অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ আছে কিনা বোঝার চেষ্টায় ইইউ

Published: 18 July 2023

বিশেষ সংবাদদাতা :


নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে থাকা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার ন্যূনতম কোনো সম্ভাবনা আছে কি-না? এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে বিদ্যমান সংকট না মিটলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কি-না? অর্থাৎ বিরোধী জোটের প্রধান বিএনপিসহ অন্যরা নির্বাচনে অংশ নেবে কি-না? ঘুরেফিরে সেটা জানার চেষ্টা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সোমবার মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সম্পাদক, সাংবাদিকসহ পেশাজীবীদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক হয় সফররত ইইউ’র ৬ সদস্যের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিনিধিদলের। তার আগেরদিন সিভিল সোসাইটির সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। সেখানেও গুরুত্বপূর্ণ ওই দুই প্রশ্ন আসে। উল্লেখ্য, গত ৮ই মে ইউরোপ ডে উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ২৭ রাষ্ট্রের জোট ইইউ’র তরফে আগেই খোলাসা করে বলা হয়, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলেই কেবলমাত্র বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে ইইউ। রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি ঢাকায় থাকা ইইউ জোটভুক্ত ৭ মিশন প্রধানকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন নির্বাচন-পূর্ব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে স্বাধীন বিশেষজ্ঞ দল জুলাইয়ে বাংলাদেশ সফর করবে। পরিস্থিতি মূল্যায়নে তারা ইইউ’র হাই রিপ্রেজেন্টিভের কাছে একটি রিপোর্ট জমা দেবে। সেই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত হবে ইইউ’র পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক টিম পাঠানো হবে কি-না?

গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের বিস্তারিত: এদিকে ইইউ’র প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে সাধারণ নির্বাচন কভার করার সময় মিডিয়া যে পেশাগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। এ সময় গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টিও আলোচনায় আসে। সাংবাদিকরা তাদের অতীতের নির্বাচনের কভার করার অভিজ্ঞতা এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাংবাদিকরা যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হতে পারেন তা তুলে ধরেছেন।

সোমবারের বৈঠকে ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, দ্যা নিউএজ সম্পাদক নুরুল কবীর, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সম্পাদক ইনাম আহমদ এবং প্রথম আলোর আয়েশা কবির। পরে কূটনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ডিকাবের ৫ জন্য সদস্যের সঙ্গে বৈঠক হয় ইইউ প্রতিনিধি দলের। যার মধ্যে ছিলেন- যুগান্তরের মাসুদ করিম, চ্যানেল আই’র পান্থ রহমান, যমুনা টেলিভিশনের মাহফুজ মিশু, ইউএনবি’র একেএম মঈনুদ্দিন এবং চ্যানেল ২৪ এর মোরশেদ হাসিব হাসান।
সিভিল সোসাইটির সঙ্গে বৈঠকে যা হয়েছে: একদিন আগে ইইউ টিমের সঙ্গে বৈঠককারী নাগরিক সমাজের একাধিক প্রতিনিধি মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচনে আর মাত্র ৪-৫ মাস বাকি, এই সময়েও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি না হওয়া এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের উদ্বেগ বিষয়ে জানতে চেয়েছে ইইউ। আরপিও সংশোধনী বা এর নিয়ন্ত্রণধর্মী ধারাগুলো নির্বাচনে কতোটা প্রভাব ফেলতে পারে? আগাম সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করেছে পর্যবেক্ষক দল। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, ব্রতী’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ, জানিপপের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী আদিলুর রহমান খান এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষণা পরিচালক মাহফুজ প্রমুখ ইইউ টিমের সঙ্গে একক এবং দলবদ্ধভাবে বৈঠক করেন।
সিভিল সোসাইটি এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় ইইউ টিম অভিন্ন প্রশ্ন রেখেছে ভোটের পরিবেশ নিয়ে। তারা জানতে চেয়েছেন ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের আগে এবং পরে যে পরিস্থিতি ছিল তার চেয়ে বর্তমান পরিস্থিতি কতোটা উন্নত হয়েছে? অর্থাৎ প্রশ্ন উঠবে না এমন নির্বাচনের সহায়ক পরিবেশ বিরাজমান কি-না? রাজধানীর বাইরের পরিবেশ কেমন তা-ও জানতে চেয়েছে সেলোরি রিকার্ডোর নেতৃত্বাধীন ইইউ প্রতিনিধিদল।

সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে কী কী চ্যালেঞ্জ বা বাধা রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কেও তাদের জিজ্ঞাসা ছিল বিভিন্ন বৈঠকে। নির্বাচনে বিচার বিভাগ, প্রশাসনের ভূমিকা এবং নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতার বিষয়েও খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করেন তারা। নির্বাচন পদ্ধতি, প্রক্রিয়া এবং প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে জানতে চান ইইউ’র প্রতিনিধিরা। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কী কী পদক্ষেপ দরকার বলে মনে করছেন সিভিল সোসাইটি এবং গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা তাও জানতে চান। সম্পাদক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে সফররত ইইউ প্রতিনিধিদল ডিজিটাল সিকিউরিট অ্যাক্টের নিবর্তনমূলক ধারা নিয়ে উদ্বেগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ে জানতে চেয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৮ই জুলাই থেকে ঢাকা সফরে রয়েছে ইইউ প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক প্রতিনিধিদল। আগামী ২৩শে জুলাই তাদের মিশন শেষ হবে।