মৃতের সংখ্যা ২০,০০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে!
লিবিয়ায় শুধু লাশ আর লাশ
পোস্ট ডেস্ক :
এ এক ভয়াবহ দৃশ্য। চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ। যারা বেঁচে আছেন, স্বজন হারানোর বেদনায় গগণবিদারী চিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারি করে তুলছেন তারা। হাজার হাজার মানুষ এখনও নিখোঁজ। অনেক মানুষকে সমুদ্রের পানি টেনে নিয়েছে। কেউ জানেন না প্রিয়জন কোথায় আছেন। কেমন আছেন। এ অবস্থায় ডেরনা শহরের মেয়র বলেছেন, লিবিয়ায় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় নিহতের সংখ্যা ২০,০০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। ডেরনা শহরে হন্যে হয়ে মানুষ তার আপনজনকে খুঁজছে।
উদ্ধারকর্মীরা লাশ বহনের আরও ব্যাগ চেয়ে আবেদন করেছেন। যে পরিমাণে লাশের সন্ধান মিলছে, তা উদ্ধারের জন্য পর্যাপ্ত ব্যাগ নেই। এতে বলা হয়, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ওই শহরটি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে ভেসে যায়। বিভিন্ন ড্যাম ভেঙে পানি ঢোকে। বহুতল ভবন ধসে পড়ে। এর নিচে চাপা পড়ে বহু ঘুমন্ত পরিবার।
বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট তারেক আল খারাজ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে কমপক্ষে ৩৮৪০ জন নিহত হওয়ার রেকর্ড করা হয়েছে। তার মধ্যে দাফন করা হয়েছে ৩১৯০ জনকে। এর মধ্যে কমপক্ষে ৪০০ জন হলেন বিদেশি। তাদের বেশির ভাগই সুদান ও মিশনের নাগরিক। লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় সরকারের বেসামরিক বিমান চলাচলবিষয়ক মন্ত্রী হিশেম আবু চকিউত বলেছেন, কমপক্ষে ৫৩০০ মানুষ মারা যাওয়ার তথ্য তারা রেকর্ড করেছেন। তবে এই সংখ্যা বাড়তে পারে। এমনকি তা দ্বিগুনও হয়ে যেগে পারে।
ডেরনার মেয়র আবদুল মেনাম আল গাইতি আল এরাবিয়া টেলিভিশনকে বলেছেন, তার শহরে মৃতের সংখ্যা ১৮০০০ থেকে ২০,০০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। কারণ, বন্যায় মাটির সঙ্গে মিশে গেছে সব কিছু। শহরটির বাসিন্দা মাহমুদ আবুল করিম বলেছেন, তিনি মা ও ভাইকে হারিয়েছেন। ড্যাম ভেঙে যাওয়ার পর তাদেরকে তিনি উদ্ধার করতে সক্ষম হননি। তার মা তাকে বলেছিলেন, এটা কিছু না। সাধারণ ঝড়বৃষ্টি। কিন্তু এর তীব্রতা বাড়তে থাকে। এ সময় তার মা ও ভাই বাসা ছাড়তে সিদ্ধান্ত নেন। ততক্ষণে তাদেরকে বন্যার পানি ভাসিয়ে নিয়ে যায়। মাবরুকা এলমেসমারি নামের একজন সাংবাদিক বলেছেন তিনি মঙ্গলবার ডেরনা ছেড়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন কোনোমতে। শহরে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ নেই। জ্বালানি তেল নেই। পুরো শহর মাটিতে মিশে গেছে।
তিনি আরও বলেন, রাতে পরিবার নিয়ে বহু মানুষ এপার্টমেন্টে অবস্থান নিয়েছিল। তাদেরকে সেই অবস্থায় ভাসিয়ে নিয়েছে পানি। অনেক মানুষ ডেরনা থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারেনি। কারণ, রাস্তা বন্ধ হয়ে ছিল অথবা রাস্তা ধুয়ে মুছে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল।
সরকারি হিসাবে লিবিয়ায় এই ভয়াবহতায় মৃতের সংখ্যা ১০,০০০। জাতিসংঘের এজেন্সি ওসিএইচএর মতে, কমপক্ষে ৫০০০ মানুষ মারা গেছেন। সমুদ্রপাড়ে পড়ে ছিল মানুষের কাপড়চোপড়, বাচ্চাদের খেলনা, আসবাবপত্র, জুতা ও বিভিন্ন ব্যবহৃত জিনিসপত্র। পুরু কাদায় ঢেকে আছে রাস্তা। গাছগুলো উপড়ে পড়ে আছে। এখানে ওখানে পড়ে আছে নষ্ট গাড়ি।