পরিমার্জন করে আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়া হবে : শিক্ষা উপদেষ্টা
বিশেষ সংবাদদাতা :
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, সবক্ষেত্রে নতুন শিক্ষাক্রম উপযোগী এবং বাস্তবায়নযোগ্য নয়। এক্ষেত্রে পরিমার্জন করে আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়া হবে। তবে যেসকল শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমে ঢুকে পড়েছে তাদের বিপাকে ফেলে এটি করা হবে না।
রোববার ( ১৮ আগস্ট) সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিজ কার্যালয়ে এ কথা জানান তিনি।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছিল ২০২১ সালে। এত দিন ধরে মাঠ পর্যায়ে সব জায়গায় এগুলো নিয়ে অনেক গবেষণা-তথ্য তৈরি হয়েছে; সেগুলো আমার কাছে আছে। শিক্ষাক্রম তো উন্নত করতে হবে, সময় বদলাচ্ছে। কিন্তু যেটা তৈরি করা হয়েছে সেটা বাস্তবায়ন খুবই কঠিন বর্তমান পর্যায়ে। আমাদের যে শিক্ষক আছে তা দিয়ে। এটা আমাদের দেশের জন্য যে সর্বক্ষেত্রে উপযোগী সেটাও মনে করছি না। কাজেই আমরা এই শিক্ষা কার্যক্রমকে খুব সম্ভবত এটা কার্যকর করা সম্ভব বলে আমি দেখছি না। এটা বাস্তবায়ন খুব ভালোভাবে হচ্ছে না। বিশেষ করে মূল্যায়ন পর্যায়ে। কিন্তু যাই আমরা করি না কেন, সাময়িক সমের জন্য আমরা হয়তো আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করবো। কিন্তু কীভাবে করবো, যারা ইতোমধ্যে ঢুকে গেছে তাদের অস্বস্তিতে ফেলবো না।
তিনি বলেন, আমরা আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাব ধাপে ধাপে। তবে যারা নতুন শিক্ষাক্রমে ঢুকে গেছে তাদের অস্বস্তিতে ফেলবো না। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের যাতে অস্বস্তিবোধ না হয়। যাতে ডিসকন্টিনিউয়িটি না হয়। আমরা কাজটা শুরু করবো। হয়তো শেষ করতে পারবো না। যে শিক্ষার্থী এই শিক্ষাক্রমে ঢুকে পড়েছে তার যেন কোনো অস্বস্তি না হয়। কোনো পরিবর্তনের মুখে না পড়ে। আমরা সেই চেষ্টা নিশ্চিত করবো।
নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল হবে কিনা- প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি বলছি না বাতিল হবে। আমরা আগের যে শিক্ষাক্রম সেখানে ফিরে যাবো ধাপে ধাপে। এটা যেহেতু বাস্তবায়ন যোগ্য না। যারা এখন পড়ছে, ভিতরে ঢুকে গেছে, সাত মাস ধরে পড়ছে, তাদের অস্বস্তিতে ফেলবো না। আমি বলছি না এটা বাতিল করে দেব। যারা যে ক্লাসে আছে তাদের কোনো অস্বস্তি হবে না।
তিনি বলেন, বর্তমান শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন যোগ্য না, বিশেষ করে মূল্যায়ন পদ্ধতির দিক থেকে। সেটা কীভাবে সংশোধন করা যাবে। আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে তারপরে ট্রানজিশনটা কীভাবে পার করবো সেটা জটিল বিষয়। কিন্তু তাদের যাতে কোনো অস্বস্তি না হয়। আমরা এমনভাবে ফিরো যাব না যাতে মিল না থাকে। নতুন করে শিক্ষা পদ্ধতি ঢেলে সাজাতে সময় লাগবে। যতদূর পারি আমরা আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাব। এমননভাবে যাব যাতে করে ডিসকনিউনিটি না হয় এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় অস্বস্তি না হয়।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, স্কুল-কলেজ বোর্ডকে দলীয়করণ করা হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষক ও ছাত্র সম্পর্ক রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। রাজনীতিকরণ ও দুর্নীতির কারণেই বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থা বেহাল।
তিনি বলেন, ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবক শূন্য রয়েছে। যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে এসব শূণ্য পদ পূরণ করা হবে। এ সময় শিক্ষাঙ্গনকে দখলদারিত্ব ও রাজনীতিমুক্ত করার কথাও জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা কঠিন। তাই আগের পদ্ধতিতে ফেরার চেষ্টা করব। তবে আগেরটাতে ফিরে গেলেও আমরা এমনভাবে ফিরে যাব না যে বর্তমানটার সঙ্গে মিল থাকবে না। আগেরটায় ফিরে গেলে তারা যা পড়ে ফেলেছে তার সঙ্গে মিল রাখতে হবে, সেজন্য অতিদ্রুত কিছু কাজ করতে হবে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এসময় তিনি বলেন, অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকশূন্য। যত দ্রুত সম্ভব আমাদের এগুলো চালু করতে হবে। তবে এটা একটা সুযোগও। আমরা চাইব সত্যিকার শিক্ষানুরাগী এবং প্রশাসনিক ও শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে তাদেরকে নিয়ে আসার।
এই উপদেষ্টা বলেন, এখানেই এতদিন ধরে আমাদের বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হয়েছে। অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে পদগুলো শূন্য। এটা পূরণ করা খুবই চ্যালেঞ্জিং। তবে আমরা চাইব বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অতিদ্রুত পূরণ করতে। ছাত্র ও শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন ভালো পরিবেশ থাকে। বিশৃঙ্খলা না করে শৃঙ্খলা থাকে। নিয়ম মাফিক যেন হয়, দখলদারিত্ব যেন না হয়। সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরিতে সবার সহযোগিতা দরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কমিটিগুলোতে দখল দারিত্ব না হয়। এক দল সরিয়ে অন্য দল আসবে, সেটা চাই না। কী করা যায়, সেটা চিন্তা করব।
তিনি বলেন, শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন দিয়ে নয়, অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে যদি মানবসম্পদের উন্নয়ন না হয়, তাহলে কোনো দেশ উন্নত হয় না। সেক্ষেত্রে অর্থনীতি ও শিক্ষার মধ্যে যোগসূত্র আনার চেষ্টা করব।