কানাইঘাটে সমাহিত হারিছ চৌধুরী

Published: 30 December 2024

পোস্ট ডেস্ক :


অন্তিম ইচ্ছা পূরণ করা হলো প্রয়াত আবুল হারিছ চৌধুরীর। কানাইঘাটে নিজের প্রতিষ্ঠিত এতিমখানার আঙিনায় চির সমাহিত হলেন তিনি। তার আগে এই মুক্তিযোদ্ধাকে দেয়া হলো গার্ড অব অনার। ২০২১ সালের ৩রা নভেম্বর অনেকটা নীরবে সাভারের একটি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে কয়েকজন স্বজনের উপস্থিতিতে তার লাশ দাফন করা হয়েছিল। এরপর থেকে মৃত্যুর খবর অজানাই ছিল। মানবজমিন-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর অনুসন্ধানী রিপোর্টে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর প্রকাশ হয়েছিল। তবুও তখনকার সরকারের গোয়েন্দা তরফ থেকে চাপ আর চাপ। মানবজমিনে প্রকাশিত খবরটি মিথ্যা প্রমাণের চেষ্টা করা হয়। কঠিন পরিস্থিতিতে বিচলিত ছিলেন হারিছকন্যা ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরীও। তবে সামিরা জানিয়ে দিয়েছিলেন তার পিতার শেষ ইচ্ছা ছিল কানাইঘাটে নিজ এলাকায় যেন তার কবর হয়। মৃত্যুর সময় স্বজনদের সাড়া না পাওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে সেটি করা যায়নি। ৫ই আগস্টের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর এলো সেই সুযোগ। হারিছ চৌধুরীর মরদেহ নিজ বাড়িতে আনতে উদ্যোগ নেন সামিরা। ফলে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল পরিবারকে। আদালতের নির্দেশে ডিএনএ পরীক্ষা করার পর নিশ্চিত হওয়া যায় মাহমুদুর রহমান নামের মৃত ব্যক্তিই হচ্ছেন আবুল হারিছ চৌধুরী। পরে আদালতের নির্দেশেই হারিছ চৌধুরীর মরদেহ কানাইঘাটে পুনঃদাফনের প্রস্তুতি নেয়া হয়। রোববার দুপুরে ঢাকা থেকে এম্বুলেন্সযোগে সিলেট সার্কিট হাউজে নিয়ে আসা হয় হারিছ চৌধুরী মরদেহ। জোহরের নামাজের পর নেয়া হয় সিলেটের ঐতিহাসিক শাহী ঈদগাহ ময়দানে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে হারিছ চৌধুরীর কফিনকে শেষ বিদায় জানান। দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী ও হারিছকন্যা ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী। কফিনকে সামনে রেখে স্মৃতিচারণ করেন রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী। তিনি বলেন- হারিছ চৌধুরী একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তার প্রখর মেধার কারণে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব পর্যন্ত হয়েছিলেন। তার কারণেই আমি পরিচিতি পাই। তার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে পেরে আমরা সবাই মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। হারিছ চৌধুরী আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন তার কর্মের মাধ্যমে। বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী। তিনি জানান- তার পিতার শেষ ইচ্ছা তিনি ওই সময় পূরণ করতে পারেননি। তিনি সিলেটের মানুষ, কানাইঘাটের মানুষকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। কানাইঘাটের মাটিতেই তিনি সমাহিত হতে চেয়েছিলেন। সেই ইচ্ছা আজ পূরণ হয়েছে। কিন্তু তার রেখে যাওয়া অনেক কাজ বাকি রয়েছে। তার পিতার স্বপ্ন পূরণে তিনি কাজ করবেন বলে জানান। এদিকে- সিলেটের শাহী ঈদগাহ ময়দানে আয়োজিত দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই, দরগাহে হযরত শাহজালাল (রহ.) মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা হুজায়ফা হোসাইন চৌধুরী। এ ছাড়া সিলেট বিএনপি’র নেতাদের মধ্যে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, মহানগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক এমদাদ আহমদ চৌধুরী, জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সহ-ক্ষুদ্র ও ঋণ বিষয়ক সম্পাদক এবং সিলেট জেলা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, সিলেট মহানগর বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি সালেহ আহমদ খসরু ও মহানগর বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, বিএনপি নেতা ও সিলেট এলজিইডি কন্ট্রাক্টর এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালামও উপস্থিত ছিলেন। সিলেট বিএনপি’র নেতারাও এ সময় বক্তৃতা করতে হারিছ চৌধুরীর স্মৃতিচারণ করেন। এ সময় হারিছ চৌধুরীকে তারা সিলেটের একজন গর্বিত সন্তান বলেও দাবি করেন। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী জানিয়েছেন- বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের কারণে কঠিন সময় কাটিয়েছেন মরহুম আবুল হারিছ চৌধুরী। মৃত্যুর পরও তার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসতে দেয়া হয়নি। এমন ঘটনা বিরল। এখন হারিছ চৌধুরীর মরদেহ নিজ এলাকায় সমাহিত হওয়ায় মরহুমের শেষ ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। তিনি মরহুম হারিছ চৌধুরীর জন্য সকলের কাছে দোয়া চান। এদিকে- বাদ আসর হারিছ চৌধুরীর মরদেহ কানাইঘাট উপজেলার সড়কের বাজারস্থ শফিকুল হক চৌধুরী মেমোরিয়াল এতিমখানায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কানাইঘাটের মাটিতে তাকে সমাহিত করা হয়। দাফনের পূর্বে স্থানীয় মাদ্রাসায় তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিএনপি, জামায়াতের নেতৃবৃন্দ ও পরিবারের লোকজন। এর আগে কানাইঘাটের প্রশাসনের তরফ থেকে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করা হয়।