জলমহাল বিরোধ থাকলেও মূলত ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত

Published: 21 March 2021

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের শাল্লায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলায় ভাঙচুরের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। রোববার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, জলমহাল সংক্রান্ত বিরোধ থাকলেও মূলত ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে এঘটনার সুত্রপাত। এই ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করে এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল আরেক মামলা দায়ের করেন। এঘটনায় এপর্যন্ত প্রধান আসামী স্বাধীন মেম্বারসহ ৩৩জনকে আটক করেছে পুলিশ। বাকি অভিযুক্তদেরকেও দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। অপরাধীদের কেউ ছাড় পাবে না।
স্বাধীন মেম্বারকে রিমান্ডে আনার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যতক্ষণ পর্যন্ত পুলিশ মনে করে শহিদুল ইসলাম ওরফে স্বাধীন মেম্বার নয়, যাকে পুলিশ সন্দেহ করবে তাকেই আটক করে তথ্য সংগ্রহ করতে প্রয়োজনে রিমান্ডে নেয়া হবে। সল্পতম সময়ে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে চার্জসিট দেয়া হবে। তবে কোনো নিরপরাধ লোকও এখানে হয়রানির শিকার হবে না বলে আশ^স্ত করেন তিনি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহেব আলী পাঠান, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) সহিদুর রহমান, ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এজাজ আহমদসহ জেলার প্রিন্ট এন্ড ইলেক্টট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।এদিকে এঘটনায় আজ রোববার রাতে দিরাই শাল্লার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। এনিয়ে এপর্যন্ত মামলার প্রধান আসামী শহিদুল ইসলাম ওরফে স্বাধীন মেম্বারসহ ৩৩ জনকে আটক করা হয়।
এদিকে জেলাজুড়ে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কুতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছেন।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুকে) হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুল হককে নিয়ে ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছিলেন স্থানীয় হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের গোপেন্দ্র দাসের ছেলে ঝুটন দাস আপন। এর বিষয়টি ফেসবুকে ভাইরাল হলে মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) রাতেই উপজেলার শশখাই বাজার থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। এদিকে, কটূক্তির ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার (১৭ মার্চ) সকালে উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এরপর বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) সকালে র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে হেলিকপ্টারযোগে সুনামগঞ্জের শাল্লা আসেন র‌্যাবের মহা-পরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

এসময় তিনি হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে দুর্বৃত্তদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর পরিদর্শন ও প্রেসব্রিফিং করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি ও গ্রামবাসীকে নিরাপদে বসবাসের আশ্বাস দেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেন। এরপর র‌্যাবের মহা-পরিচালকের নির্দেশে নোয়াগাঁও গ্রামে অস্থায়ী র‌্যাব ও পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়। ওই দিন বিকেলে পৃথক দুইটি মামলা হয়। একটি মামলার বাদী শাল্লা থানার এসআই আব্দুল করিম। এ মামলায় অজ্ঞাতনামা দেড় সহস্রাধিকজনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলার বাদী স্থানীয় হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল। মামলায় ৮০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০০ জনকে আসামি করা হয়।