেছেন, পরীক্ষার পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ও পর্যবেক্ষণ বোর্ডের মধ্যে মতভেদ উঠে আসার বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। এই রকম অবস্থা কোনো দিন দেখা যায়নি। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও অ্যাস্ট্রাজেনেকা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তাদের ভ্যাকসিনটি নিয়ে বড় বিতর্ক শুরু হয় চলতি মাসের প্রথম দিকে। এই টিকা গ্রহণের পর রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকির আশঙ্কায় বেশ কিছু দেশ টিকাটির প্রয়োগ স্থগিত রাখে। তবে টিকা নেয়ার পর রক্ত জমাট বাঁধার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে গত সপ্তাহে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। টিকাটি নিরাপদ বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউরোপের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা দ্য ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি (ইএমএ)।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার মানবদেহে পরীক্ষা শুরু হলেও যুক্তরাষ্ট্রে এখনো এ টিকা অনুমোদন পায়নি। টিকার পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের জন্য পর্যবেক্ষণ বোর্ডের অনুমতির প্রয়োজন হয়। বোর্ডের তথ্য বিশ্লেষণ ও উপসংহার টানার পরই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করতে পারে ওষুধ ও টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সম্প্রতি পর্যবেক্ষণ বোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার পরীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ বেশ কয়েকবার পিছিয়ে যায়। অ্যাস্ট্রজেনেকার অধীনে করা টিকার পরীক্ষার সংশোধিত প্রতিবেদন প্রতিষ্ঠানটির কাছে চাওয়ায় এই দেরি হয়। কিন্তু রোববার এক বৈঠকে পরীক্ষার ফলাফল চূড়ান্তভাবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছে হস্তান্তর করে পর্যবেক্ষণ বোর্ড। সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট।