বাংলাদেশের আর্থিক খাত উন্নয়নে সহায়তা করতে চায় যুক্তরাজ্য : অর্থ উপদেষ্টা
বিশেষ সংবাদদাতা :
অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে পুঁজিবাজারের পাশাপাশি ব্যাংকিং ও রাজস্ব খাত সংস্কারে সহায়তা করতে তাদের গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) নিজ দপ্তরে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত সারা কুকের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য ব্যাংকিং খাতের সংস্কার, রাজস্ব সংস্কার এবং পুঁজিবাজার সংস্কারের মতো সংস্কারে বাংলাদেশকে সাহায্য করতে ইচ্ছুক। এগুলি আমাদের জন্যও খুব তাৎক্ষণিক উদ্বেগ। কারণ, আমরা যদি সেসব সংস্কার না করি তাহলে এটা আমাদের জন্য কঠিন হবে।
উপদেষ্টা বলেন, তারা দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আমরা চাই ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি হোক। যুক্তরাজ্য সরকার অতীতে খুব সহায়ক ছিল এবং আমি আশা করি, আগামী দিনে তারা সহায়ক হবে। আমরা তাদের সাহায্য এবং সহযোগিতার জন্য উন্মুখ।
উভয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা করেছেন জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাজ্য মূলত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করছে। ‘আমরা এগুলোও চালিয়ে যাব। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটেনের বড় বড় ব্যবসায়ীরা এখানে বিনিয়োগ করেছে।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, তিনি বাংলাদেশ থেকে আমদানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে বলেছেন, কারণ বাংলাদেশ মূলত যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় দেশগুলোতে আরএমজি আইটেম রপ্তানি করে।
তিনি বলেন, আরও বেশি বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে হবে। এর জন্য শর্ত হলো ব্যবসার পরিবেশ, ব্যবসা করার সহজতা মানে আমাদের ব্যবসা করার পরিবেশ ঠিক করতে হবে, অন্যথায় বেসরকারি খাত আসবে না।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, দেশে ব্যবসায়ীক পরিবেশ উন্নত হলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। আর এই পরিবেশ তৈরিতে সংস্কার প্রয়োজন।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে যুক্তরাজ্য কী ধরনের সহায়তা করবে, জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আজকের বৈঠকে এ বিষয়ে কথা হয়নি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এটা নিয়ে কাজ করছে।
তিনি বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেট ও ট্রেড পলিসি পুনর্গঠনে যুক্তরাজ্য আমাদের সহায়তা করবে। এই বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। তার আগে আমরা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করবো। যুক্তরাজ্য জি-টু-জি ভিত্তিতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করবে। সে দেশের বড় বড় বাণিজ্য খাত আমাদের এখানে কাজ করবে। শিক্ষা, নারী উন্নয়ন ও শিশু সুরক্ষায় কাজ করবে ইউকে।
আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে উল্লেখ করে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে অত্যন্ত শক্তিশালী অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্পর্ক সম্প্রসারণ করতে খুবই আগ্রহী। আমরা আলোচনা করেছি কীভাবে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কারকে সমর্থন করতে পারে। কীভাবে আমরা অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য বিশেষজ্ঞদের একত্রিত করতে একসঙ্গে কাজ করতে পারি এবং কীভাবে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বাড়াতে পারি, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
যুক্তরাজ্য থেকে আরও এফডিআই আনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের অত্যন্ত শক্তিশালী অংশীদারত্ব রয়েছে। আমাদের একটি খুব শক্তিশালী এবং বিনিয়োগের পরিবেশ রয়েছে। অবশ্যই আমরা বাংলাদেশে আরও এফডিআই দেখতে চাই।
সারাহ কুক বলেন, কীভাবে আমরা বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি করতে পারি এবং আমাদের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক জোরদার করতে পারি, সে বিষয়ে আমি উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করেছি।