লালমনিরহাটে পুড়িয়ে হত্যা করা সেই ব্যক্তির পরিচয়

Published: 31 October 2020

পোস্ট ডেস্ক : লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে পরে তার লাশ আগুনে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা হতবাক করেছে সাধারণ মানুষকে।

মানুষের এ ধরণের নৃশংসতাকে মধ্যযুগের বর্বরতার সঙ্গে তুলনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হতাশা প্রকাশ করেছেন। খবর বিবিসির।

নিহত ব্যক্তির ভাই তৌহিদুন্নবী জানান, ঘটনার দিন অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার সকালে তার ভাই মোটরসাইকেলে করে এক স্কুলের বন্ধুর বাড়িতে যান। সেখান থেকে তারা বেরিয়ে গেলেও কখন কী উদ্দেশ্যে পাটগ্রামে গিয়েছিলেন, সেটা কেউ জানাতে পারেননি।

পরে সন্ধ্যার দিকেও তিনি বাড়িতে না ফেরায় এবং মোবাইলে কোন সাড়া না দেয়ায় খোঁজখবর শুরু করা হয়। এসময় ওই বন্ধুর কাছে খবর নেয়া হলে তিনি পাটগ্রামের সেই সহিংস পরিস্থিতির কথা জানান।

এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া গণপিটুনির ভিডিওটি দেখে তৌহিদুন্নবী নিশ্চিত হন, হামলার শিকার ওই ব্যক্তি আর কেউ নন- তারই আপন ভাই জুয়েল।

তার পুরো নাম আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহীদুন নবী জুয়েল। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ এবং তার বয়স পঞ্চাশের কিছু বেশি বলে জানা গেছে।

জুয়েলের জন্ম ও বেড়ে ওঠা রংপুর জেলাতেই। রংপুর জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং রংপুরের কারমাইকেল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন তিনি। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্সে ভর্তি হন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করে রংপুরের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের লাইব্রেরি সায়েন্সের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

তিনি মূলত সেখানকার লাইব্রেরির ইনচার্জ হিসেবে কাজ করতেন। টানা ২৪ বছর সেই চাকরি করেছেন তিনি।

 

গত বছর অবসরে যাওয়ার পর জুয়েল নিজস্ব ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে কোন দিকেই কোন গতি করতে পারছিলেন না। এমন অবস্থায় জুয়েল কিছুটা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন বলে জানান তৌহিদুন্নবী।

তবে তার এই মানসিক হতাশা গুরুতর কিছু ছিল না বলেও তিনি নিশ্চিত করেছেন।ব্যক্তিজীবনে সহজ, সরল, অমায়িক ও ধর্মভীরু মানুষ হিসেবে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ছিলেন জুয়েল।

তাই তার এমন নৃশংস মৃত্যুর ঘটনা কেউই যেন স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছেন না।

এ ব্যাপারে তৌহিদুন্নবী বলেন, জুয়েল এক কথায় সহজ আর সাদা মনের মানুষ ছিল। কিন্তু ইদানিং মানসিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।

ধর্মগ্রন্থের পাশাপাশি জুয়েল নানা ধরণের বই পড়তেন বলে জানিয়েছেন তৌহিদু্ন্নবী। ইংরেজি ভাষায় তার ভালো দখল ছিল বলেও তিনি জানান।

পিটিয়ে মারার পর মৃতদেহের গায়ে প্রকাশ্যে আগুন ধরিয়ে দেয়া, এমন নৃশংসতার ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম।

এদিকে স্বামীর এমন আকস্মিক মৃত্যুতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন নিহত শহীদুন নবী জুয়েলের স্ত্রী এবং তার দুই সন্তান। তার ছোট ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র বলে জানা গেছে।