ভালোবাসার আগুনে পুড়ে প্রাণ গেল অন্তঃসত্ত্বা পুতুল রাণীর
বিশেষ সংবাদদাতা, ঢাকা : ‘তুই আমাকে কতটুকু ভালোবাসিস তার প্রমাণ দিতে পারবি?
তাহলি নিজের গায় কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরায় দেতো কিরকম পারিস?’ স্বামী প্রদীপের এমন চ্যালেঞ্জের পর ভালোবাসার প্রমাণ দিতে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন ৫ মাসের অস্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ পুতুল রাণী। ভালোবাসার প্রমাণ দিতে পুতুল গায়ে আগুন ধরালেও সে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেনি ভালোবেসে বিয়ে করা স্বামী প্রদীপ। ভালোবাসার এ আগুনে পুড়েই বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় পুতুল রাণীর।
এ তথ্য আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জানান পুতুলের কাকা সঞ্জয় কুমার। তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর আগে পুতুল এ কথাগুলো তাকে বলে গেছে’। তিনি এ ঘটনার বিচার দাবি করে বলেন, ‘তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া-মারামারি হতো। গতরাতেও তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। তারপর প্রদীপের ভালোবাসার প্রমাণ দিতে আমার ভাইয়ের মেয়ে এ ঘটনা ঘটায়। অথচ গায়ে আগুন ধরানোর পর প্রদীপ তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেনি। আমি এর বিচার চাই। এ ঘটনায় ঝিকরগাছা থানায় আমি অভিযোগ দিয়েছি’।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কাউরিয়া দাসপাড়ায় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টায় আগুনে দগ্ধ হয় পুতুল রানী (১৬) নামে ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এ ঘটনায় তার স্বামী প্রদীপও (২০) দগ্ধ হয়েছে। প্রথমে প্রতিবেশীরা তাদের উদ্ধার করে ঝিকরগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে পুলিশ খবর পেয়ে তাদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। দগ্ধ পুতুল রাণীর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় রেফার করে। তবে তার স্বজনরা তাকে নিয়ে যান খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তার মৃত্যু হয়। প্রদীপের বিরুদ্ধে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ তোলায় পুলিশ তাকে আটক দেখিয়েছে। প্রদীপ পুলিশ প্রহরায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
যশোর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আহম্মেদ তারেক শামস চৌধুরী জানান, রাত ৩টার দিকে দগ্ধ দম্পতিকে হাসপাতালে আনা হয়। পুতুলের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাতেই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার করা হয়। এ ছাড়া আহত প্রদীপের দুই হাত, চোয়াল ও মাথার চুল পুড়ে গেছে। তাকে সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রদীপ জানান, পারিবারিক বিষয় নিয়ে পুতুলের সাথে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে পুতুল ঘরের বাইরে যেতে চাইলে তিনি বাধা দেন এবং দরজা আটকে শুয়ে পড়েন। পুতুল ক্ষিপ্ত হয়ে পাশের ঘরে গিয়ে নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। তিনি আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। এতে তার দুই হাত পুড়ে যায়। পরে প্রতিবেশীরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতাল ভর্তি করে।
প্রদীপ আরো জানান, তিনি পুতুলকে খুব ভালোবাসেন। একবছর আগে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে সনাতন ধর্ম গ্রহণ করে তিনি পুতুলকে বিয়ে করেছিলেন, আল-আমিন ত্যাগ করে গ্রহণ করেছিলেন প্রদীপ নাম। পুতুলের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে প্রতিবেশীদের অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেন তিনি। পেশায় সুইপার প্রদীপ ঝিকরগাছা রেলস্টেশন এলাকার মৃত আলী আহম্মদের ছেলে।
ঝিকরগাছা থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা তো শুধু ছেলের বক্তব্য শুনেছি। সে দাবি করেছে তার স্ত্রী নিজে গায়ে আগুন দিয়েছে। মেয়ের বক্তব্য পেলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। প্রদীপকে আটক দেখিয়ে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।