আপত্তিকর ছবি প্রকাশ : সাবেক প্রেমিককে গুনতে হবে ১২০ কোটি ডলার

Published: 16 August 2023

পোস্ট ডেস্ক :


যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের একটি আদালত রিভেঞ্জ পর্নের ভিকটিম হিসেবে এক নারীকে ১২০ কোটি ডলার দিতে তার সাবেক প্রেমিককে নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতে এ সম্পর্কিত নথিপত্রে ওই নারীর নাম শুধু ‘ডিএল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি ২০২২ সালে তার সাবেক প্রেমিকের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিলেন।

‘রিভেঞ্জ পর্ন’ বা প্রতিশোধমূলক পর্ন হচ্ছে যৌন মিলনের ভিডিও বা ছবি অনুমতি ছাড়াই অনলাইনে প্রকাশ করা।

যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, সঙ্গীকে বেকায়দায় ফেলা। অভিযোগ ছিল, তাদের মধ্যকার সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর ওই ব্যক্তি তাদের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি অনলাইনে প্রকাশ করে তাকে জনসমক্ষে লজ্জায় ফেলে দেন।
ওই নারীর আইনজীবী বলছেন, ‘ছবিভিত্তিক যৌন হয়রানির’ শিকার ওই নারীর জন্য আদালতের রায় একটি জয়।

মামলার লিড ট্রায়াল আইনজীবী ব্রাডফোর্ড গিলডে বলেছেন, ‘ওই নারীর যে সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে, এ রায় সেটি ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে।


আইনজীবীরা শুরুতে ১০০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিলেন। গিলডে বলেন, ‘আমরা আশা করি ক্ষতিপূরণের অঙ্কটি একটি বার্তা দেবে এবং এটি অন্যদের এ ধরনের ঘৃণ্য কাজে জড়িত হওয়া থেকে প্রতিরোধ করবে।’

আদালতের তথ্য-প্রমাণ অনুসারে, ওই নারী ও তার সাবেক প্রেমিকের মধ্যে সম্পর্ক শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে। তখন ওই নারী তার ব্যক্তিগত কিছু ছবি প্রেমিকের সঙ্গে শেয়ার করেন।

কিন্তু ২০২১ সালে তাদের মধ্যকার সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর তিনি এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেন। এমনকি ওই নারীর অনুমতি ছাড়া প্রাপ্তবয়স্কদের একটি ওয়েবসাইটেও তিনি এগুলো তুলে দেন।
এরপর ওই ব্যক্তি এগুলোর লিংক ওই নারীর বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের পাঠিয়ে দেন। এমনকি ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে তার সাবেক প্রেমিকার ফোন, ই-মেইল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলো, এমনকি ওই নারীর মায়ের বাড়ির ক্যামেরায় প্রবেশাধিকার নেওয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে, যা ওই নারীর বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তিতে ব্যবহার করার অভিযোগ করা হয়েছে।

এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তি ওই নারীকে একটি বার্তা পাঠান, ‘ইন্টারনেট থেকে তোমার নিজেকে মুছে ফেলার জন্যই তোমার সারা জীবন ব্যয় করবে তুমি।

যতজনের সঙ্গে তোমার পরিচয় হবে সবাই এই গল্প জানবে। হ্যাপি হান্টিং।’
ভিকটিম নারীর আইনজীবীরা দাবি করেন, সাবেক প্রেমিক ছবিগুলো প্রকাশ করে ওই নারীকে একই সঙ্গে মানসিক হয়রানি, পারিবারিক সহিংসতা ও যৌন হয়রানি করেছেন।

তবে স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, ওই ব্যক্তি নিজে আদালতে যাননি। তবে আদালতে তার আইনজীবী ছিলেন। পরে তাকে আদালত ওই নারীকে অতীত ও ভবিষ্যতের মানসিক যন্ত্রণার জন্য ২০০ মিলিয়ন ডলার আর ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০০ কোটি ডলার দেওয়ার নির্দেশ দেন।

রিভেঞ্জ পর্নের ক্ষেত্রে অতীতেও যুক্তরাষ্ট্রে বড় ধরনের জরিমানা করার ইতিহাস আছে। ২০১৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় পর্ন সাইটে ব্যক্তিগত ছবি তুলে দেওয়ার পর এক নারীর সাবেক প্রেমিককে ৬.৮ মিলিয়ন ডলার জরিমানার আদেশ দিয়েছিলেন আদালত।

২০১৬ সালে প্রায় এক কোটি আমেরিকান রিভেঞ্জ পর্ন কিংবা জোরপূর্বক যৌন সম্পর্কের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছিলেন। ডেটা অ্যান্ড সোসাইটি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সমীক্ষা মতে, এর মধ্যে বেশিরভাগ ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী নারী। এ মুহূর্তে ম্যাসাচুসেটস ও সাউথ ক্যারোলাইনা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সব রাজ্যেই রিভেঞ্জ পর্নবিরোধী আইন আছে।

সূত্র : বিবিসি