ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড: অধ্যাদেশে সই করলেন রাষ্ট্রপতি

Published: 13 October 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, ঢাকা : ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন অধ্যাদেশে সই করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) রাষ্ট্রপতির প্রেসসচিব জয়নাল আবেদীন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।


জাতীয় সংসদের অধিবেশন না থাকায় রাষ্ট্রপতির এই স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে এটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইনে পরিণত হলো। সংসদ অধিবেশন শুরু হলে এটি আইন আকারে পাস হবে।
এর আগে দেশে ক্রমাগত যৌন নিপীড়নের ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মধ্যে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইনের একটি সংশোধনী প্রস্তাব গতকাল সোমবার (১২ অক্টোবর) নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন, সাধারণ জখম হলে আপসের বিধান রেখে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০০’-এর নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রপতি একমত পোষণ করায় আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হয়। একইসঙ্গে মন্ত্রিসভায় এ আইনের আরো দুটি ধারায় পরিবর্তনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে বিদ্যমান আইনটির সংশোধিত খসড়া অধ্যাদেশ আকারে জারির জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংসদ চালু না থাকায় এটি রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ আকারে জারি করতে পারবেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে সংসদের অধিবেশন নেই, অন্যদিকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপতির কাছে বিষয়টি যদি সন্তোষজনক মনে হয়, তাহলে তিনি সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করতে পারবেন।’
মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, “২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(গ) উপধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিদ্যমান আইনের ১১(গ) ধারায় রয়েছে, ‘সাধারণ জখম করার জন্য অনধিক তিন বছর বা অন্যূন এক বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন, এই দণ্ডের অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।’ এ ধারাটির শাস্তির বদলে সাধারণ জখমের ক্ষেত্রে আপস করার বিধান রাখা হচ্ছে।”
গত ৪ অক্টোবর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে মধ্যবয়সী এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ঘটনার পর দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। জড়িতদের বেশির ভাগকে গ্রেপ্তার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশজুড়ে প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যেও প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় বর্বর ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। সেসব খবর প্রতিদিনই প্রকাশিত হচ্ছে সংবাদমাধ্যমে।
বাংলাদেশে বিদ্যমান ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০০’ অনুযায়ী ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে বা দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। পাশাপাশি দুই ক্ষেত্রেই অর্থদণ্ডের বিধান আছে। এ আইনে মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সাত দিন থেকে এক মাস এবং মামলা নিষ্পত্তির জন্য ১৮০ দিন, অর্থাৎ ছয় মাস সময় বেঁধে দেওয়া হলেও বাস্তবে এ সময়ের মধ্যে রায় দেওয়া সম্ভব হয় না। একারণে এসংক্রান্ত আইন সংশোধনের দাবি ওঠে।