যে কোন সময় রাবি শিক্ষক মহিউদ্দিনসহ ২ আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
বিশেষ সংবাদদাতা :
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচের চিঠি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষের কাছে এসে পৌঁছেছে।
জেল কোড অনুযায়ী, চিঠি হাতে পাওয়ার ২১ থেকে ২৮ দিনের দিনের মধ্যে যেকোনো দিন ফাঁসি কার্যকর করা হবে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকেই কনডেম সেলে রাখা হয়েছে বলে কারা সূত্র জানিয়েছে।
বুধবার (৫ জুলাই) ডাকযোগে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা নাকচের চিঠি এসে পৌঁছেছে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নিজাম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, গত ২ মার্চ অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলার আসামিদের ফাঁসি এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করেন সুপ্রিমকোর্ট। হাইকোর্ট বিভাগে দুই আসামির মৃত্যুদণ্ডের যে রায় দেওয়া হয়েছিল তা বহাল থাকে আপিল বিভাগে, খারিজ হয় রিভিউ আবেদনও। এরপর আসামিদের রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা ছাড়া আর কোনো পথই খোলা ছিল না। এরপরও দুজনের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে এ বছরের ৭ মে ফের রিট আবেদন করেন তাদের স্বজনরা। সেই আবেদনও খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
নিহত অধ্যাপক এস তাহেরের মেয়ে ও এই মামলার আইনজীবী সেগুফতা আহমেদ বলেন, বাবাকে হত্যার পর খুনিরা লাশ ম্যানহোলে ঢুকিয়ে রেখেছিল। বাবার লাশটাও সেদিন দেখতে পারিনি। হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে নিজেই আইনি লড়াইয়ে ছিলাম। এখন আর আইনি কোনো বাধা নেই। রায় বাস্তবায়ন দেখার অপেক্ষায়।
জেলার নিজাম উদ্দিন বলেন, আসামিরা কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রায় ছয় মাস আগে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদন গত মাসে রাষ্ট্রপতি নাকচ করেন। এর মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং নিহত অধ্যাপক তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলমের চলমান সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এখন জেল কোড অনুযায়ী ফাঁসি কার্যকরে উদ্যোগ নেবে কারা কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহীর ডিআইজি (প্রিজন্স) কামাল হোসেন বলেন, জেল কোড অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিনক্ষণ ঠিক করার পর আত্মীয়স্বজনকে শেষ দেখা করার জন্য খবর দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতে রায় ঘোষণার পর থেকেই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে আছেন আসামিরা।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাসা থেকে নিখোঁজ হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ। পরে ৩ ফেব্রুয়ারি বাসার পেছনে ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক তাহেরের অর্ধগলিত লাশ। এ ঘটনায় ওইদিন রাতে নিহতের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পরে পুলিশ অধ্যাপক তাহেরের একটি জিডির সূত্র ধরে বিভাগের শিক্ষক মহিউদ্দিন ও রাবির ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী, কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীরসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি আসামি জাহাঙ্গীর, নাজমুল ও সালাম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছাত্রশিবির নেতা মাহবুব আলম সালেহীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চার আসামিকে ফাঁসি ও দুজনকে খালাস দেন। পরে দণ্ডপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। আপিল বিভাগ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের ফাঁসির রায় বহাল রাখলেও নাজমুল ও সালামের ফাঁসির রায় পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন করেন। কিন্তু তাদের দণ্ড বৃদ্ধি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায় বহাল রাখেন।