বার্ধক্য ফাঁকি দিয়ে স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর চেষ্টা

Published: 19 May 2021

পোস্ট ডেস্ক :


বার্ধক্য জয় করে চিরতরুণ থাকার স্বপ্ন মানুষ বহুকাল ধরেই দেখছে। আপাতত বিজ্ঞানীরা রক্তের প্লাজমা নিয়ে গবেষণা করে বয়স্ক ইঁদুরের স্মৃতিশক্তির উন্নতি করতে সফল হয়েছেন। মানুষের ওপরও পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

সুইজারল্যান্ডের টোনি ভিস-কোরাই স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্ধক্য নিয়ে গবেষণার সময় আলঝেইমার রোগের প্রতি মনোযোগ দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই রোগের ক্ষেত্রে বার্ধক্যই ঝুঁকির প্রধান কারণ। কিন্তু আমার বিস্ময়ের কারণ হলো, আমরা কেন বার্ধক্যের দিকে এগোই? কোন বিষয়টি জীবের আয়ু নির্ধারণ করে? কিভাবে সেটা বোঝা যাবে এবং বদলে ফেলা যাবে?’ বার্ধক্যের প্রক্রিয়া থামাতে অথবা সেটিকে বিপরীত দিকে চালিত করতে পারে, এমন পদার্থের সন্ধান করছে ভিস-কোরাই ও তাঁর টিম। ফ্রিজে রাখা রক্তের প্লাজমা এ ক্ষেত্রে আশার আলো বয়ে আনছে। গবেষক হিসেবে কারোলি নিকোলিচ বলেন, ‘আমরা রক্তের প্লাজমার মধ্যে প্রায় দুই হাজার প্রোটিন পরীক্ষা করেছি। লক্ষ করেছি যে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক প্রোটিন বদলে যায়। সেগুলোর মধ্যে ক্ষতিকারক কিছু প্রোটিনের সংখ্যা বেড়ে যায়, অন্যদিকে আমরা অনেক ভালো প্রোটিন হারাই।’

গবেষকরা ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে বার্ধক্যের ওপর ব্লাড প্লাজমা প্রোটিনের প্রভাব লক্ষ করেছেন। মাত্র ১০ মাসেই সেই ইঁদুরগুলো বুড়িয়ে গেছে। শুধু শরীর নয়, মনেরও বয়স বেড়েছে। সেই সঙ্গে স্মৃতিশক্তি কমে গেছে।

গোলকধাঁধার মধ্যে একটি ইঁদুর পালানোর গর্ত আবার খুঁজে পায় কি না, সেই পরীক্ষার মাধ্যমে তা জানা যায়। গবেষকরা সেই কাজে কম বয়সী ও বেশি বয়সী ইঁদুরের মধ্যে দক্ষতার পার্থক্য লক্ষ করেন। বাঁ দিকের তরুণ ইঁদুর প্রাণ বাঁচাতে মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে গর্তটি খুঁজে পেয়েছে। একই কাজ করতে বৃদ্ধ ইঁদুরের প্রায় চার গুণ সময় লেগেছে। তারপর গবেষকরা বৃদ্ধ ইঁদুরকে তরুণ ইঁদুরের রক্তের প্লাজমা দিলেন। তার ফলাফল ছিল বিস্ময়কর। বয়স্ক ইঁদুরের স্মৃতিশক্তির অনেক উন্নতি দেখা গেল। তরুণ ইঁদুরের মতোই দ্রুতগতিতে সেটি পালানোর গর্ত খুঁজে পেল।

ইঁদুরের মস্তিষ্কের মধ্যে তারুণ্যের সেই প্রভাব চাক্ষুষ দেখা গেছে। মস্তিষ্কে নতুন কোষ সৃষ্টি হয়েছে। বৃদ্ধ ইঁদুরের মধ্যে যেভাবে আবার তারুণ্য জাগিয়ে তোলা গেছে, মানুষের ক্ষেত্রেও কি তা সম্ভব? এক পরীক্ষামূলক উদ্যোগের আওতায় ১৮ জন বয়স্ক রোগীকে সপ্তাহে একবার কম বয়সী মানুষের প্লাজমা দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রত্যেকেরই প্রথম পর্যায়ের আলঝেইমার রয়েছে। এর ফলে স্মৃতিশক্তির উন্নতি হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করা হয়েছে। টোনি ভিস-কোরাই বলেন, ‘জামার বোতাম লাগানো বা দাঁত ব্রাশ করার মতো দৈনন্দিন জীবনযাত্রার নিয়মিত কার্যকলাপ এই রোগীদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। আমরা পরিমাপ করে দেখেছি যে কম বয়সী মানুষের রক্ত পেয়ে সত্যি উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছে। আমরা দেখাতে পেরেছি যে বয়সজনিত কারণে যেসব পরিবর্তন ঘটে, কম বয়সীদের রক্তের মাধ্যমে সেই প্রক্রিয়া বিপরীতমুখী করে তোলা সম্ভব। অর্থাৎ বার্ধক্যের প্রক্রিয়া অন্তত কিছুটা পেছনদিকে চালনা করা সম্ভব।’

গবেষকরা এবার আরো বড় পরিসরে পরীক্ষা চালিয়ে সেই ফল সম্পর্কে আরো নিশ্চিত হতে চান। পার্কিনসন রোগের ক্ষেত্রেও তাঁরা এরই মধ্যে এমন পরীক্ষা শুরু করেছেন। সূত্র : ডয়েচে ভেলে।