এবার চিনি ছিনতাইয়ে জড়ালো জকিগঞ্জ ছাত্রলীগ !

Published: 15 June 2024

পোস্ট ডেস্ক :


শুল্ক ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত পথে দেদারাচ্ছে আসছে ভারতীয় চিনি। সেই চিনি চোরাচালানে সম্পৃক্ততা নিয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক এক সদস্য এপিপি এডভোকেট প্রবাল চৌধুরী পূজন। ২০২৩ সালে এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে তার উপর হামলা করেছিল সিলেট ছাত্রলীগের স্থানীয় শীর্ষ নেতারা। তার পর মামলা হয়, এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ৪ সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করে। কিন্তু এক সময় সবই ঠান্ডা হয়ে যায়। কিন্তু থেমে যায়নি চিনি চোরাকারবার। রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে ছাত্রলীগের অনেক নেতা সহ চোরাই সিন্ডিকেট সদস্যরা। কিন্তু চিনি চোরাকারবারের সব দায় এখন পড়েছে সিলেট ছাত্রলীগের উপর। সেকারনে টোটালি ইমেজ সংকটে ছাত্রলীগ সিলেট নেতৃত্ব। কেউ মুখ খুলছে না, কিন্তু মুখ খোলার বাকীও থাকছে না। এর মধ্যে চিনি কান্ডে বিয়ানীবাজার উপজেলার পর এবার জকিগঞ্জে চিনি ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ সভাপতি সুলতান আহমদসহ ৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। ঘটনাটি বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বিকেলে জকিগঞ্জের কালিগঞ্জ বাজার এলাকায় ঘটে। তবে জানাজানি হয় গতকাল শুক্রবার (১৪ জুন) রাতে। জানা গেছে এগুলো ভারত থেকে চোরাই পথে আসা চিনি। চিনি ছিনতাইকান্ডে ছাত্রলীগের নাম উঠা নিয়ে তুমুল চর্চা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পাওয়া গেছে এ ঘটনার একটি সিসি ফুটেজ। ৪ মিনিট এক সেকেন্ডের একটি ফুটেজে দেখা যায়- চিনি বোঝাই টমটম থেকে কয়েকজন মিলে চিনি ছিনতাই করছেন এবং চোরাকারবারীদের সঙ্গে ঘটনাটি নিয়ে হাতাহাতি হচ্ছে।’ তবে চিনি ছিনতাইয়ের ঘটনাটি অস্বীকার করছেন উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সুলতান আহমদ।
এ ব্যাপারে জকিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সুলতান আহমদ জানান, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। চিনি ছিনতাইর সাথে জড়িত নন তিনি।
তবে গত প্রায় দু’সপ্তাহ পূর্বে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সুলতান আহমদসহ তার অনুসারী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে জকিগঞ্জ-আট-গ্রাম সড়কের লামার-গ্রামে একটি টমটম থেকে চিনি ভারতীয় চিনি ছিনতাইয়ের অভিযোগ ওঠে। পরে ঘটনাস্থলে থানা পুলিশের এএসআই মশিউর রহমান উপস্থিত হলে ঘটনাটি সুরাহা হয়।
নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি জানান, কানাইঘাটের চোরাকারবারী আব্দুর রহিম ও ময়নুল হক বৃহস্পতিবার বিকেলে চারটি টমটম দিয়ে ভারতীয় চোরাই ৪০ বস্তা চিনি কালিগঞ্জ বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসার পথে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সুলতান আহমদ, সহসভাপতি জয়নন্দ অর্ণব, সহসভাপতি দুলাল আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুর রহমান, মানিকপুর ইউপি ছাত্রলীগ নেতা রুহেল আহমদ খাঁন, ছাত্রলীগ কর্মী তানভীর আহমদ, ছাত্রলীগ কর্মী জয়নাল আবেদিন, ছাত্রলীগ কর্মী শিপন আহমদ, ছাত্রলীগ কর্মী মামুন আহমদসহ ছাত্রলীগ সভাপতির অনুসারী কয়েকজন কর্মী কালিগঞ্জ বাজার এলাকা থেকে চোরাই চিনি বোঝাই চারটি টমটম আটকিয়ে চিনি ছিনতাই করে নিয়ে যান। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদে একটি বিচার বৈঠক ডাকা হয়। কিন্তু বিচার বৈঠকে ছাত্রলীগ নেতারা উপস্থিত হয়ে বিচার না মেনে উল্টো হুমকি ধমকি দিয়ে চলে যান বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে মানিকপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর রায়হান জানান, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সুলতান আহমদ ও সহসভাপতি জয়নন্দ অর্ণব চিনি ছিনতাই করে নিয়েছেন স্বীকার করলেও বিচার না মেনে উল্টো তাদেরকে পারলে কেউ কিছু করে ফেলতো এই কথা বলে তারা চলে যায়। বিষয়টি জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজকে জানিয়েছেন তিনি।
চোরাই চিনির মালিক কানাইঘাটের আব্দুর রহিম জানান, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সুলতান আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ৪০ বস্তা চিনি ছিনতাই করা হয়েছে। এ সময় মারধরে ঘটনা ঘটে। তবে এখন ছিনতাই হওয়া চিনির বস্তাগুলো ফেরত দেওয়ার কথা জানিয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সুলতান আহমদ। আজ শনিবার রাতে কালিগঞ্জ বাজারে গিয়ে তারা সুলতান আহমদের কাছ থেকে ফেরত আনবেন।
জকিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জাবেদ মাসুদ বলেন, বিষয়টি জানেন না তিনি। এ ঘটনায় পুলিশের কাছে কেউ কোন অভিযোগ করেনি।
এ প্রসঙ্গে জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লোকমান উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, চিনি ছিনতাইর ঘটনাটি তিনিও শুনেছেন। ছাত্রলীগের কেউ পদপদবী নিয়ে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়ালে তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা। প্রসঙ্গত, চিনিকান্ডে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের দুই ইউনিট কমিটি বিলুপ্ত করেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রিয় সংসদ। ইউনিট দুটি হলো- বিয়ানীবাজার উপজেলা ও বিয়ানীবাজার পৌর শাখা। কমিটি গঠনের ৩ মাসের মাথায় এঘটনা ঘটলো। তবে এ ঘটনায় ছাত্রলীগের একাংশ মিষ্টি বিতরণ সহ আনন্দ মিছিল করে দাবী জানিয়েছেন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বাতিল ও সেক্রেটারী রাহেল সিরাজকে বহিস্কারের। গতকাল সোমবার (১৪ জুন) বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক প্যাডের বিজ্ঞপ্তিতে বিলুপ্ত করে সিলেটের এই দুটি ইউনিটকে।