বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘৃণিত এবং নিকৃষ্ট প্রতিষ্ঠান-মির্জা ফখরুল
পোস্ট ডেস্ক : এই নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘৃণিত এবং নিকৃষ্ট প্রতিষ্ঠান বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, আমরা বারবার এই নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ জানিয়েছি।
বাংলাদেশে যারা বুদ্ধিজীবী আছেন, যারা দেশের রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করেন এবং বিদেশের যারা বাংলাদেশের রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করেন তারা বলেছেন, এই নির্বাচন কমিশন থাকাকালে বাংলাদেশ কখনোই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, এ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয় আওয়ামী লীগের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে। এই নির্বাচন কমিশন কখনোই সুষ্ঠুভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। এ নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব পালন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। আজ সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ এ আহ্বান জানান তিনি। বিএনপি মহাসচিব সরকার পতনের আন্দোলনে দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার দেশে একটা লুটপাটের রাজত্ব তৈরি করেছে। আজকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এদেশের মানুষের সকল আশা আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। আমরা এই অনির্বাচিত সরকারকে পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এখনো সময় আছে পদত্যাগ করুন। না হয় দেশের সচেতন মানুষ আপনাদেরকে চলে যেতে বাধ্য করবে। আমি দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছি আসুন আমরা আমাদের নিজেদের অধিকার রক্ষা করার জন্য, ভোটের অধিকার রক্ষা করার জন্য, দেশে থাকার জন্য এই সরকারকে হটানোর জন্য, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন শুরু করি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতীয় নির্বাচনের মতো এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো একইভাবে তারা (সরকার) লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। গতকাল গাজীপুরে আমাদের বিএনপির প্রার্থীসহ অনেকেই হামলার শিকার হয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন কিছুই করতে পারেনি। যখন ভোট চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয় তারপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে জিজ্ঞেস করলে উনি বলেন, সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। আমরা আজকের এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে পরিষ্কারভাবে জানাতে চাই, আপনাদের যদি নুন্যতম কোন লজ্জা থাকে এখনই, এই মুহূর্তে পদত্যাগ করা উচিত। অন্যথায় দেশের মানুষ আপনাদেরকে এই পথ থেকে সরাতে বাধ্য।
ফখরুল আরও বলেন, ২০০৭ সালের এই জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মধ্য দিয়ে একটা অবৈধ ও বেআইনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়েছিল। যারা অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও সুচিন্তিতভাবে বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়াকে সম্পন্ন করেছে। সেসময় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ারসহ অসংখ্য রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং মিথ্যা মামলা দিয়েছে। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হচ্ছে আজকে এই আওয়ামী লীগ সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ করে একইভাবে দেশে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। আজকে বিএনপির ২৫ লাখেরও বেশি মানুষের ওপর মামলা।
তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পক্ষে যারা কথা বলেন, তাদের অনেককে গুম করে ফেলা হয়েছে। অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এখন স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে সব জায়গায় তারা গায়ের জোরে কেন্দ্র দখল করে নিয়ে যাচ্ছে এই সরকার। আজকে দেশের কোথাও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের পরিবেশ নেই। সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। মোটকথা, তারা এই দেশে একটি একদলীয় শাসনব্যবস্থা তৈরি করেছে। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্যই দেশের সকল প্রতিষ্ঠানগুলোর ধ্বংস করে দিয়েছে।
ফখরুল বলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচনে হেরে গিয়েও তার একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য জোর করে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমেরিকার প্রতিষ্ঠানগুলো, তাদের বিচার বিভাগ, পার্লামেন্ট ট্রাম্পের অপচেষ্টাকে কঠোরভাবে দমন করার কারণেই আজকে আমেরিকায় গণতন্ত্র ধ্বংস করতে পারেনি। সেখানে গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছিল। সবার একটা আকাঙ্খা ছিল একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে। আকাঙ্ক্ষা ছিল এদেশের মানুষকে মুক্ত সমাজে বসবাস করবে। কিন্তু এই সরকার সব শেষ করে দিয়েছে।
বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল এর সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-সচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরব, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, সিনিয়র যুগ্ন সাধারন সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন, ইডেন কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব সানজিদা ইয়াসমিন তুলি প্রমুখ।