অর্থপাচার সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে হাইকোর্ট যা বলেলন
বিশেষ সংবাদদাতা, ঢাকা : বিভিন্ন সংবাদপত্রে অর্থপাচার সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে হাইকোর্ট প্রশ্ন রেখে বলেছেন, যারা অর্থপাচার করছে তারা তো দেশ ও জাতির শত্রু। তারা দেশ ও জাতির সঙ্গে বেইমানি করেছে, করছে। কারণ দেশে পড়াশোনা করে, দেশের মাটিতে থেকে, দেশের টাকা দেশের বাইরে নিয়ে চলে যাচ্ছে- এটা কি দেশ ও জাতির সঙ্গে বেইমানি নয়?
রোববার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন। শুনানি শেষে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন।
আদেশে বিদেশে অর্থপাচারকারীদের নাম-ঠিকানার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তা জানাতে বলা হয়েছে।
প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে অর্থপাচারকারী সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, ব্যাংক কর্মকর্তা ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ঢাকার জেলা প্রশাসককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ সময় আদালতে যুক্ত ছিলেন- দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
এ সংক্রান্ত বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন তুলে ধরে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, অবৈধভাবে টাকা পাচার করছে কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে, এই খবরগুলো আমাদের কাছে আসছে। তিনি বলেন, বিপুল পরিমাণ অর্থ কানাডা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভন্ন দেশে চলে যাচ্ছে। এর অধিকাংশই হল সরকারি কর্মকর্তা। এই যে টাকাগুলো নিয়ে যাচ্ছে, এদের নামধাম কী, এগুলো আমাদের জানা দরকার। কত পরিমাণ টাকা গেল, তারা কীভাবে টাকাটা পাচার করল জানা দরকার।
বিচারক বলেন, যারা অর্থ পাচার করছে তারা তো দেশ ও জাতির শত্রু। আমি মনে করি তারা দেশ ও জাতির সঙ্গে বেইমানি করেছে, করছে। কারণ দেশে পড়াশোনা করে, দেশের মাটিতে থেকে, দেশের টাকা দেশের বাইরে নিয়ে চলে যাচ্ছে এটা কি দেশ ও জাতির সঙ্গে বেইমানি নয়? দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এ সময় বিচারকের কথায় একমত পোষণ করেন। আদালত বলেন, একটা মানুষের যদি দেশপ্রেম থাকে কখনও সে এই কাজ করতে পারে? কাজেই এসব ব্যাপারে আমাদের একটু দেখা দরকার। নইলে তো এই অপরাধ কমবে না।
আইনজীবী খুরশীদ আলম খান তখন বলেন, এটা একটা কালচার হয়ে গেছে এখন। বিচারক বলেন, দেশের মাটিতে থাকছে, দেশের মাটিতে পড়াশোনা করছে, কিন্তু আলটিমেটলি দেশকে ঠকিয়ে দেশের টাকা দেশের বাইরে নিয়ে চলে যাচ্ছে। এটা তো হতে পারে না, এটা কীভাবে সম্ভব! একটা মানুষের মধ্যে যদি দেশপ্রেম থাকে, দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকে সে এ কাজ কখনও করতে পারে না।৷ এভাবে তো এসব দুর্বৃত্তদের আমরা এলাও করতে পারি না। দেশের টাকা দেশের বাইরে নিয়ে চলে যাবে আনঅথরাইজডলি এবং বেআইনি পথে, আমাদের এতগুলো আইনগত সংস্থা, কোর্ট আছে। কাজেই আমরা মনে করি এর উপর একটা রুল হওয়া দরকার। এরপরই আদালত রুলসহ আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, গত বুধবার ডিআরইউর মি দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বাংলাদেশ থেকে কানাডায় টাকাপাচারের সত্যতা পাওয়ার কথা জানান। প্রাথমিকভাবে অর্থপাচারে জড়িত যাদের তথ্য পাওয়া গেছে তার মধ্যে সরকারি কর্মচারীই বেশি বলে জানান তিনি। এছাড়া রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীও রয়েছেন বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন। তবে সেদিন কারও নাম প্রকাশ করেননি তিনি।