নজিরবিহীন বর্বরতা নভেম্বরের জেলহত্যা

Published: 4 November 2022

মো. জাকির হোসেন


আজ থেকে ৪৭ বছর আগে এই দিনে মুজিবনগর সরকারের চার প্রধান স্তম্ভ, বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গী, জাতীয় চার নেতা তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে জেলখানার অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এমন বর্বর ঘটনার দ্বিতীয় কোনো উদাহরণ ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহে তন্নতন্ন করে খুঁজে পাওয়া যাবে না। জেলের ভেতর বিদ্রোহ কিংবা জেলের অধিবাসীদের মধ্যে দাঙ্গা থামাতে গুলি করে হত্যা করার একাধিক ঘটনা আছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল আসাদকে হত্যাচেষ্টার সঙ্গে জড়িত, এমন সন্দেহভাজন নিরাপত্তারক্ষীদের জেল থেকে বের করে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।

কিন্তু জাতীয় চার নেতা, যাঁদের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়েছিল, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা মামলা ছিল না। বিনা অভিযোগে তাঁদের গ্রেপ্তার করে জেলে বন্দি করা হয়। তাঁরা কারাবিদ্রোহ কিংবা দাঙ্গা করেননি। সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে, বিনা বিচারে রাতের অন্ধকারে জেলের অভ্যন্তরে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়।
ওই সময় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলার হিসেবে কর্মরত আমিনুর রহমানের বর্ণনা মতে, মোশতাকের টেলিফোন নির্দেশে কারাগারের আইন ভেঙে ঘাতকদের জেলের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। আমিনুর রহমান বলেছেন, কারাগারে থাকা তৎকালীন আওয়ামী লীগের চার নেতাকে একত্র করার আদেশ আসে। আমিনুর রহমানের বর্ণনা অনুযায়ী সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং তাজউদ্দীন আহমদ কারাগারের একটি কক্ষে ছিলেন। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে অন্য দুই কক্ষ থেকে এখানে নিয়ে আসা হয়। আমিনুর রহমানের বর্ণনা মতে, “তাজউদ্দীন সাহেব তখন কোরআন শরিফ পড়ছিলেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেব হাত-মুখ ধুলেন। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সেখানে আসার আগে কাপড় পাল্টে নিলেন। কেউ জিজ্ঞেস করলেন না তাঁদের কোথায় নেওয়া হচ্ছে? আমি নিজে থেকে বললাম আর্মি আসছে। আমার মনে পড়ে, আমি মনসুর আলীর ‘ম’ কথাটা উচ্চারণ করতে পারি নাই, সঙ্গে সঙ্গে গুলি। ”

জাতীয় চার নেতাকে যে কক্ষে হত্যা করা হয়, সেই কক্ষের কাছে ওই সময় বন্দি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, বীরবিক্রম। সেই রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, রাত আনুমানিক ৩টার দিকে জেলখানায় পাগলা ঘণ্টি বেজে ওঠে। তাজউদ্দীন আহমদ ও সৈয়দ নজরুল ইসলামের কক্ষে অন্য যাঁরা ছিলেন তাঁদের সরিয়ে নেওয়া হয়। মনসুর আলী ও কামারুজ্জামানকে ভিন্ন ভিন্ন কক্ষ থেকে তাজউদ্দীন আহমদ ও সৈয়দ নজরুল ইসলামের কক্ষে এনে সমবেত করা হয়। এরপর অন্য সব কারাকক্ষের দরজা লাগিয়ে দেওয়া হয়। চার নেতাকে যে কক্ষে আনা হয় সেই কক্ষটির দরজা খোলা রাখা হয়। এর পরই কালো কাপড় পরা ঘাতকরা চার নেতার কক্ষের সামনে আসে এবং কালবিলম্ব না করে খুব কাছে থেকে স্বয়ংক্রিয় মেশিনগান দিয়ে ব্রাশফায়ার করে। এর মধ্যে শেষবারের মতো তাজউদ্দীন আহমদের কণ্ঠ শুনতে পাই। তিনি ঘাতকদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা কী করছ?’ এর পরই গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি পাশের খাটে লুটিয়ে পড়েন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও কামারুজ্জামানও গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন। ঘাতকরা চলে যাওয়ার পরও আহত মনসুর আলী বেঁচে ছিলেন। তিনি পানি, পানি বলে চিৎকার করছিলেন। এরই মধ্যে কারাগারের রক্ষী মোতালেব জেলগেটের কাছে পৌঁছে যাওয়া ঘাতকদের খবর দেয় একজন এখনো বেঁচে আছেন। ঘাতকরা ফিরে এসে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে চার নেতার দেহকে ক্ষতবিক্ষত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে ফিরে যায়। মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঘাতকরা চলে যাওয়ার পর মোতালেব দৌড়ে আমার সেলের সামনে এসে জানায়, চারজনই ফিনিশ, স্যার। ’

কেউ হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন, সর্বোচ্চ আদালতে জেলহত্যা মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে, এখন এসব ঘটনা বর্ণনা করে কি লাভ? স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে আটক থাকার সময় তাঁর অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন কারাগারে বর্বর হত্যার শিকার এই চার নেতা। যে মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ, যে যুদ্ধ শেষ হয়েছে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ এবং বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মাধ্যমে, তার নেতৃত্বে ছিলেন এই চার নেতা। মুজিবনগর সরকারের হাত ধরে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তান ও তার দোসরদের পরাজিত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছে, এটি বলা যত সহজ, সেই কাজটি ছিল অত্যন্ত দুর্বহ, ভয়ানক চ্যালেঞ্জিং ও ঝুঁকিপূর্ণ।

স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসে এমন কত অন্তর্বর্তী, প্রবাসী, বিপ্লবী সরকার ব্যর্থ হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে সীমিত সামর্থ্য নিয়ে মুজিবনগর সরকার দক্ষতার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ ও প্রশাসন পরিচালনা করেছে। পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সমর্থনপুষ্ট এবং অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অসম মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী নানা ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করা হয়েছে। পাকিস্তানের ইঙ্গিতে স্বাধীনতার দাবি থেকে সরে এসে পাকিস্তানের সঙ্গে আবারও ঐক্যের প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক। মোশতাক আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভ্রান্ত করতে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলিং করে প্রচারণা শুরু করেন, কী চাই—জীবিত বঙ্গবন্ধুকে, না স্বাধীন বাংলাদেশ? স্বাধীন বাংলাদেশ চাইলে মুজিবকে ফেরত পাওয়া যাবে না। অন্যদিকে জেডফোর্সের অধিনায়ক জিয়া মুজিবনগর সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে যুদ্ধকালীন কাউন্সিল গঠন করার প্রস্তাবের মাধ্যমে নতুন ষড়যন্ত্র উসকে দেন। ১৯৮৯ সালের জুন মাসে সাপ্তাহিক ‘হলিডে’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে প্রয়াত লে. কর্নেল মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন (অবসরপ্রাপ্ত) বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় মেজর জিয়াউর রহমান ও মেজর মঞ্জুর মিলে জেনারেল ওসমানীকে তাঁর পদ ও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। ’

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল সফিউল্লাহও এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জিয়া (জেনারেল) ওসমানীকে কমান্ডিং চিফ (পদ) থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। এ ব্যাপারে জিয়া আমাকে বলেন, ওসমানী পুরাতন (বৃদ্ধ) হয়ে গেছেন। সুতরাং ইয়ংদের (যুবকদের) মাঝ থেকে দায়িত্ব নিতে হবে। আমি এই প্রস্তাবের প্রতিবাদ করি এবং এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে তাঁকে আর কোনো কথা না বলার জন্য বলি। ’ (সাপ্তাহিক ‘জনমত’, লন্ডন, ২৮ আগস্ট, ৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৭)। ‘ওয়ার কাউন্সিল’ গঠনের ষড়যন্ত্র বিষয়ে এম আর আখতার মুকুল লিখেছেন, ১৯৭১ সালের জুন মাসের কথা। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ মুজিবনগরে সেক্টর কমান্ডারদের বৈঠক আহবান করলেন। আলোচনার শেষ পর্যায়ে মেজর জিয়াউর রহমান বললেন, যেহেতু রণক্ষেত্রে সামরিক বাহিনী লড়াই করছে, সেহেতু নীতিনির্ধারণের লক্ষ্যে সামরিক কমান্ডারদের নিয়ে একটা ‘ওয়ার কাউন্সিল’ অর্থাৎ ‘সামরিক কমান্ড কাউন্সিল’ গঠনের কথা। সত্তরের নির্বাচনে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে মুজিবনগর সরকার গঠিত হওয়া সত্ত্বেও বিকল্প হিসেবে ‘ওয়ার কাউন্সিল’ গঠনের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী হতবাক হলেন। তাঁর ভ্রুযুগল কুঁচকে উঠল এবং অভ্যাসবশত অবিরাম নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলি খুঁটতে লাগলেন। (বঙ্গবন্ধু, এম আর আখতার মুকুল, পৃষ্ঠা-১৬৬)। এম আর আখতার মুকুল অন্য এক প্রবন্ধে আরো লিখেছেন, “এককথায় মেজর জিয়াউর রহমানের প্রস্তাব হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক দায়িত্ব এবং নীতিনির্ধারণ সব কিছুই নির্বাচিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পরিবর্তে সামরিক কর্তৃপক্ষের হাতে ছেড়ে দেওয়া হোক। ‘ওয়ার কাউন্সিল’ গঠন করার প্রস্তাব উত্থাপন করায় উপস্থিত অনেকেই স্তম্ভিত হলেন। ”

ষড়যন্ত্র এখানেই থেমে থাকেনি। মুক্তিযুদ্ধকে বিভ্রান্ত করতে ও ভুল পথে পরিচালিত করতে ষড়যন্ত্র চালায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। বাংলাদেশের স্বাধীনতা নস্যাৎ করতে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করলে মুজিবনগর সরকারের তৎপরতায় রাশিয়া (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন) এর বিরুদ্ধে ভেটো দেয়। অসম যুদ্ধ ও ভয়ংকর ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে যাঁরা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে প্রাণভোমরার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন, তাঁদের রাতের অন্ধকারে কারাগারে হত্যা ইতিহাসে বিরল ঘটনা। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশেও মুজিবনগর সরকারের শীর্ষ নেতারা জাতি গঠনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। জাতির বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত নেতাদের জেলখানার অভ্যন্তরে বিনা অপরাধে, বিনা বিচারে হত্যা করে তাঁদের প্রতি কী ভয়ানক অন্যায় ও অবিচার করা হয়েছে তার অলোচনা সব সময়ই প্রাসঙ্গিক।

জাতির মহান সন্তানদের কেন এমনভাবে হত্যা করা হলো—সমীকরণটি সহজ হলেও কোনো কোনো বিশ্লেষক ধোঁয়াশা সৃষ্টি করেছেন। এই বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকেই হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা পাল্টা আরেকটি অভ্যুত্থানের আশঙ্কায় ছিলেন। খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ৩ নভেম্বর পাল্টা অভ্যুত্থানের পর বঙ্গবন্ধুর ঘাতকরা মনে করছিলেন, এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতাসীন হবে। তাই পাল্টা অভ্যুত্থানের প্রতিক্রিয়ায় জেলের অভ্যন্তরে চার নেতাকে হত্যা করা হয়। বিশ্লেষকরা ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃতভাবে যেটি এড়িয়ে গেছেন, তা হলো, ঘাতকচক্রের লক্ষ্য ছিল বাঙালিকে নেতৃত্বশূন্য করে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানের পদানত করে মুক্তিযুদ্ধের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়া। তাই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানে আটক রাখা হলে যে চার নেতা বঙ্গবন্ধুর হয়ে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনেন, সেই জাতীয় চার নেতাকেও বঙ্গবন্ধুর মতো নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশ যাতে ঘুরে দাঁড়িয়ে আর এগোতে না পারে, স্বাধীনতা যাতে ব্যর্থ হয়, বাংলাদেশ যাতে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়, সেই চক্রান্তের অংশ হিসেবেই জেলখানার ভেতরে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে।

চার নেতা যেমন ছিলেন নির্ভীক দেশপ্রেমিক, তেমনি সৎ, বিচক্ষণ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। নীতির প্রতি আপসহীনতাই তাঁদের হত্যাকে অনিবার্য করে তোলে। ঘাতক ও তাদের দোসররা জানত আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্ন হলে বাংলাদেশকে পাকিস্তানে রূপান্তর সহজ হবে। ঘাতক ও তাদের দোসররা জানত এই চারজন যদি বেঁচে থাকেন, তবে ঠিকই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন, যেমন তাঁরা দিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে। ঘাতকরা তাই শুধু কয়েকজন ব্যক্তিকে নয়, একটি আদর্শকে হত্যা করতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ও জেলহত্যার তদন্তের জন্য ১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর লন্ডনে স্যার থমাস উইলিয়ামস, কিউ সি এমপির নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কিন্তু সেই সময় ক্ষমতাসীন জিয়াউর রহমানের সরকারের অসহযোগিতার কারণে এবং কমিশনের সদস্যকে ভিসা প্রদান না করায় তদন্তের উদ্যোগ সফল হতে পারেনি।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও জেলহত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়েই শুরু হয় বাংলাদেশের এক অন্ধকার যুগ। এই সময় নিষিদ্ধ করা হয় হত্যাকারীদের বিচার। বর্বর এই হত্যাকাণ্ডে সভ্যতা ও মানবতা লজ্জিত হলেও সেই সময়ে ঘাতকদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করা হয় সরকারি দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে। এভাবে বাংলাদেশে হত্যার রাজনীতি বৈধতা পায়। শুরু হয় রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন। অর্থনীতি, প্রশাসন, শিক্ষাসহ সব প্রতিষ্ঠানে লাভ ও লোভের সংস্কৃতি চালু হয়। রাজনীতি ও রাষ্ট্রে আজকের সংকটের গোড়াপত্তন হয়েছিল সেই সময়ে। আজ ফুলেফেঁপে তা মহীরুহে পরিণত হয়েছে। জেলহত্যার বর্বরতার আলোচনা তাই আমাদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় কারা বাংলাদেশের শত্রু, আর কারা মিত্র।

লেখক : অধ্যাপক, আইন বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
zhossain1965@gmail.com