দেশে এক মাসের ব্যবধানে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ছয় গুণ বেড়েছে

Published: 31 July 2023

বিশেষ সংবাদদাতা :

ডেঙ্গু রোগীর চাপ সামলাতে রাজধানীর হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। শয্যাসংকটের কারণে এক শয্যায় দুজন রোগীকেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল মুগদা হাসপাতাল থেকে তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম
এক মাসের ব্যবধানে দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ছয় গুণ বেড়েছে। গত জুন মাসে ডেঙ্গুতে ৪৩ জনের মৃত্যু হয়। চলতি জুলাই মাসে গত রবিবার পর্যন্ত ২০০ জনের মৃত্যু হয়। গতকাল রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই তথ্য জানায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে ডেঙ্গুর জীবাণু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় দুই হাজার ৭৩১ জন, যা এখন পর্যন্ত এক দিনে হাসপাতালে সর্বোচ্চ ভর্তি। এর আগে গত ২৬ জুলাই এক দিনে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৬৫৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। ওই দিন মৃত্যু হয় ১৪ জনের।

ডেঙ্গুস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, নতুন রোগীদের নিয়ে চলতি মাসে ৪১ হাজার ১৬০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর আগের জুন মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল পাঁচ হাজার ৯৫৬ জন। মৃত্যু হয় ৩৪ জনের। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৬.৯১ শতাংশ।

মৃত্যু বেড়েছে ৫.৮৮ শতাংশ।
গতকাল দুপুরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (এমআইএস) পরিচালক অধ্যাপক মো. শাহাদত হোসেন জানান, ১১ থেকে ৫০ বছর বয়সী মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। ঢাকা শহরে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার হার দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় বেশি। জুন মাসের তুলনায় এ মাসে রোগীর সংখ্যা প্রায় সাত গুণ বেড়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত এক দিনে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে এক হাজার ৫৪৭ জনই ঢাকার বাইরের জেলায়, ঢাকায় ভর্তি হয়েছে এক হাজার ১৮৪ জন।

বর্তমানে দেশের হাসপাতালে ভর্তি আছে ৯ হাজার ৪১৮ জন রোগী। তাদের মধ্যে ঢাকায় পাঁচ হাজার ১৪৭ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় চার হাজার ২৭১ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে হলো ৪৯ হাজার ১৩৮। মৃত্যু হয়েছে ২৪৭ জনের।

আক্রান্ত শিশুদের ৭০ শতাংশ ঢাকার

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরে শূন্য থেকে ১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে ডেঙ্গু আত্রান্ত হয়েছে ১০ হাজার ৩৪৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ঢাকার সাত হাজার ২৮৫ জন, ঢাকার বাইরের তিন হাজার ৫৮ জন। অর্থাৎ আক্রান্ত ৭০ শতাংশ শিশু ঢাকার।

পাঁচ হাজার শয্যা প্রস্তুত হচ্ছে

ডেঙ্গু রোগীদের জন্য দেশের সরকারি হাসপাতালে আরো পাঁচ হাজার শয্যা প্রস্তুত রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। গত শনিবার গণমাধ্যমকে তিনি এ কথা জানান।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকায় প্রায় এক হাজার ৪০০ শয্যা বাড়াতে বলেছি। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালেও শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মোট পাঁচ হাজার শয্যা প্রস্তুত রাখতে বলেছি।’

বন্যা ও বৃষ্টির কারণে মশা বেড়েছে

এ বছর বন্যা ও বৃষ্টি বেশি ছিল, যার কারণে মশা বেড়েছে। ডেঙ্গু রোগীও বেড়েছে। মশা নিধন করলে রোগীর সংখ্যাও কমে আসবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। প্রতিটি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য আলাদা কক্ষ আছে। নার্সদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ এবং নতুন ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।