সিলেটে মা হত্যা করলেন শিশু কন্যাকে, বিচার চাইলেন স্বামীর!

Published: 9 February 2022

সিলেট অফিস :

সিলেটে নিজের দেড় বছর বয়সী শিশুকন্যাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন নাজমিন আক্তার (২৮) নামে এক নারী। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সিলেট শহরতলির শাহপরান নিপোবন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিশুর নাম সাবিহা।

জানা গেছে, বুধবার সকালে পারিবারিক কলহের জেরে নাজমিন তার মেয়ে সাবিহাকে বালিশচাপা দেন।

এ সময় সাবিহার চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। পরে সাবিহাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন নাজমিনের বোন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় নাজমিনও হাসপাতালে আসেন। পরে তিনি হাসপাতালে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করলে তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়। থানায় গণমাধ্যমের সামনে তিনি মেয়েকে হত্যার বিষয়টি স্বীকারও করেন।
পুলিশ জানায়, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কালিকৃষ্ণপুর এলাকার নাজমিনের সঙ্গে একই উপজেলার বলদি ইউনিয়নের সাব্বির আহমদের বিয়ে হয় ২০১৫ সালে। বিয়ের পর থেকে তারা শাহপরান নিপোবন এলাকায় বসবাস করে আসছেন। নাজমিন একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তার স্বামী সাব্বির কাতারপ্রবাসী। এর আগে নাজমিনের একটি বিয়ে হয়। সেই সংসারেও তার একটি সন্তান রয়েছে।

সিলেট কোতোয়ালি থানায় নাজমিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিয়ের পর আমার স্বামী বিদেশ চলে যায়। চার বছর সেখানে থাকা অবস্থায় সে আমার ভরণপোষণ দেয়নি। আমি স্কুলে শিক্ষকতা করে এবং টিউশনি করে চলেছি। পরে দেশে ফিরে আমাকে অনেক বুঝিয়ে আবার সংসার শুরু করে। তখন আমি গর্ভবতী হই। আমাকে গর্ভবতী রেখেই সে আবার কাতার চলে যায়। ’

ক্ষুব্ধ নাজমিন অভিযোগ করে বলেন, ‘বিদেশে গিয়ে সাব্বির অভিযোগ তোলে- আমার গর্ভের সন্তান তার নয়। আমি তখন ডিএনএ টেস্টের কথা বলি। কিন্তু সাব্বির ও তার পরিবার তা না করে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে থাকে। আল্লাহর কী রহমত! জন্মের পর দেখা গেল মেয়ের চেহারা অবিকল সাব্বিরের মতো। চোখ, ঠোঁট, মাথার চুল, হাসি সব একই রকম। ’

এরপর তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘সাব্বির ১৫ দিন আগে দেশে এসেছে। কিন্তু একবারও মেয়েকে দেখতে আসেনি। বরং আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করছে। এই দুঃখে আমি আমার মেয়েকে হত্যা করেছি। ’

মেয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি কাউকে ফাঁসাব না। সাব্বিরকেও ফাঁসাব না। তাকে ফাঁসালেও সে অল্প শাস্তিতে পার পেয়ে যাবে। তার বিচার আল্লাহ করবেন। আমি আমার মেয়েকে খুন করেছি। আমার ফাঁসি হোক। ’

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘পারিবারিক কলহ থেকেই এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। শিশুটির মা নাজমিন মেয়েকে হত্যার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন। যেহেতু হত্যা মামলার মতো ঘটনা, আমরা তাকে আটক করেছি। তার স্বামীকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে রেখেছি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসহ মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ’

তিনি আরো বলেন, ‘তারা যেহেতু শাহপরান থানা এলাকায় থাকেন। আমরা সেই থানাকেও অবগত করেছি। তারা আসছেন। ’