কে ফ্রান্স শাসন করবে ?

Published: 8 July 2024

পোস্ট ডেস্ক :


ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ একটি স্ন্যাপ ইলেকশন ডেকে ফরাসি ভোটারদের সামনে স্বচ্ছতার দাবি জানান। পরিবর্তে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলাকে আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট। ৭ জুলাই ভোটের দ্বিতীয় রাউন্ডের এক্সিট পোল অনুসারে, সবাইকে অবাক করে শীর্ষস্থান দখল করেছে বামপন্থি জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি), তবে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এক সপ্তাহ আগে অনুষ্ঠিত প্রথম পর্বের ভোটে কট্টর ডানপন্থি ন্যাশনাল র‌্যালি (আরএন) ঐতিহাসিক জয় পেলেও এ পর্বে তারা তৃতীয় হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। কিন্তু কে সরকার গড়তে চলেছে তা এখন অনিশ্চিত – বিশেষ করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর তাৎক্ষণিক পদত্যাগের প্রস্তাবের পর। এসব দেখে যা নিশ্চিত করে বলা যায় তা হল ‘সংসদীয় অচলাবস্থা’ ।

এই নির্বাচনে ভোটাররা স্পষ্টতই চিনতে পেরেছেন যে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে । বিকাল ৫টা নাগাদ, অনেক শহরে ভোট বন্ধ হওয়ার প্রায় তিন ঘণ্টা আগে, ৬০ শতাংশ নিবন্ধিত ভোটার দ্বিতীয় রাউন্ডের রান-অফ ভোটে তাদের ব্যালট দিয়েছিলেন। এক সপ্তাহ আগে প্রথম রাউন্ডের চেয়ে সামান্য বেশি। একইসঙ্গে ৩০ বছরের বেশি সময়ে হওয়া যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে বেশি।৬-৯জুন ইউরোপীয় নির্বাচনে মেরিন লে পেনের কট্টর-ডানপন্থী আরএন পার্টির প্রতি সমর্থনের ঢেউ দেখে – ম্যাক্রোঁ জুনে স্ন্যাপ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। আরএন গত সপ্তাহে প্রথম রাউন্ডের ভোটে নেতৃত্ব দিয়েছিল, যখন চারদলীয় বামপন্থী জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি) দ্বিতীয় এবং ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থী জোট তৃতীয় স্থানে ছিল ।

তবুও ৩০০ টিরও বেশি জেলা প্রাথমিকভাবে ত্রিমুখী রেস সহ দ্বিতীয় রাউন্ডে গিয়েছিল – অর্থাৎ এনএফপি বা ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থী জোটের ২০০ টিরও বেশি প্রার্থী কৌশলগতভাবে ভোট বিভক্ত হওয়া এড়াতে রেস থেকে বেরিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয় । এই কৌশলটি সফল হয়েছিল: যখন ৭জুলাই এক্সিট পোল প্রকাশ করা হয়েছিল, তখন দেখা যায় আরএন প্রায় ১৫০টি আসন পেয়েছে, যা ২৮৯টি আসনের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে অনেক কম
ইতিমধ্যে, পোলস্টার Ipfop অনুযায়ী, বামপন্থী এনএফপি ২১৫টি আসন নিয়ে প্রথম স্থানে এসেছে, এবং ম্যাক্রোঁর এনসেম্বল ১৮০ টির মতো আসন জিতে নেয়। যদিও চূড়ান্ত ফলাফলটি বদলাবে তা নিশ্চিত, সম্ভবত কোনও ব্লকের কমান্ডিং সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে না।

জিন-লুক মেলেনচন, লা ফ্রান্স ইনসুমিস (এলএফআই)-এর নেতা,এনএফপি-র একটি নেতৃস্থানীয় দল, ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে যে নির্বাচনের ফলাফল বিভক্ত হবে। এক্সিট পোলগুলির পরে একটি সাক্ষাৎকারে, তিনি বলেছিলেন যে ম্যাক্রোঁকে এনএফপিকে সরকার গঠনের প্রথম সুযোগ দেওয়া উচিত। তিনি যোগ করেছেন যে “প্রেসিডেন্ট এবং তার জোটের পরাজয় নিশ্চিত হয়েছে”। তবুও Ipfop-এর প্রাথমিক ভোটে স্বতন্ত্র দলগুলির দ্বারা জয়ী আসনগুলির ভাঙ্গন দেখায় যে উভয় এলএফআই ম্যাক্রোঁর দলের চেয়ে কম আসন পেয়েছে। গণনা অব্যাহত থাকায়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পরবর্তী সরকারের নেতৃত্বে কাকে বেছে নেওয়া হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, গ্যাব্রিয়েল আটাল, যিনি ম্যাক্রোঁর এনসেম্বল থেকে এসেছেন, রবিবার রাতে ঘোষণা করেছেন যে তার দল সম্পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, সেইসঙ্গে তিনি জানান ” আমি প্রেসিডেন্টের কাছে আমার পদত্যাগপত্র হস্তান্তর করব”। তবে নতুন সরকার গঠনসংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের কথা মাথায় রেখে প্রেসিডেন্ট তা এখনই গ্রহণ করবেন কি না, নিশ্চিত নয়। অবশ্য গ্যাব্রিয়েল আটাল বলেছেন যে তিনি তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকায় থাকবেন। সাধারণত কোন দল সংসদে সর্বাধিক আসন লাভ করে তার ভিত্তিতে ফ্রান্সে, প্রেসিডেন্টই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করেন । কোনো দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায়, ম্যাক্রোঁ “সমঝোতার ” পথ বেছে নিতে পারেন।জোট গঠনের জন্য বিভিন্ন দলের এমপিদের নিজের দিকে টানতে পারেন। কিন্তু বাম ও কেন্দ্রবাদীদের মধ্যে গভীর মতাদর্শগত ও নীতিগত বিভাজনের কারণে এই ধরনের চুক্তি অসম্ভব হতে পারে।

যদিও ইউরোপ জুড়ে বাম রাজনীতিবিদরা ফলাফল উদযাপন করছেন তবে রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা ম্যাক্রোঁর স্ন্যাপ নির্বাচনের সিদ্ধান্তকে বোকামি ছাড়া অন্য কিছু দেখছেন না । যদিও তার উদ্দেশ্য ছিল ফরাসি ভোটারদের নিজের দিকে টেনে কঠোর-ডান এবং কট্টর-বামদের হটানো তবে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।পূর্বে বিপর্যস্ত বাম জোট পুনরুজ্জীবিত হয়েছে; লে পেনের দল হয়তো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি তবে তারা আগের আসনের দ্বিগুণ জিতেছে। ফ্রান্সের ভবিষ্যত নিয়ে জল্পনা উস্কে দিয়েছে।

সূত্র : নিউ স্টেটসম্যান