স্ত্রীকে হত্যার পর লাশের পাশে শুয়ে ছিলেন আল আমিন
পোস্ট ডেস্ক :
রাজধানীর সবুজবাগে পূর্ব রাজারবাগের একটি বাসা থেকে ফাতেমা কানিজ (৪০) নামে এক নারীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে রোববার সকালে ওই বাসা থেকে ফাতেমার লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
শনিবার রাতের যে কোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, ফাতেমাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে।
এ অভিযোগে তার স্বামী আল আমিনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, আল আমিন স্ত্রীকে হত্যার পর লাশের পাশে শুয়ে ছিলেন। তবে আজ সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মামলা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, সবুজবাগ থানাধীন পূর্ব রাজারবাগে নিজ বাড়িতে স্ত্রী ও দুই ছেলে সন্তান নিয়ে বাস করেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা প্রকৌশলী আল আমিন। স্ত্রী ফাতেমার সঙ্গে অন্য যুবকের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল বলে সন্দেহ করতেন আল আমিন। এর জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারেন তিনি।
স্ত্রী মারা যাওয়ার পর আল আমিন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবে আল আমিনের স্বজনদের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, স্ত্রী খুনের আগে তিনি পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন। স্ত্রীকে হত্যার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
নিহত ফাতেমার স্বজনরা জানান, আল আমিন ও ফাতেমা কানিজ গত ১৬ সেপ্টেম্বর ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে যান। ওমরাহ পালন শেষে ২ অক্টোবর দেশে ফেরেন তারা। দেশে আসার পর পূর্ব দ্বন্দ্বের জেরে আল আমিন স্ত্রীকে একই এলাকার হক সোসাইটিতে বাবার বাসায় পাঠিয়ে দেন। ফাতেমার শ্বশুর আবুল হাসেম ৩-৪ বার পুত্রবধূকে আনতে যান। কিন্তু সৃষ্ট দ্বন্দ্বের মিটমাট না হওয়ায় ফাতেমার স্বজনরা তাকে স্বামীর বাড়ি পাঠাতে রাজি হননি।
এরই মধ্যে গত শুক্রবার আল আমিন তার স্ত্রীকে ফোন করে বাসায় ফিরে আসতে বলেন। ভবিষ্যতে আর ঝগড়া করবেন না বলেও এ সময় প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এরপর দুই পরিবারের সমঝোতায় ফাতেমা স্বামীর বাসায় আসেন। আজ সকালে মা-বাবার কক্ষ বন্ধ দেখে তাদের দুই ছেলে মামা কামরুজ্জামানকে ফোন করে বিষয়টি জানান।
ফাতেমার ভাই কামরুজ্জামান সমকালকে জানান, ভাগ্নেদের কাছ থেকে খবর পেয়ে তিনিসহ কয়েকজন তাদের বাসায় যান। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে বিছানায় ফাতেমার রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। আর ফাতেমার স্বামী আল আমিন লাশের পাশে শুয়ে ছিলেন।
তিনি আরও জানান, পরে আল আমিনকে আটক করে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানানো হয়। কিছুক্ষণ পর সবুজবাগ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আল আমিনকে তাদের হেফাজতে নেয়।
কামরুজ্জামানের অভিযোগ, ফাতেমা-আল আমিনের মধ্যে পারিবারিক অশান্তি ছিল। এর জেরে পরিকল্পিতভাবে আল আমিন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
সবুজবাগ থানার ওসি আতিকুর রহমান বলেন, নিহতের গলায় ক্ষত চিহ্ন আছে। গলায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, স্বামী আল আমিনই তার স্ত্রীকে হত্যা করেছেন। তিনি স্ত্রীর লাশের পাশে শুয়ে ছিলেন। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে পুলিশ হেফাজতে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, আল আমিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, স্ত্রীকে হত্যার পর আল আমিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন।