আপিল বিভাগের দুই বিচারপতির পদত্যাগের জন্য ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম

Published: 27 August 2023

বিশেষ সংবাদদাতা :


শোক দিবসের অনুষ্ঠানে নিজেদের ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’- উল্লেখ করে বক্তব্য দেয়ায় আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকীর পদত্যাগের জন্য ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন- জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো. নাসির উদ্দীন আহমেদ, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক ট্রেজারারা ফাহিমা নাসরিন মুন্নী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কুদ্দুস কাজল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সভাপতি আবদুল জব্বার ও সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজলসহ বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা।

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, গত ১৫ই আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত এক শোক সভায় প্রদত্ত আপিল বিভাগের দু’জন বিচারপতির বক্তব্যের প্রেক্ষিতে গত ১৭ই আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে স্ব-ঘোষিত ‘শপথবন্ধ রাজনীতিবিদ বিচারপতিগণকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলাম। কারণ তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে তাঁরা বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের অধিকার হারিয়েছেন বলে দেশের সচেতন মহল মনে করেন। আমাদের প্রত্যাশা ছিল আপিল বিভাগের ওই দু’জন বিচারপতি আমাদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সম্মান অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে পদত্যাগ করবেন। বিচারপতিগণের পদত্যাগের দাবিতে দেশের বিভিন্ন মতাদর্শের ব্যক্তি ও সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ইউনাইটেড ল ইয়ার্স ফ্রন্ট গত ২০ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এক সভার আয়োজন করে। পুনরায় গত ২১শে আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট সহ বাংলাদেশের সকল আইনজীবী সমিতিতে অনুরূপ দাবিতে সভা অনুষ্ঠিত হয়। শুধুমাত্র আইনজীবী সমাজ নয়, দেশের সকল শ্রেণি পেশার সচেতন ব্যক্তিগণ আমাদের এ দাবির বিষয়ে তারা একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য জনকভাবে সত্য, বিনা ভোটে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসে থাকা বর্তমান এই অনির্বাচিত সরকারের মতো উক্ত বিচারপতিগণও ন্যূনতম সম্মানবোধের তোয়াক্কা না করে বিচারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, আমাদের বিচার বিভাগের জন্য যা এক অশনিসংকেত।

তিনি বলেন, দেশের আপামর জনগণের আশা ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল হলো বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ সংবিধানের ৩য় তফসিলে বর্ণিত শপথের মাধ্যমে দেশের সংবিধান ও আইনের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধানের অঙ্গীকার করে থাকেন।

একই সঙ্গে ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না সকলের প্রতি আইন অনুযায়ী যথাবিহীত আচরণ করার অঙ্গীকার করে থাকেন। গত ১৫ই আগস্টের আলোচনা সভায় প্রদত্ত কয়েকজন বিচারপতির বক্তব্য বিচারপতি হিসেবে নেয়া শপথের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সাধারণত কোনো রাজনৈতিক কর্মী যে ভাষায় তার দলীয় বক্তব্য প্রদান করেন, অনেক বিচারপতির বক্তব্যে তেমন একজন রাজনীতিবিদের বক্তব্যের প্রতিফলন আমরা লক্ষ্য করেছি। তাঁদের এই বক্তব্য কোন বিচারেই বিচারক সুলভ নয়। যাঁরা মানসিকভাবে নিজেদের রাজনীতিবিদ বলে বিবেচনা করেন সেই সমস্ত বিচারকদের মাধ্যমে অতীতে কতটুকু ন্যায়বিচার সম্পন্ন হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। ভবিষ্যতেও তাঁরা বিচারিক কার্য পরিচালনা করলে কি ধরনের বিচার করবেন তা বলাই বাহুল্য। এক্ষেত্রে আমরা মনে করি, সুপ্রিম কোর্ট তথা বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক প্রধান হিসাবে প্রধান বিচারপতি মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন।
কায়সার কামাল বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে তৎকালীন আপিল বিভাগের বিচারপতিগণ একত্রে বিচার কাজ পরিচালনার অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন। যার প্রেক্ষিতে বর্তমান বিনা ভোটের সরকারের রোষানলে পড়ে বিচারপতি সিনহা দেশত্যাগ ও পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। আমরা মনে করি, আপিল বিভাগের দু’জন বিচারপতি যেহেতু শপথ ভঙ্গের মাধ্যমে বিচার কাজ পরিচালনার আইনি ও নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন, তাই প্রধান বিচারপতির স্বউদ্যোগে তাদেরকে বিচারিক কাজ থেকে বিরত রাখতে পারেন। বর্তমানে কথিত “অজানা” অভিযোগে হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারপতিকে বিচারকার্য থেকে প্রায় পাঁচ বছরের অধিক সময় বিরত রাখা হয়েছে। গত ১৫ই আগস্ট আপিল বিভাগের দু’জন বিচারপতির প্রদত্ত বক্তব্য নৈতিকতার প্রশ্নে কোন অংশেই কম নয়। তাঁদের বক্তব্য সরাসরি সংবিধান প্রদত্ত শপথ ভঙ্গের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কাজেই তাঁদেরকে হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারপতির ন্যায় “বিচারিক কাজ” থেকে বিরত রাখার জন্য আমরা প্রধান বিচারপতির প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায় আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর আমরা তাঁদের পদত্যাগের দাবিতে নতুন কর্মসূচি পালন করব।