পুরানো জঞ্জাল সরাতে নতুনদের আগমনের বিকল্প নেই : নূর
বিশেষ সংবাদদাতা :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি এবং গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি পুরোনো জঞ্জাল সরাতে নতুনদের আগমনের কোনো বিকল্প নেই। আজকে যে তরুণরা বিপ্লব ঘটিয়েছে, গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছে এই তরুণরাই পারবে আগামীর বাংলাদেশকে সঠিক পথে পারিচালিত করতে।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন পাওয়ার পর ইসি ভবনে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গণঅধিকার পরিষদ হচ্ছে নতুন প্রজন্মের, নতুনদের রাজনৈতিক দল। আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে তারুণকে নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। দল নয়, মত নয়, সবার আগে বাংলাদেশ, সবাই মিলে গড়বো দেশ। জাতীয় স্বার্থ গণঅধিকার পরিষদের অন্যতম প্রাধান্য।
নুরুল হক নুর বলেন, আগে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ চাঁদাবাজি করতো, এখন নব্য চাঁদাবাজ সেটআপ বসে গেছে। এরাও আওয়ামী লীগের মতো চাঁদাবাজি করছে। এদের সরাতে হবে। এদের অস্তিত্ব থাকলে রাষ্ট্র সংস্কার করা যাবে না।
তিনি বলেন, আগে আওয়ামী লীগ যেভাবে লুটপাট করে খেতো, চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি করে খেতো, এখন কিন্তু আরেকটা নব্য দখলদার গোষ্ঠী সেই জায়গায় স্যাটেল হয়ে গেছে। সেটা পরিবহন খাত যদি দেখেন, আগে যেখানে শাজাহান খান, এনায়েত উল্লাহরা ছিল, সেখানে কিন্তু আরেকটা সেটআপ বসে গেছে। শুধু পরিবহন খাতে না বিভিন্ন জায়গায়..।
তিনি আরো বলেন, সরকারের ৮২ জন সচিব রয়েছেন। সবাই ফ্যাসিবাদের দালাল ছিলেন না। কাজেই ঢালাওভাবে ট্যাগ দেবেন না। যাদের স্পেসিফিক অপরাধ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো ব্যবসায়ী যদি আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় অর্থ পাচার, দুর্নীতি করে থাকে, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। তাই বলে কারও অধিকার নেই কারখানায় আগুন দেওয়ার বা দখল করার। অন্যায়ভাবে ভুক্তভোগী হলে তাদের পাশে থাকবো।
নুর বলেন, পুলিশ এখনো স্বাভাবিক কাজে ফেরেনি। দ্রুত পুলিশকে স্বাভাবিক কাজে ফিরিয়ে জনমনে স্বস্তি দিতে হবে। দেশের অর্থনীতি সচল করতে হবে। একজন আওয়ামী লীগ করতে পারে সে যদি কোনো অপরাধ করে তবেই তার দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তি হবে। তাই বলে আওয়ামী লীগের মিল ফ্যাক্টরি জ্বালিয়ে দেওয়া কারোর অধিকার নেই। সবাইকে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ভারতের সমালোচনা করে নুর বলেন, শেখ হাসিনার সরকার ভারতের পুতুল সরকার ছিল। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর সহযোগিতায় হাসিনা দেশে গণহত্যা চালাতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশকে হাসিনা ভারতের পুতুল রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। আমরা বলতে চাই, ভারতের দাদাগিরি মানবো না। তবে ভারত যদি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে চায় তবে আমরা রাজি আছি। ভারতকে বলবো, কোনো নির্দিষ্ট দল নয়, দেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলুন, তাহলে আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি।
ভারতের ভিসা বাতিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা শুনেছি ভারত নাকি আমাদের কিছু নেতার ভিসা বাতিল করেছে। আমার সঙ্গে ছবি তোলার কারণে অভিনেত্রী বাঁধনকে ভিসা দেওয়া হয়নি। ভারতকে বলবো ভ্রান্তনীতি পরিহার করতে হবে।
গণ অধিকার পরিষদ নিবন্ধন পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তথ্যের যে ঘাটতি ছিল, সেটার পূর্ণতা সাপেক্ষে আজকে আমাদের নিবন্ধন দিয়েছে, এজন্য আমরা ইসিকে ধন্যবাদ জানাই। এই নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল। এখনো আছে। ২০২৪ সালের ভুয়া সংসদ নির্বাচনে সরকারের সহযোগী ছিল। গত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদ যেভাবে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে দখল করেছে, যেখানে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থেকে কাজ করাটা অনেকের জন্য অসম্ভব ছিল এটা সত্য। তার মধ্যেও নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাদের স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্য ছিল। তারা চাইলে স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। গত বছর ইসিতে ৯২টি দল আবেদন করে। এবি পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদ সমস্ত শর্ত পূরণ করায় ইসি তাদের নিবন্ধন দেওয়ার বিবেচনায় রাখে। কিন্তু তৎকালীন সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা দল দু’টিকে নিবন্ধন দিতে নিষেধ করায় নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন দেয়নি।
নুরুল হক আরও বলেন, সে সময় নিবন্ধন না দিতে নানা অজুহাত দেখিয়েছিল। পরে ইসি তথ্যের যথার্থতা যাচাইয়ে তদন্ত করে। সেই তদন্ত কমিটি যথার্থতা পায়। গত বছর এই প্রতিবেদন তদন্ত কমিটি দেওয়ার পরও নিবন্ধন দেওয়া হয় নাই। এরপর পুনর্বিবেচনার জন্য সরকার পরিবর্তনের পর ফের আবেদন করি। আমরা কোর্টে না গিয়ে তাদের কাছেই আবেদন জানাই। তারা সব বিবেচনা করে নিবন্ধন দেয়। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই।
নুর বলেন, এই গণ অধিকার পরিষদই ২০১৮ সালে সরকার পতনের আন্দোলনের বীজ রোপণ করে দিয়েছিল। সে সময় আংশিক দাবি পূরণ হওয়ায় রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য গণ অধিকার পরিষদ নামে দল গঠন করি। মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার থাকি। তরুণরাই পারবে আগামীর বাংলাদেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে। নতুন এই দল গণ অধিকার পরিষদ হচ্ছে নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক দল। এই দল যেন শক্তিশালী না হতো পারে, সেজন্য নানা প্রোপাগান্ডা হয়েছে। এখনো হচ্ছে এবং হবে। কিন্তু আমরা বলতে চাই শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদকে মোকাবিলা করেই কিন্তু আজকে আমরা আমাদের অবস্থান তৈরি করেছি। আমরা সবার সহযোগিতা চাই। এখানে কেবল বয়সের তরুণ নয়, প্রতিবাদী তারুণ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।
ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই, আজ নিবন্ধন পেয়েছি, সঠিক নাম জিওপি। এই কমিশন ২০২৪ সালে ভুয়া নির্বাচনের সহযোগী ছিল। কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, তারা চাইলে নিবন্ধন দিতে পারতো। কিন্তু তৎকালীন সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে আমাদের নিবন্ধন দেয়নি। আমাকে ট্রাক প্রতীক দেওয়া হয়েছে। প্রতীক সব হাস্যকর, যেমন- খাট, সোফা। যাই হোক, ট্রাক পেয়েছি, এই ট্রাক নিয়ে উপজেলা পর্যায়ে সফরে বের হবো। গতবার নিবন্ধন না দেওয়ার জন্য কমিশন নানান অজুহাত দেখায়। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পরে সবকিছু সংস্কার হচ্ছে।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, সব শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ায় নিবন্ধন পায়নি। তবে আজকে পেয়েছি। ২০২৪ সালে অবৈধ নির্বাচন হয়েছে। আজকে নিবন্ধন পাওয়ায় জনগণের বিজয় হয়েছে। আমরা আজকে সঠিক রায় পেয়েছি।