কোরআনে হাফেজ নজরুল কেন শিকলবন্দি ?

Published: 24 June 2021

বিশেষ সংবাদদাতা :


নজরুল ইসলাম। বয়স ৪০ বছর। অসচ্ছল ও দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া নজরুল পড়াশোনাতে ছিলেন অদম্য মেধাবী। শুধু তাই নয়, ছিলেন কোরআনে হাফেজও। তার সুমধুর কণ্ঠের আজান আর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ হতেন এলাকাবাসী। কিন্তু ২০ বছর ধরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নজরুলের বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার নতুন বান্দুরা গ্রামে। ২০ বছর ধরে শিকলবন্দি হয়ে জীবন যাপন করছেন তিনি।

এলাকাবাসী জানান, হঠাৎ করে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন নজরুল।

আসক্ত হন নেশায়। এক পর্যায়ে ২০০১ সালের দিকে তিনি পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। অসচ্ছল পরিবার চিকিৎসা করাতে না পারায় শিকলবন্দি এখন তার জীবন। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে নজরুল দ্বিতীয়। বাবা আয়নাল দেওয়ান ও মা নবীজা বেগম ছেলের চিকিৎসার জন্য চেষ্টা চালিয়ে গেছেন জীবনের শেষ অধ্যায় পর্যন্ত। তবে সুফল মেলেনি। তারা মৃত্যু বরণের পর মানসিক ভারসাম্যহীন নজরুলের দায়িত্ব পরে দুই বোনের ওপর। ইচ্ছা থাকার পরও আর্থিক সংকটে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না পরিবারটি।

সরজমিন দেখা যায়, ভাঙাচোরা টিনের চালার একটি ঘরের বারান্দায় শিকল পায়ে মাটিতে বসে আছেন নজরুল। শরীরে শুধু প্যান্ট ছাড়া আর কোনো কাপড় নেই। ঘরের ভেতরেই গোসল ও টয়লেটের ব্যবস্থা। তবে ঘরটি কাঁচা হওয়ায় গোসলের পর পুরো ঘর কাদা হয়ে যায়। এ ছাড়া ঘরটি ভাঙা হওয়ায় শীতকালে ঠা-ায় কষ্ট পেতে হয় তাকে। ২০ বছরেও নজরুলের কাছে পৌঁছেনি প্রতিবন্ধী ভাতা বা সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা।

তবে পরিবারের আশা, সুচিকিৎসা পেলে হয়তো নজরুল স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারে। এ জন্য তারা সরকার ও সমাজের দায়িত্বশীলদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।

নজরুলের বড় বোন কোহিনুর বেগম বলেন, অর্থের অভাবে পুরোপুরিভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে ভাইকে শিকলে বেঁধে রাখতে হচ্ছে। আমার মেয়ে আঁখি এখন তার মামার দেখাশোনা করে। সরকারিভাবে আমাদের কোনো ভাতাও দেয়া হয়নি।

তিনি সরকারি সহায়তা চান ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য। ছোট বোন শাহিনুর বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। বাবাও মইরা গেছে অনেক আগে। মা পাগল ভাইটারে নিয়া অনেক কষ্ট করেছে। মাইনসের বাড়ি বাড়ি কাজ কইরা ভাইয়ের চিকিৎসা করাইছে। দুই মাস আগে মা-ও মইরা গেল। ভাইরে কে দেখবে, ওর যে কী হইব আল্লায় জানে।