সিলেটে আহলে হাদিসের সম্মেলন ঘিরে উত্তেজনা

Published: 3 January 2025

সিলেট অফিস :


সিলেটে আহলে হাদিস আন্দোলন বাংলাদেশের ইসলামী সম্মেলনকে ঘিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সম্মেলন বন্ধে আল্টিমেটাম দিয়েছে সিলেটের আলেম-ওলামারা। তাদের দাবি; আহলে হাদিসকে সিলেটে কোনো ইসলামী সম্মেলন করতে দেয়া হবে না। এজন্য তারা বুধবার সন্ধ্যায় দরগাহ মাদ্রাসায় বৈঠক করে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। গতকাল সভা করে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অন্যদিকে ইসলামী সম্মেলন আয়োজনে অনঢ় আহলে হাদিস আন্দোলন সিলেটের নেতারা। তারা জানিয়েছেন; অনুমতি নিয়েই তারা সিলেটে সম্মেলনের আয়োজন করছেন। এ নিয়ে তাদের প্রস্তুতি চলছে। শনিবার সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সংগঠনের জেলা কমিটির উদ্যোগে এ ইসলামী সম্মেলন। আয়োজকরা জানিয়েছেন- গত এক মাস ধরে অনলাইনে তাদের প্রস্তুতি চলছে। মাঠের অনুমতি নিয়ে তারা ইতিমধ্যে মঞ্চ ও প্যান্ডেল নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। প্রধান ফটকে তোরণ নির্মাণ করেছেন। সম্মেলনে আহলে হাদিস বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় আমীর ড. আসাদুল্লাহ আল গালিব প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এদিকে, এ অবস্থায় সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আহলে হাদিসের এই সম্মেলনকে ঘিরে ক্ষুব্ধ হয়েছেন আলেম-ওলামারা। বুধবার সন্ধ্যায় দরগাহ মাদ্রাসায় এক সভায় তারা যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। সভায় জানানো হয়; শনিবার সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বাংলাদেশে ইসলামের নামে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড চালানো আহলে হাদিস নামধারী সমপ্রদায় তাদের সম্মেলন করতে উদ্যোগ নিয়েছে। খবরটি জানার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সর্বস্তরের আলেম-সমাজের মধ্যে। আলটিমেটাম দেয়ার পর গতকাল তারা এনিয়ে ফের দরগাহ মাদ্রাসায় বৈঠক করেছেন। বৈঠকে জানিয়েছেন, ফ্যাসিবাদের দোসর, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হারাম ফতোয়া প্রদানকারী ও শহীদদের নিয়ে কটূক্তিকারী কথিত আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের উদ্যোগে আগামী ৪ঠা জানুয়ারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলন বন্ধে সিলেটের ওলামায়ে কেরামের পক্ষ হতে চব্বিশ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে কাসিমুল উলুম দরগাহ মাদ্রাসায় ওলামায়ে কেরামের সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক চলাকালীন সময়ে জেলা প্রশাসক ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, বর্ষীয়ান আলেম দরগাহ মাদ্রাসার মুহতামিম হযরত মাওলানা মাশুক উদ্দিন ও ওলামা পরিষদ সভাপতি মাওলানা মুশতাক আহমদ খানের সঙ্গে কথা বলে আহলে হাদিসের সম্মেলন বন্ধের নিশ্চয়তা প্রদান করেন। এ ব্যাপারে লিখিত নোটিশ দেয়ারও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। এর প্রেক্ষিতে আজ শুক্রবার বাদ মাগরিব দরগাহ মাদ্রাসায় পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে সর্বদলীয় ওলামায়ে কেরামের বৈঠকের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন- জামেয়া মাদানিয়া কাজির বাজারের মুহতামিম মাওলানা শায়েখ আব্দুস সুবহান, মাওলানা রেজাউল করিম জালালি, আলহাজ নুমানী চৌধুরী, শামীমাবাদ মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা সৈয়দ শামীম আহমদ, হরিপুর মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা হেলাল আহমদ, দারুল হুদা মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি মুজিবুর রহমান, মাওলানা রশিদ মকবুল, মাওলানা মুহিবুর রহমান, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম সিলেট মহানগর সভাপতি মাওলানা খলিলুর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মাহমুদুল হাসান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সিলেট মহানগর সভাপতি মাওলানা গাজী রহমাতুল্লাহ, খেলাফত মজলিস সভাপতি মাওলানা তাজুল ইসলাম হাসান প্রমুখ। অপরদিকে, গতকাল দুপুরে আহলে হাদিস আন্দোলন বাংলাদেশের সিলেটের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এনিয়ে বৈঠক করেছেন পুলিশ কমিশনার মো. রেজাউল করিম। এসময় পুলিশ কমিশনার তাদের ইসলামী সম্মেলন আয়োজন বন্ধ করার নির্দেশনা দেন। সিলেটের আলেম-ওলামাদের আপত্তি থাকা শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করতে তিনি এ নির্দেশনা প্রদান করেন। সিলেট জেলা দক্ষিণ আহলে হাদিস আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর জাবের আহমদ বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- আমাদের প্রস্তুতি চূড়ান্ত। এক মাস ধরে আমরা সব প্রস্তুতি চালাচ্ছি। হঠাৎ করে ইসলামী সম্মেলন বন্ধ করা যায় না। পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা পাওয়ার পর তারা এ নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। সন্ধ্যায় এনিয়ে তারা কুমারপাড়া আত-তাকওয়া মসজিদে সভা ডেকেছেন। সবার সিদ্ধান্তক্রমে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। তিনি জানান, আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের অনুমতি নিয়েই তারা ইসলামী সম্মেলনের আয়োজন করেছেন। অনুমতি নিতে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি মিডিয়া মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, আহলে হাদিস নামের ওই সংগঠনের নেতারা মাঠের মালিক আলিয়া মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নেননি। মাঠের অনুমতি যেখানে নেই সেখানে পুলিশ অনুমতি দিতে পারে না। আর বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হওয়ায় পুলিশের তরফ থেকে তাদের সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।