সাপের কামড়ে বছরে ছয় হাজার জনের মৃত্যু
বিশেষ সংবাদদাতা :
দেশে প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ ৮১ হাজার ৯১১ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হন। তাদের মধ্যে বছরে প্রায় ৬ হাজার ৪১ জনের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বর্ষা মৌসুমে সকাল ও সন্ধ্যায় সাপে বেশি কামড়ায়। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ এলাকায় সাপের কামড়ের ঘটনা বেশি ঘটে।
শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘নেগলেগটেড ট্রপিক্যাল ডিজিস’ (এনটিডি) দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এবারের বিশ্ব এনটিডি প্রতিপাদ্য ‘সকলেই মিলে এখনই কাজ করি, এনটিডি নির্মূলে বিনিয়োগ করি।’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় কালাজ্বর কর্মসূচির সহকারী পরিচালক ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এমএম আক্তারুজ্জামান।
তিনি জানান, সর্প দংশন বাংলাদেশে একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা। তবে সাপে কাটলে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। বাংলাদেশের বেশিরভাগ সাপই নির্বিষ। দেশে মাত্র ৭ থেকে ৮ প্রজাতির বিষধর সাপ রয়েছে।
আক্তারুজ্জামান বলেন, সাপে কামড়ালে আক্রান্ত স্থানের ওপরে বা নিচে কোনো কিছু দিয়ে শক্ত করে বাঁধা যাবে না। তাতে আক্রান্ত-স্থানে পচন ধরে যেতে পারে।
সাপে কামড় দিলে বরং মোটা কাপড় বা ব্যান্ডেজ দ্বারা প্যাঁচানো উচিত, যাতে মাঝারি চাপ অনুভূত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে সাপে কামড়ের ওষুধ পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, বিশ্বের ১৪৯টি দেশের প্রায় ১৭০ কোটি প্রান্তিক মানুষের জন্য ‘নেগলেগটেড ট্রপিক্যাল ডিজিস’ (উপেক্ষিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগসমূহ) মারাত্মক হুমকি।
এই রোগগুলো আক্রান্তদের অন্ধতা, মানসিক-শারীরিক বিকলাঙ্গতা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকৃতির মাধ্যমে স্বাস্থ্যহানি ঘটায়। তাদের স্বাভাবিক বেঁচে থাকার সুযোগ কেড়ে নেয়। এমনকি পরিবার বা সমাজে বসবাস করা ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়।
আক্তারুজ্জামান আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকাভুক্ত এনটিডিভুক্ত রোগের সংখ্যা ২০টি, তবে বাংলাদেশে ফাইলেরিয়াসিস, কালাজ্বর, কুষ্ঠ, কৃমি, জলাতঙ্ক, সর্পদংশন এবং ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া এই ৭টি রোগ প্রধান এনটিডি হিসাবে বিদ্যমান আছে।
এর মধ্যে বেশ কয়েকটি এনটিডি (কালাজ্বর ও কুষ্ঠ) নির্মূল লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে, আরও দুটি রোগ (ফাইলেরিয়া ও জলাতঙ্ক) নির্মূল লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে। তবে ডেঙ্গি ও চিকুনগুনিয়া এবং সর্পদংশন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাশেদা সুলতানা।
অন্যদের মধ্যে ছিলেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, মহাসচিব ডা. কামরুল হাসান মিলনসহ অনেকে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডাইরেক্টর (সিডিসি) ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম। স্বাগত বক্তৃতা করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডাইরেক্টর অধ্যাপক ড. রোবেদ আমিন।