মাধবকুন্ডে পর্যটকের ঢল

Published: 5 May 2022

বড়লেখা প্রতিনিধি :


করোনার বিধিনিষেধের কারণে গেল দুই বছর ঈদের ছুটিতে প্রকৃতি কন্যা মাধবকুন্ডে পর্যটকদের আনাগোনা ছিল অনেকটাই কম। এতে পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী, ইজারাদারসহ সংশ্লিষ্টদের দুর্দিন গেছে। তবে এ চিত্র এখন পাল্টেছে। এবারের ঈদুল ফিতরের ছুটিতে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে এখন পর্যটকের ঢল নেমেছে। ফলে স্থানীয় ব্যবসায়ী, ইজারাদারসহ সকলের মুখে হাসি ফিরেছে।

ঈদের দিন মঙ্গলবার থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত মাধবকুন্ড জলপ্রপাত ও ইকোপার্কে প্রায় নয় থেকে দশ হাজার পর্যটক প্রবেশ করেছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঈদের দিন মঙ্গলবার মাধবকুন্ডে বেড়াতে আসা বেশির ভাগই বড়লেখা ও আশপাশের উপজেলার। ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকারও দর্শনার্থী ছিলেন। তবে বুধ ও বৃহস্পতিবার স্থানীয় লোকজন ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকেরা বেড়াতে আসেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাধবকুন্ড ইকোপার্কে প্রবেশের আগে সড়কে প্রায় এক কিলোমিটার যানজটের দীর্ঘ লাইন। সেখানে যানজট নিরসনে কাজ করছিলেন ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা। মাধবকুন্ড ইকোপার্ক এলাকায় পৌঁছার পর বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপচেপড়া ভিড়। বিভিন্ন পণ্যের দোকান, খাবার হোটেলগুলোতেও বেশি ভিড়। জলপ্রপাত এলাকায় দল বেধে জলে নেমে হইহুল্লোড় আর আনন্দ-উল্লাস করছিলেন নানা বয়সী মানুষ। কেউ কেউ ঝরনার জলে সাঁতার কাটছিলেন। আবার অনেকে পাড়ে দাঁড়িয়ে প্রায় ২০০ ফুট ওপর থেকে অবিরাম ঝরনার জলপতনের দৃশ্য ও আশপাশের সবুজ প্রকৃতি উপভোগ করছিলেন। কেউ আবার স্মৃতি হিসেবে ধরতে রাখতে এসব দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করছিলেন।

স্বজনদের নিয়ে এসেছেন বড়লেখার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের বাসিন্দা তরুণ কবি শাহরিয়ার। তিনি বলেন, মাধবকুন্ড আমাদের ইউনিয়নেই। তবে সব সময় আসা হয় না। ঈদ উপলক্ষে আসা। অনেক ভালো লাগছে। দূর-দুরান্ত থেকে লোকজন এসেছেন। সবাই আনন্দ করছে। আমাদের ভালো লাগছে। বর্ষার সময়। প্রকৃতিতে সবুজ ফিরেছে। তাই জলপ্রাপাত ও আশপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য, খাসিয়া পুঞ্জি এবং চা বাগান মানুষকে আকৃষ্ট করছে বেশি।

মাধবকুন্ড বেড়াতে আসা তরুণ ব্যবসায়ী সুলতান আহমদ বলেন, ঈদে অবসর থাকায় ঘুরতে এসেছি। ভালো লাগছে। তবে পর্যটকদের জন্য এখানকার ব্যবস্থাপনাটা আরও ভালো করার দরকার। তাহলে পর্যটক সংখ্যা আরও বাড়বে।

আলোকচিত্রী মো. রহিম উদ্দিন বলেন, করোনার সময় দুই বছর ঈদের সময় মাধবকুন্ড বন্ধ থাকায় খুব কষ্ট হয়েছিল। এবারের ঈদে কোনো বাধা নিষেধ নেই। তাই লোকজন আসছেন। এরকম লোকজন আসা অব্যাহত থাকলে আমরা ছবি তুলে রোজগার করতে পারব।

ব্যবসায়ী কবির হোসেন বলেন, করোনার সময় গত দুই বছরের ঈদে লোকজন ছিলেন না। আমাদের ব্যবসায় মন্দা ছিল। এরপর বিধিনিষেধ উঠলে মাধবকুন্ড খুলে দেওয়া হয়। পর্যটকও আসেন। কিছুটা স্বস্তি ফিরে আমাদের মাঝে। এবার ঈদের দিন থেকে অনেক লোকজন আসছেন। বিক্রিও ভালো হচ্ছে। গত দুই বছরে ঈদে বন্ধ থাকায় যে ক্ষতি হয়েছিল, আশা করছি কিছুটা পুষিয়ে উঠতে পারব।

মাধবকুন্ডে ট্যুরিস্ট পুলিশের দায়িত্বে থাকা উপ পরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ঈদের দিন থেকে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সামনের দিনগুলোতেও পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ তৎপর রয়েছে। এছাড়া আমরা মাধবকুন্ডে ভ্রমণে আসা কিশোরদের মাদক সেবন, ইভটিজিং ও অপরাধমূলক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য সচেতন করেছি।

বন বিভাগের বড়লেখা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস বৃহস্পতিবার (৫ মে) বলেন, মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত আনুমানিক নয় থেকে দশ হাজারের মতো পর্যটক ভেতরে প্রবেশ করেছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ছাড়াও বনবিভাগ এবং ইজারাদের লোকজন কাজ করছে।