“বাংলাদেশের দরিদ্র জেলা, দরিদ্র জনগণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন”

Published: 11 May 2022

।।ড. ফজলে এলাহী মোহাম্মদ ফয়সাল।।


কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ধনী-গরীব জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করণকে বুঝে থাকি। উৎপাদনমুখী বিনিয়োগের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে আয়ের সুসম বণ্টন সম্ভব হয়। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং আয়স্তর ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধির মাধ্যমে স্থবিরতা হ্রাস পায়। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেলেও দেশের বিপুল সংখ্যক অধিবাসী এখনও দরিদ্রসীমার নিচে অবস্থান করছেন। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে এখনও মৌলিক চাহিদাগুলোর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। রয়েছে খাদ্য, অন্ন, বাসস্থানের সমস্যা। এছাড়াও শিক্ষা, চিকিৎসা, বিশুদ্ধ পানি, পয়: নিষ্কাশন ব্যবসা, বিদ্যুৎ ইত্যাদির স্বল্পতা এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে দরিদ্র জেলাগুলো হলো: কুড়িগ্রাম জেলা, দিনাজপুর জেলা, মাগুড়া জেলা, বান্দরবান জেলা, খাগড়াছড়ি জেলা, শরীয়তপুর জেলা, লালমনিরহাট জেলা, গাইবান্ধা জেলা, নীলফামারী জেলা ইত্যাদি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সম্পদ ও প্রতিষ্ঠানের স্বল্পতা, জীবিকা ও কর্মস্থানের সীমাবদ্ধতা, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, পণ্য বিপনন ও বিক্রয়ের লিংকেইজের সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি এ অঞ্চলগুলোতে ব্যাপক ভাবে পরিলক্ষিত হয়। জেলাগুলোতে পর্যবেক্ষণ করলে আরও দেখা যায় স্থানীয় অর্থনীতিতে অর্থের প্রবাহ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। অঞ্চলগুলোতে প্রবাসীগণের সংখ্যা কম এবং স্থানীয় প্রবাসীগণের মাঝে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ায় শ্রমিক শ্রেণীর জনগোষ্ঠী অবস্থান করছেন। এর ফলে স্থানীয় অর্থনীতিতে অর্থের প্রবাহ কম হচ্ছে। বড় বড় শিল্পকারখানা তেন পরিলক্ষিত হয় না এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বৃহৎ আকারের শপিং মল প্রতিষ্ঠা করা, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসার বিনিয়োগ করার মত সামর্থবান জনবল কম এবং এর ফলে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, লেনদেন কম দেখা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জেলাগুলোর অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। বাংলাদেশের দরিদ্র অঞ্চল, দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং দরিদ্রতা হ্রাস অথবা বিমোচনের জন্য তিনটি দরিদ্র জেলা-কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর এবং মাগুড়া জেলার দিকে আলোকপাত এবং দারিদ্রতা হ্রাস এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাবলম্বী অথবা অভাব মোচনের জন্য কয়েকটি বিষয়ে আলোকপাত করা প্রয়োজন।

প্রথমে আলোচনা করা যাক বাংলাদেশের সবচেয়ে দরিদ্র জেলা কুড়িগ্রাম প্রসঙ্গে। এ জেলার ৭০.৮৭% জনগণ দরিদ্র সীমার নিচে অবস্থান করছেন। কুড়িগ্রাম জেলার নদীর সংখ্যা ১৬টিরও বেশি এবং প্রায় ৬০% জনগণের নিজস্ব কোন জমি নেই। জেলার অধিবাসীদের মাঝে প্রায় ৯০% শ্রমিক এবং ৩৭% জনগণ দিনমজুর। কুড়িগ্রাম জেলার জনসংখ্যা প্রায় ২০ লাখ ৭০ হাজার এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৯২০ জন। জেলায় উপজেলার সংখ্যা ৯টি এবং শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর হার ৫৬%। এ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন উন্নত নয় এবং চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা দূর্গম। প্রাকৃতিক দূর্যোগ যেমন বন্যা, নদীভাঙন ইত্যাদি দারিদ্রতার একটি অন্যতম কারণ। এ জেলার চর অঞ্চলে সব ধরনের ফসল উৎপাদিত হয় না এবং শহরের সাথে চরের যোগাযোগ ভালো নয়। এ জেলার জনগণের মাঝে অন্য জেলায় গিয়ে কাজ করার আগ্রহ কম এবং সরকারী কর্মকর্তাগণ এ জেলার স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না। কুড়িগ্রামের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। কুড়িগ্রাম জেলায় নির্দিষ্ট বেতন পাওয়া কর্মকর্তা অথবা কর্মচারীর সংখ্যা মাত্র ৬.৭%। সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা আছে প্রায় ৩৬% জনগণের। বন্যা ও প্রাকৃতিক দূর্যোগের ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিগণকে অন্য সদস্যদের পরিত্যাগ করতে এ জেলায় দেখা যায়। এ জেলার গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন প্রায় ৮৫% জনগণ। এ জেলার প্রবাসীর সংখ্যা অনেক কম এবং শিল্পকারখানা তেমন নেই। জেলার অর্থনীতিতে অর্থের প্রবাহ কম হবার ফলে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এবং অর্থের বণ্টন কম। অল্প বয়সে উপার্জনে অংশগ্রহণ করার ফলে স্কুলগামী ছাত্রর সংখ্যা হ্রাস পেয়ে থাকে। পার্শ্ববর্তী নীলফামারী জেলায় ই.পি.জেড প্রতিষ্ঠার ফলে আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোতে পরিবর্তন এসেছে। পার্শ্ববর্তী নীলফামারী জেলার ই.পি.জেড এ মোট ২৮,০০০ জন কর্মচারী ১৮০ টি ইন্ডাষ্ট্রির পার্কে নিয়োজিত রয়েছেন।
এবার আসা যাক দিনাজপুর জেলা প্রসঙ্গে। দিনাজপুর রংপুর বিভাগের একটি জেলা। দিনাজপুর জেলার জনসংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ এবং প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বসবাস করেন প্রায় ৮৭০ জন অধিবাসী। শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর হার প্রায় ৮৫.৫%। জেলার দরিদ্র সীমার নিচে অবস্থান করছেন প্রায় ৬৫% জনগন। অতি দ্ররিদ্রের হার ২৬.৩%। দিনাজপুর জেলায় পয়ঃনিষ্কাশনের সুবিধার আওতায় আছেন ৮১% জনগন। মোট জনগণের মাঝে বিভিন্ন ধরনের শ্রমিকের সংখ্যা বেশি এবং বেতনভুক্ত কর্মকর্তা অথবা কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৮.৩%। দিনাজপুরের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর এর প্রায় ৯০% জনগণ কৃষির সাথে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে জড়িত। এ জেলায় প্রবাসীর সংখ্যা কম। বেশির ভাগ প্রবাসী মধ্যপ্রাচ্য এবং মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। ধান, গম, ভুট্টা, আলু ইত্যাদি এ অঞ্চলের বেশির ভাগ অংশে উৎপাদন হয়ে থাকে। দিনাজপুর জেলায় কল-কারখানার সংখ্যা খুবই কম। বেশ কয়েকটি রাইস মিল রয়েছে এ জেলার। বড় পরিবারের দোকান খুব একটা দেখা যায় না। কৃষিতে এখনও অনেক ক্ষেত্রে পুরোনো প্রযুক্তিতে চাষাবাদ করা হয়। বড় পরিসরে ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করার মত অধিবাসী এ জেলায় কম। ব্যবসায়িক লেনদেন, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড অন্যান্য অনেক অঞ্চল থেকে কম পরিলক্ষিত হয়। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপানে ইত্যাদি দেশে দিনাজপুর জেলার প্রবাসীর সংখ্যা কম। এ জেলায় কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ বেশী। দিনাজপুর জেলায় উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। দিনাজপুর জেলায় একটি বৃহৎ অংশ জুড়ে রয়েছে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী।
এবার আসা যাক মাগুড়া জেলা প্রসঙ্গে, মাগুড়া জেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় ৯ লাখ ২০ হাজার। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বসবাস করেন ৮৮০ জন অধিবাসী। শিক্ষার হার ৫০.৮%। ২০১৬ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করেন প্রায় ৫৮% জনগন। অন্যান্য জেলার তুলনায় মাগুড়া জেলায় প্রবাসীর সংখ্যা কম। এ জেলার প্রবাসীগণের মাঝে বেশির ভাগই অবস্থান করছেন মধ্যপ্রাচ্য এবং মালয়েশিয়ায়। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে, জাপানে স্বল্প সংখ্যক মাগড়ুা জেলার প্রবাসী অবস্থান করছেন। এই জেলাতে শিল্পকারখানা নেই বললেই চলে। পূর্বে একটি টেক্সটাইল মিল ছিলো, সেটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এ.আর জুট মিলস লিমিটেড ছাড়া বড় কোন শিল্পকারখানা নেই। মাগুড়া জেলার অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। জেলার প্রধান নদী নবগংগা এবং মধুমতি। জেলার ধান, পাট, বিভিন্ন ধরনের শাক-সব্জির চাষ হয়ে থাকে। মৎস্য খামার কম। বিভিন্ন ধরনের ফল, যেমন: লিচু, আম, কলা, পেপে মাগুড়া জেলায় উৎপন্ন হয়। বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীগণের দেশে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা কম। বড় ধরনের বিনিয়োগ অভাবে এবং অর্থের প্রবাহ কম থাকার কারণে এবং দরিদ্র অঞ্চল হওয়াতে স্থানীয় অর্থনীতিতে স্থবিরতা পরিলক্ষিত হয়।
কুড়িগ্রাম জেলা, দিনাজপুর জেলা এবং মাগুড়া জেলার দিকে আলোকপাত করলে কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে মিল পাওয়া যায়। প্রথমত, তিনটি জেলার অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। দ্বিতীয়ত, শ্রমিক শ্রেণীর জনগণের আধিক্য। তৃতীয়ত, জেলা তিনটিই শিল্পে অনুন্নত। বৃহৎ মিল কারখানা তেমন দেখা যায় না ফলে কর্মসংস্থানের অভাবে বেকার ও কর্মহীন লোকের আধিক্য পরিলক্ষিত হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য, বৃহৎ বিনিয়োগের অভাবে অর্থনীতিতে স্থবিরতা দেখা যায়। চতুর্থত, জেলাগুলোতে প্রবাসীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম এবং জেলাগুলোর প্রবাসীগণ মূলত শ্রমিক শ্রেণীর এবং প্রধানত মধ্যপ্রাচ্য এবং মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। এসব কারণে জেলাগুলোতে অর্থের প্রবাহ এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ড তুলনামূলকভাবে কম। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যদি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জাপান প্রভৃতি দেশের প্রবাসীগণ প্রচুর পরিমাণ রেমিটেন্স পাঠিয়ে থাকেন অথবা বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোন জেলার অধিবাসীগণের অনেকের আয়স্তর বৃদ্ধি পায়, তবে সেই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পায়। ধনী অধিবাসীগণের চাহিদা অনুযায়ী বড় শপিং মল, বৃহৎ পরিসরের দোকান মানসম্পন্ন রেষ্টুরেন্ট, মিষ্টির দোকান ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয় এবং দরিদ্র শ্রেণীর মাঝে অর্থের বণ্টন হয়ে থাকে এবং দরিদ্র শ্রেণীর অর্থনৈতিক পরিবর্তন সম্ভব হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা, ঢাকা জেলা ইত্যাদি জেলায় অর্থের প্রবাহ, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকার ফলে দারিদ্যের হার অনেকাংশে কম।
কুড়িগ্রাম জেলা, দিনাজপুর জেলা এবং মাগুড়া জেলায় দারিদ্রতা কমানোর জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র, মাঝারি অথবা বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি করার কোন বিকল্প নেই। ভারতের সেভেন সিস্টারের চাহিদাকে সামনে রেখে কুড়িগ্রাম, দিনাজপুরে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারে। এছাড়াও মৎস্য খামার, হাঁস-মুরগীর খামার, গবাদি পশুজাত শিল্প গড়ে উঠতে পারে। এসকল ক্ষেত্রে সরকারী-বেসরকারী সহায়তা, প্রশিক্ষণ, ভর্তুকি ইত্যাদি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, দুগ্ধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সফল হবার সম্ভাবনা এ অঞ্চলে রয়েছে। এছাড়াও কুড়িগ্রামের বালু কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারে। এতে দরিদ্র জনসাধারণের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। জেলাগুলোতে কৃত্রিমভাবে মধু উৎপাদন করা সম্ভব। জৈবসার উৎপাদন, জুট মিল প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। জেলাগুলোর উদ্যেক্তাগণকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা প্রয়োজন। বেসরকারী ক্লিনিক প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ের জন্য এবং ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন বিশেষ করে চর অঞ্চলগুলোর সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন প্রয়োজন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর লিংকেজ বৃদ্ধি করা দরকার। ক্ষুদ্র ও কৃটির শিল্প বিকাশে এ জেলাগুলোতে বিসিক ভূমিকা রাখতে পারে। এ এলাকাগুলোর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই এবং এতে অর্থের প্রবাহ এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এবং অর্থের বণ্টন বৃদ্ধি পাবে। এতে দরিদ্র শ্রেণীর কর্মহীন মানুষ উপকৃত হবে। এলাকাগুলোতে বিনিয়োগের খাত চিহ্নিত করে ই.পি.জেড প্রতিষ্ঠা করে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীগণকে বিনিয়োগ করানো সম্ভব হলে ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হবে এবং দারিদ্রতা হ্রাস পাবে। শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। জেলাগুলোতে সোলার এনার্জি পাওয়ার প্ল্যান্ট হতে পারে। এ অঞ্চলগুলোরে উৎপাদিত ভুট্টা দিয়ে ভুট্টা নির্মিত খাবারে ফ্যাক্টরী হতে পারে। বিস্কুট ফ্যাক্টরী হতে পারে। জেলাগুলো কৃষি নির্ভর হবার ফলে শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি, উন্নত বীজ, সুলভ মূল্যে সার ইত্যাদির পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ অঞ্চলের দরিদ্র জনগণের মাঝে বিভিন্ন ধরনের ভাতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এলাকার জনগণকে বিভিন্ন উন্নয়নমুখী প্রশিক্ষণ দেয়া উচিৎ। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর একটি বৃহৎ অংশে মুসলিম হবার ফলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ধনী মুসলিমদের কাছ থেকে স্বেচ্ছায় সরকারী অথবা বেসরকারী উদ্যোগে জাকাত গ্রহণ করে এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে বিতরণ করা যেতে পারে।সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে দেশের বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো দরিদ্র জেলা গুলোতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে সহায়তা প্রদান করতে পারে। (উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, এ.বি লিমিটেড কুড়িগ্রাম জেলার দরিদ্র জনগণের মাঝে চাল বিতরণ করছে।)বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড যেমন রাস্তাঘাট, ব্রীজ ইত্যাদি নির্মাণ, স্কুল, কলেজ হাসপাতাল ইত্যাদি নির্মাণ হলে জেলাগুলোর কর্মহীন মানুষের মাঝে কর্মের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং দরিদ্রজনগণের আয়স্তর বৃদ্ধি পাবে। শিক্ষার হার বৃদ্ধি অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন। তিস্তা নদীর উপর হরিপুর-কুড়িগ্রাম চিলমারী সেতু নির্মিত হলে কুড়িগ্রাম এবং গাইবান্ধা জেলার আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে আশা করা যায়। দরিদ্র অঞ্চলগুলোতে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং এর সকল বাস্তবায়ন প্রয়োজন। দরিদ্র এবং সুবিধাবঞ্চিত জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং এর সকল বাস্তবায়ন প্রয়োজন। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন করা সম্ভব হলে তবেই হবে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন।
# অধ্যাপক, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।