ইসরাইলের পাল্টা হামলার হুমকি, পারমাণবিক স্থাপনা বন্ধ করল ইরান
পোস্ট ডেস্ক :
ইরানের নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পর বিশ্বের নজর এখন ইসরাইলের দিকে। তারা প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিলেও কীভাবে হামলার জবাব দেবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এমন পরিস্থিতিতে ইসরাইলের হামলার আশঙ্কায় নিজেদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো বন্ধ রেখেছে ইরান। আবার তেহরানের বিরুদ্ধে ইসরাইল ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে। খবর এনবিসি নিউজের।
শনিবার রাতে ইসরাইল লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)।
ইসরাইলের দাবি, এসব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের অধিকাংশই রুখে দেওয়া গেছে। ওই হামলার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করতে সোমবার দ্বিতীয় দফায় ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
সূত্র বলছে, ইরানে শিগগিরই পাল্টা হামলা চালানোর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে ইসরাইলের মন্ত্রিসভা।
তবে কখন ও কীভাবে হামলা হবে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে বিভক্তি। ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর প্রধান হেরজি হালেভিও শুধু এটুকু বলেছেন, ইরানের বিপুল ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার জবাব দেওয়া হবে। তবে এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।
ইসরাইল পাল্টা হামলা চালালে গাজা সংঘাতের কারণে আগে থেকেই সংকটে থাকা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে, এটাই স্বাভাবিক। এমন পরিস্থিতি এড়াতে ইসরাইলকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা। বিষয়টি মাথায় রেখে ইসরাইলও ‘সীমিত পরিসরে’ পাল্টা জবাব দিতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ইরানের ভূখণ্ডের বাইরে দেশটির সামরিক বাহিনী ও ইরানপন্থি বিভিন্ন গোষ্ঠীর ওপর হামলা চালাতে পারে ইসরাইল।
১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালায় ইসরাইল। এতে সেখানে থাকা ইরানের শীর্ষ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন।
ওই হামলার জবাবেই শনিবার হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে তেহরান। ইসরাইল এখন পাল্টা হামলা চালালে তার পরিণতি ভালো হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি।
আর দেশটির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাগেরি কানি বলেছেন, ইসরাইল হামলা চালালে এবার তার জবাব দিতে ১২ দিন অপেক্ষা করবে না তেহরান।
ফিলিস্তিনের গাজায় নৃশংসতা চালানোর জেরে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেকটা একঘরে হয়ে পড়েছিল ইসরাইল। দেশটির সমালোচনা করছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও। তবে ইরানের হামলার পর অনেক মিত্রকে আবার পাশে পেয়েছে ইসরাইল। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তেহরানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে তারা।
এ তৎপরতার অংশ হিসেবে ৩২ দেশকে চিঠি দিয়েছেন ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইল কাৎস। তাতে তিনি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
পারমাণবিক স্থাপনা বন্ধ
ইরান-ইসরাইল পাল্টাপাল্টি হামলায় উত্তেজনা যখন তুঙ্গে, তখন ‘নিরাপত্তার খাতিরে’ সাময়িক সময়ের জন্য পারমাণবিক স্থাপনাগুলো বন্ধ রেখেছে তেহরান। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের ফাঁকে সোমবার আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসির কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান— ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরাইলের হামলার ঝুঁকি আছে কিনা?
জবাবে আইএইএপ্রধান বলেন, এমন আশঙ্কার বিষয়ে সব সময়ই উদ্বেগ রয়েছে। রোববার আইএইএর পরিদর্শকদের ইরান সরকার জানিয়েছে, নিরাপত্তার খাতিরে দেশটির সব পারমাণবিক স্থাপনা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হবে। সোমবার স্থাপনাগুলো খুলে দেওয়ার কথা ছিল। তবে পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত সেখানে পরিদর্শকদের পাঠানো হবে না।
পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরাইলের হামলার আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। ১৯৮১ সালে ইরাকের ওসিরাক পারমাণবিক চুল্লিতে হামলা চালিয়েছিল ইসরাইল। তখন দেশটিতে ক্ষমতায় ছিলেন সাদ্দাম হোসেন। যুক্তরাষ্ট্র ওই হামলার বিরোধিতা করলেও তাতে কর্ণপাত করেনি ইসরাইল সরকার। আর ২০১৮ সালে ইসরাইল স্বীকার করেছে, ১১ বছর আগে সিরিয়ার একটি পারমাণবিক চুল্লিতে বিমান হামলা চালিয়েছিল তারা।
‘আন্তর্জাতিক আইন ভেঙেছে ইসরাইল’
১ এপ্রিল ইরানি কনস্যুলেটে হামলার মাধ্যমে ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইন ভেঙেছে বলে মনে করেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের নিয়োগ দেওয়া স্বাধীন বিশেষজ্ঞ দলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইনের বাইরে গিয়ে বিদেশের মাটিতে হত্যাকাণ্ড চালানো বিধিবহির্ভূত।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ইসরাইল ১ এপ্রিল ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, ইসরাইল এমন কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি, যাতে মনে হয়, তেহরান তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালাতে যাচ্ছিল অথবা হামলার জন্য কোনো অরাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী পাঠাচ্ছিল। ওই হামলা যে আইনগতভাবে বিধিবদ্ধ, তেমন প্রমাণও দিতে পারেনি। হামলার আগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকেও জানায়নি। অথচ বিষয়গুলো জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে, জাতিসংঘ সনদের ২(৪) অনুচ্ছেদের অধীন অন্য কোনো দেশে সামরিক শক্তি প্রয়োগ নিষিদ্ধ। তবে ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে তা লঙ্ঘন করেছে ইসরাইল সরকার।