কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে ভারতকে চাপ দেবে সুনাক
পোস্ট ডেস্ক :
ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক তার ভারতীয় এবং হিন্দু ঐতিহ্যকে গ্রহণ করেছেন তবে তার শিকড় রয়েছে বর্তমান পাকিস্তানে গুজরানওয়ালা শহরে। যেখানে তার পিতামহ বৃটেনের ঔপনিবেশিক শাসনের সময় থাকতেন। শহরটি ১৯৪৭ সালের ভারত -পাকিস্তান বিভাজনের সময় কিছু মারাত্মক দাঙ্গা দেখেছিল। আজ ভারতের সীমান্তবর্তী পূর্ব পাঞ্জাব প্রদেশের একটি শিল্প কেন্দ্র গুজরানওয়ালায় অনেকেই বলছেন, যুক্তরাজ্যের নতুন নেতা কাশ্মীর সংকটের সমাধানের জন্য ভূমিকা নিতে পারেন। এই কাশ্মীরই হলো দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে বিবাদের মূল বিষয়। সুনাকের দাদা রামদাস সুনাক এবং দাদী সুহাগ রানী ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত গুজরানওয়ালায় বসবাস করতেন। যদিও শহরের বেশিরভাগ বাসিন্দাদের আজ সেই দিনগুলির স্মৃতি মনে নেই। তবে তারা জানিয়েছেন যে, ৪২ বছর বয়সী রাজনীতিকের বিজয়ে তারা আনন্দিত বোধ করছেন। তারা আশা করেন যে, বৃটেনের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সময়কালে পাকিস্তান ও বৃটেনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নত হবে।
গুজরানওয়ালার এক কুস্তিগীর ওমর আলী বলেছেন, এটি একটি আনন্দের বিষয় যে যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রীর পূর্বপুরুষদের মধ্যে কেউ কেউ এখানে বসবাস করতেন। স্থানীয় এক কলেজের অধ্যাপক খুররম শেহজাদ আশা করেন, সুনাক শুধু পাকিস্তান ও বৃটেনের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করতেই কাজ করবেন না বরং পাকিস্তান ও ভারতের জন্য ‘সাফল্যের নতুন যুগ’ নিয়ে আসবেন।
শহর কর্তৃপক্ষ বলেছে যে, বিভাজন ঘিরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সময় বেশিরভাগ রেকর্ড ধ্বংস হয়ে গেছে, তাই সুনাকের দাদা ঠিক কোথায় থাকতেন তার কোন প্রমাণ নেই। যদিও স্থানীয়দের অনেকের বিশ্বাস মাছলি বাজারের দিকে তাঁরা একসময় থাকতেন। যেখানে শহরের বেশিরভাগ হিন্দু সম্প্রদায় একসময় বাস করত। একটি পরিত্যক্ত মন্দির এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাসের প্রমাণ হিসাবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। মাছলি বাজার নামটি এসেছে মাছের বাজার থেকে এবং এর আশেপাশের এলাকাটি সুস্বাদু খাবারের জন্য পরিচিত। প্রতি বছর খাদ্যপ্রেমীরা এই অঞ্চলে ভিড় জমান শুধু ভাজা মাছ খাবার জন্য নয়, অন্যান্য উপাদেয় খাবারেরও স্বাদ নিতে। মাছলি বাজারের এক পুরোনো বাসিন্দা হাফিজ উমর মনে করেন, সুনাকের নিয়োগ আমাদের জন্য এবং আমাদের শহরের জন্য একটি সম্মানের বিষয় এবং আমরা আশাবাদী যে তাঁর হাত ধরে আগামী দিনে পাকিস্তান ও বৃটেনের কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি হবে।
পাঞ্জাব সরকারের মুখপাত্র মুসাররাত জামশেদ চিমা বলছেন, ঋষি সুনাকের অগ্রাধিকার হবে ঘরে বসে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা তবে আমরা আশা করি তিনি কাশ্মীর সমস্যাও সমাধান করার চেষ্টা করবেন, যা পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বিভেদের প্রধান কারণ। পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে তিক্ত সম্পর্কের ইতিহাস রয়েছে এবং বিতর্কিত হিমালয় অঞ্চল নিয়ে তারা যুদ্ধেরও মুখোমুখি হয়েছে। কাশ্মীর ইস্যুতে সুনাক যদিও প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। এই সময়ে তাঁর প্রধান নজর রয়েছে দেশের লাখ লাখ লোককে কিভাবে অর্থনৈতিক সংকট থেকে বের করে আনা যায়। সেইসঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্কের দিকটিও মাথায় রাখছেন সুনাক। ১৯৬০-এর দশকে যুক্তরাজ্যে বসতি স্থাপনের আগে পাঞ্জাব থেকে, সুনাকের দাদা-দাদিরা ১৯৩০-এর শেষের দিকে পূর্ব আফ্রিকায় চলে যান। সুনাক ১৯৮০ সালে ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলে সাউদাম্পটনে জন্মগ্রহণ করেন। প্রতিবেশী ভারতে, যেখানে লক্ষাধিক মানুষ সোমবার দিওয়ালি উদযাপন করেছে, সেখানে অনেকেই সর্বকনিষ্ঠ বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুনাকের সাফল্যকে তাদের নিজেদের জয় বলে দাবি করেছেন। তারা ভারতের সঙ্গে সুনাকের আরেকটি সম্পর্কও তুলে ধরেন – সুনাক অক্ষতা মূর্তিকে বিয়ে করেছেন, যাঁর পিতা টেক জায়ান্ট ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা ভারতীয় বিলিয়নেয়ার এন.আর. নারায়ণ মূর্তি।
সুনাকের মনোনয়নের পর, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ টুইটারে তাঁকে শুভেচ্ছা জানান। শরীফ লেখেন, কনজারভেটিভ পার্টির নেতা এবং যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হওয়ার জন্য ঋষি সুনাককে অভিনন্দন। আমি উভয় দেশের স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং স্থায়ী- অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করতে তার সঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। মোদি বলেন, আপনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সাথে সাথে, আমি বিশ্বব্যাপী ইস্যুতে একসাথে কাজ করার এবং রোডম্যাপ ২০৩০ বাস্তবায়নের জন্য উন্মুখ। দীপাবলির বিশেষ শুভেচ্ছা, আমরা আমাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে একটি আধুনিক অংশীদারিত্বে রূপান্তরিত করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।