মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেল বাংলাদেশে বিস্ফোরিত, রোহিঙ্গা নিহত

Published: 17 September 2022

বিশেষ সংবাদদাতা :

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু কোনারপাড়া সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে রোহিঙ্গা শিবিরে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে মিয়ানমার থেকে আসা মর্টারশেলের বিস্ফোরণে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো তিন-চারজন। এ সময় বাংলাদেশের ভেতরের একটি বাড়ির উঠানেও গোলা এসে বিস্ফোরিত হয়। এর আগে দুপুরে তুমব্রু সীমান্তবর্তী নো ম্যান্স ল্যান্ডে ‘মাইন’ বিস্ফোরণে বাংলাদেশি এক তরুণের পা উড়ে যায়।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম রাত সাড়ে ৯টায় সীমান্তে কর্মরত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিভিন্ন সংস্থার বরাত দিয়ে জানান, একজন রোহিঙ্গা নিহত হওয়ার কথা তাঁকে জানানো হয়েছে। তাঁর নাম ইকবাল হোসেন বলে জানা গেছে। তিনি আরো জানান, সন্ধ্যার পর থেকে সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান টহল শুরু করে। বিমান থেকে শেল ছোড়া হচ্ছিল।

আনোয়ারুল ইসলাম জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি মর্টারশেল এসে পড়ে। এর মধ্যে তিনটি বিস্ফোরিত হয়। এ ঘটনায় আহত তিন-চারজনকে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

ঘুমধুম ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ আবদুল জব্বার জানান, সন্ধ্যার পর থেকে তুমব্রু সীমান্ত এলাকার ওপারে ব্যাপক গোলাগুলির খবর আসে। এ সময় মিয়ানমার থেকে ছোড়া আরো একটি মর্টারশেল বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরে কোনারপাড়ার বদিউল আলমের ঘরের উঠানে এসে বিস্ফোরিত হয়।

রাত ৯টা ৫০ মিনিটে আবদুল জব্বার জানান, সে সময়েও নো ম্যান্স ল্যান্ডে একটি বিমান থেকে শেল ছোড়া হচ্ছিল। বিজিবি সীমান্ত এলাকা ঘিরে রেখেছে। বাংলাদেশ সীমান্তের বাসিন্দারা চরম আতঙ্কে আছেন।

পা উড়ে গেল তরুণের : গতকাল দুপুরের দিকে মিয়ানমার সীমান্ত শূন্য রেখা ঘেঁষে ৩৫ নম্বর পিলারের কাছাকাছি গেলে হঠাৎ মাইন বিস্ফোরণে অন্যথাইন তঞ্চঙ্গ্যা (২৫) নামের ওই তরুণ গুরুতর আহত হন। তিনি তুমব্রু হেডম্যানপাড়ার অংক্যথাইন তঞ্চঙ্গ্যার ছেলে। তাঁকে প্রথমে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতাল এবং পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় পরে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

স্থানীয় পাড়ার হেডম্যান থাইনচাপ্রু জানান, সীমান্তের ৩৫ নম্বর পিলারের কাছাকাছি নো ম্যান্স ল্যান্ড এলাকায় গরু আনতে যান অন্যথাইন। এ সময় হঠাৎ মাইন বিস্ফোরিত হয়। এতে তাঁর পা উড়ে গেছে। এ ঘটনায় একটি গরুও মারা যায় বলে জানান তিনি। ঘটনার পর সীমান্তে লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ ও ইউপি সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, গরু আনতে গিয়ে অন্যথাইন বিস্ফোরণের মুখে পড়েন। প্রায় সময় সীমান্তে এ জাতীয় ঘটনা ঘটে থাকে বলেও জানান তাঁরা। এ ঘটনার পরপরই নিরাপত্তা বাহিনী টহল জোরদার করেছে এবং স্থানীয়দের সীমান্ত এলাকায় যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

এলাকাবাসীর ধারণা, মিয়ানমার সেনাবাহিনী অথবা বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মি সীমান্তে এসব মাইন পুঁতে রেখেছে।

এক মাসের বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় সে দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির সঙ্গে সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বিজিপির মধ্যে লড়াইকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকটি মর্টারশেল ও গুলি এসে পড়েছে বাংলাদেশের মধ্যে। সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বিজিবি।