‘মি. বেকারের’ বিরুদ্ধে ৮০ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির মামলা
পোস্ট ডেস্ক : ‘মি. বেকার’-এর বিরুদ্ধে ৮০ কোটি ১৬ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির হিসাব উদঘাটন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা সংস্থা।
এর মধ্যে ২৬৫ কোটি টাকার বিক্রয় তথ্য গোপন করে ৩৪.৬ কোটি টাকার মূসক ফাঁকি দিয়েছে ‘মি. বেকার’।
রোববার ভ্যাট গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। ভ্যাট অফিস থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে প্রকৃত বিক্রি তথ্য গোপন করায় এই মামলাটি দায়ের করা হয়।
জানা গেছে, ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২০ অক্টোবর ভ্যাট গোয়েন্দা সংস্থার একটি দল ‘মি. বেকার কেক অ্যান্ড পেস্ট্রি শপ লিমিটেড’-এর ১৬০/৪৮৫, মোকদাম আলী সরকার রোড, ধোউড়, তুরাগে অবস্থিত কারখানা কাম প্রধান কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে। প্রতিষ্ঠানটির ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর-০০০৯৬৪৬৮২-০১০২। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধিত।
রাজধানীতে প্রতিষ্ঠানটির ২৯টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে, যার মাধ্যমে কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে থাকে। অভিযানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি কোনও ধরনের হিসাব সংরক্ষণ ব্যতীত ব্যবসা পরিচালনা করছে।
পরে অনুসন্ধানের স্বার্থে টঙ্গী এলাকায় তাদের নামে খোলা দুটো ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়।
এতে তাদের ফিন্যান্সিয়াল প্রতিবেদন পাওয়া যায় এবং এগুলো পর্যালাচনায় তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্পর্কে একটি চিত্র উঠে আসে।
অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব আসিফ জামান গত ১৮ই অক্টোবর তার নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডে অবস্থিত ‘মি বেকার’-এর বিক্রয় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ভ্যাট চালান না দেয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন। তিনি ওই স্ট্যাটাসে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের কাছে প্রতিকার চেয়ে উল্লেখ করেন, ‘ভোক্তারা ভ্যাট দিলেও তা সরকার পাচ্ছে না।’
এই অভিযোগ ও আরও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম অভিযোগটির তদন্ত করার জন্য ভ্যাট গোয়েন্দাদের নির্দেশ দেন।
ভ্যাট গোয়েন্দা দলের আকস্মিক পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠানটিতে ভ্যাট আইনের বাধ্যবাধকতা অনুসারে ক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.১) ও বিক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.২) পাওয়া যায়নি। ভ্যাট আইন অনুযায়ী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই দুটো হিসাব সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
পরিদর্শনকালে ভ্যাট সংক্রান্ত অন্যান্য দলিল দেখাতে বলা হলে, উপস্থিত মালিকপক্ষ তা দেখাতে পারেনি এবং এগুলো সংরক্ষণ না করার বিষয়ে তারা কোনও সদুত্তরও দিতে পারেনি। প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে মালিকপক্ষ নিজস্ব বাণিজ্যিক দলিলাদিও রাখেন না। এতে ভ্যাট গোয়েন্দা দলের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, মনগড়া ও কাল্পনিক হিসাবের ভিত্তিতে ‘মি. বেকার’ স্থানীয় ভ্যাট সার্কেলে রিটার্ন দাখিল করে আসছে।
এমনকি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ অভিযানের আগের দিন যেসব পণ্য ফ্যাক্টরি থেকে বের করেছে তার মূসক-৬.৫ চালান দেখাতে বলা হলেও তারা দেখাতে পারেননি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি কেন্দ্রীয় নিবন্ধিত হওয়ায় মূসক-৬.৫ এর মাধ্যমে পণ্য ফ্যাক্টরি থেকে আউটলেটে নেয়ার বিধান থাকলেও তা পরিপালন করা হয় না। একইসঙ্গে তারা ভোক্তাদের কাছে থেকে সংগ্রহ করা ভ্যাট সরকারি কোষাগারে যথাযথভাবে জমা দেয়নি।
অভিযানে গোয়েন্দা দল প্রতিষ্ঠানটির প্রাঙ্গণে অবস্থিত অন্য একটি ভবনের বিভিন্ন তলায় ও ছাদে অবস্থিত কর্মচারীদের থাকার কক্ষ তল্লাশি করে তাদের পুরনো কিছু অসংগঠিত তথ্যাদি পেয়েছে গোয়েন্দা দল সেখান থেকে এসব কাগজপত্র জব্দ করে।
পরবর্তীতে জব্দকৃত এবং অনুসন্ধানের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য ও দলিলাদির ভিত্তিতে জুলাই/২০১৪ হতে জুন/২০১৯ পর্যন্ত সময়ে শুধুমাত্র বিক্রির ওপর ৩৪,৬০,৫৬,৩৩৯ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করা হয়। এই ভ্যাটের ওপর মাসভিত্তিক ২% হারে ২৫,৩৭,৮৭,০৯১ টাকা সুদ প্রযোজ্য।
এ ছাড়া সেপ্টেম্বর/২০১৯ হতে সেপ্টেম্বর/২০২০ পর্যন্ত সময়ে জব্দকৃত ক্রয়ের চালান পরীক্ষা করে কাঁচামাল ক্রয়ের ওপর অপরিশোধিত উৎসে ভ্যাট ১৭,৩৩,৯৬৮ টাকা পাওয়া যায়। এর ওপর মাসভিত্তিক ২% হারে সুদ ৩৪,৬৭৯ টাকা প্রযোজ্য।
জুলাই/২০১৪ হতে জুন/২০১৯ পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন শোরুমের স্থান ও স্থাপনা ভাড়ারও অপরিশোধিত ভ্যাট ১,৫৬,৩৯,০৪০ টাকা, যার ওপর মাসভিত্তিক ২% হারে সুদ প্রযোজ্য ৯৮,৪৮,৮১৪ টাকা। জুলাই/২০১৪ হতে জুন/২০১৯ পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন সেবা ক্রয়ের ওপর অপরিশোধিত উৎসে ভ্যাট ১০,২০,৭৫,১৮৩ টাকা, যার ওপর মাসভিত্তিক ২% হারে সুদ ৭,২৪,৫৫,১৪১ টাকা প্রযোজ্য।
‘মি. বেকার কেক অ্যান্ড পেস্ট্রি শপ লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় এবং উৎসে কর্তন বাবদ সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাট ৪৬,৫৫,০৪,৫৩১ টাকা উদঘাটন করা হয়।
উক্ত অপরিশোধিত মূসক এর ওপর সুদ বাবদ মোট ৩৩,৬১,২৫,৭২৫ টাকা প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি সর্বমোট ৮০,১৬,৩০,২৫৬ টাকা ভ্যাট ফাঁকির সঙ্গে জড়িত। প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন এবং উৎসে ভ্যাট না দেয়ায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে রোববার ভ্যাট গোয়েন্দা সংস্থা মামলা দায়ের করেছে। ‘মি বেকার’-এর আরেকটি সুইটমিটের ব্যবসা রয়েছে। রাজধানীতে এর ৫টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এসব বিক্রয়কেন্দ্রের তথ্যাদিও অনুসন্ধানে রয়েছে।