বাড়তে পারে লকডাউনের মেয়াদ : জুলাই মাসে ব্রিটেনে প্রতিদিন শনাক্তের সংখ্যা এক লাখে পৌঁছাবে

Published: 13 June 2021

বিশেষ সংবাদদাতা :


আগামী মাসেই ব্রিটেনে প্রতিদিন কোভিড শনাক্তের সংখ্যা এক লাখে পৌঁছাতে পারে বলে হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এরইমধ্যে দেশটিতে হাসপাতালে ভর্তির হার বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। একইসঙ্গে আগামি ২১ জুন কোভিড নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া নিয়ে আগের তুলনায় কম আশাবাদী বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরফলে কোভিড নিয়ে জারি থাকা নানা কড়াকড়ি এ মাসেও উঠছে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। অপিনিয়ামের এক জরিপে জানা গেছে, ৫৪ শতাংশ বৃটিশই এখন কড়াকড়ি বৃদ্ধির পক্ষে। বিপক্ষে রয়েছে ৩৭ শতাংশ।

মিররের খবরে বলা হয়েছে, ব্রিটেনে শনাক্ত হওয়া ৯০ শতাংশ সংক্রমণই ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের। প্রতি ৯ দিনে এই সংক্রমণ দ্বিগুন হচ্ছে।

সংক্রমণ যত বাড়বে ততো ভ্যাকসিন প্রতিরোধী মিউটেশনের ঝুঁকি বাড়বে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের প্রফেসর অ্যান্থনি কস্টেলো বলেন, এক মাসের মধ্যেই প্রতিদিন শনাক্তের সংখ্যা এক লাখে পৌঁছাবে। শ্যাডো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিক থমাস-সিমন্ডস বলেন, আর কোনো দেরি হলে সেটি অনেকগুলো পরিবার ও ব্যবসার জন্য বড় ক্ষতির কারণ হবে। মন্ত্রীদের ওপর এই ভুলের দায় বর্তায়। সীমান্ত নিয়ে তাদের বেপরোয়া নীতির কারণে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এখন ব্রিটেনে পৌঁছেছে এবং ছড়াচ্ছে।

যদি এ হারে সংক্রমণ বাড়তে থাকে, তাহলে একদিনে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ২ হাজারে পৌঁছাবে। ব্রিটিশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের প্রধান ড. চাঁদ নাগপাল বলেন, এটি শুধু হাসপাতালে ভর্তিরই বিষয় নয়। এই কোভিডের কারণে তরুণ প্রজন্মও ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদেরকে দীর্ঘ সময় ধরে নানা উপসর্গে ভুগতে হতে পারে।

জরুরি পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকারকে পরামর্শ দেয়া সংস্থা সেইজের বিজ্ঞানীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, স্কুলগুলোকে অবশ্যই মাস্ক বাধ্যতামূলক করতে হবে। দেশটিতে বর্তমানে ১ লাখ ৩৬ হাজার শিক্ষার্থী স্কুলে অনুপস্থিত রয়েছে। এর কারণ, তারা হয় কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে কিংবা কোভিড আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে এসেছে। তবে দেশটিতে ব্যাপক হারে ভ্যাকসিন গ্রহণের কারণে কোভিড আক্রান্ত হলেও মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে না। তবে এখন যত মানুষ হাসপাতাল ছাড়ছেন তার থেকে বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তাছাড়া, দেশের ৫৫ শতাংশ এখনো ভ্যাকসিনের পূর্ণ ডোজের আওতায় আসেনি।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট মূলত ভারত থেকে ছড়িয়ে পরা করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট। এটি সাধারণ করোনার থেকে ৬০ শতাংশ অধিক সংক্রমিত হয়। ফাইজার ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের এক ডোজ মাত্র ৩৩ শতাংশ সুরক্ষা দেয় এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে।

কভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস মহামারি থেকে লকডাউন তুলে নেওয়ার রোড ম্যাপ গত ফেব্রুয়ারিতে ঘোষনা করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। সেই রোডম্যাপ অনুযায়ী ৮ই মার্চ, ২৯শে মার্চ , ১২ই এপ্রিল এবং ১৭ই মে লক ডাউন ধাপে ধাপে শিথিল করা হয়। পুরোপুরি লক ডাউল তুলে নেওয়ার ঘোষনা ছিলো ২১শে জুন তবে করোনাভাইরাস মহামারি আক্রান্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় ইংল্যান্ডের চলমান লকডাউন আরো চার সপ্তাহের জন্য বাড়তে পারে এমন পরিকল্পনা বিবেচনা করছে ব্রিটিশ সরকার।

লকডাউন প্রত্যাহারের সময় নির্ধারণ ছিলো ২১শে জুনে লকডাউন তুলে নেয়ার পরিকল্পনা। তবে ডাউনিং স্ট্রিটের দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তথ্য উপাত্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ চলছে। সোমবার এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে পারে।
ঘোষিত এই তারিখের পর থেকে সামাজিক মেলামেশায় আরোপিত বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার আশা ছিল ব্রিটিশদের। কিন্তু দেশটিতে ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার পর থেকে কোভিড ইস্যুতে উদ্বেগ বেড়েছে। একইসাথে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার বৃদ্ধি এবং ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দ্রুত সংক্রমণ হার নতুন করে ভাবাচ্ছে ব্রিটিশ প্রশাসনকে। সে কারণেই লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর চিন্তা করছে তারা।

হোয়াইট হলের একজন সূত্র বলেন, বেশ কিছু বিকল্প নিয়ে ভাবা হচ্ছে। তার মূলে আছে লকডাউনের মেয়াদ চার সপ্তাহ বৃদ্ধির পরিকল্পনা। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন লকডাউন বাড়ানো হলে টিকাদান কর্মসূচির ক্ষেত্রে বড় সাফল্য আসবে।

ব্রিটিশ মেডিকেল এসোসিয়েশন লকডাউন বাড়ানোর বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তাদের সাথে সহমত পোষণ করেছে। তবে লকডাউন উঠে গেলে খুলবে ইংল্যান্ডের নাইটক্লাবগুলো, আয়োজন করা যাবে বিয়েসহ অন্য সব ধরনের অনুষ্ঠান। সম্ভবত সে কারণেই কয়েকদিন ধরে ২১ জুন থেকে লকডাউন তুলে নেয়ার জন্য নানামুখী চাপে আছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

এদিকে ছায়া স্বরাষ্টমন্ত্রী নিক থমাস সিমন্ড বলেছেন, লকডাউনের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হলে অনেক পরিবার একইসাথে ব্যবসা বাণিজ্যে ক্ষতির মুখে পড়বে। পরোয়া সীমান্ত নীতি সচল রাখায় ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করেছেন লেবার পার্টির এমপি নিক থমাস সিমন্ড। তিনি অভিযোগ তুলেছেন, বিজ্ঞানীরা সতর্কতা দেয়া সত্ত্বেও এই সীমান্ত নীতির মাধ্যমে ব্রিটেনে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ভারতে প্রথম সনাক্ত হয়। ব্রিটেনেও এ ভ্যারিয়েন্ট সনাক্তের হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। করোনায় আক্রান্ত দশ জনের মধ্যে নয় জনই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত।